আনোয়ার খানের তরিকত ‘প্রমাদ’

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খানকে ধরেই মহাজোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনকে দুটি আসন ছাড়ার কথা ইসিকে জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটি এখন বলছে, সেটি ছিল ‘মুদ্রণ প্রমাদ’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2018, 02:43 PM
Updated : 10 Dec 2018, 02:43 PM

প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার শেষ দিন রোববার এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে একটি সংশোধনী পত্র দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

‘জোটবদ্ধ প্রার্থী ও প্রতীক’ নিয়ে ওই পত্রে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ এবার তরিকত ফেডারেশনের একজনকেই জোটগতভাবে নৌকা প্রতীকে ভোট করায় সম্মতি দিয়েছে।

চিঠির মূল বক্তব্য হল, আনোয়ার হোসেন খানকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবেই নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জোটগতভাবে নৌকা প্রতীক ব্যবহারের বিষয়ে চূড়ান্ত মনোনয়নের যে চিঠি ইসিতে দেওয়া হয়েছিল, সেখানে ‘মুদ্রণজনিত ভুলের কারণে’ তাকে তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী লেখা হয়েছিল।

ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি। ভোটের দল নিয়ে এই জটিলতার পেছনে তারও খানিকটা হাত আছে।

লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য আনোয়ার খান আওয়ামী লীগের পাশাপাশি তরিকত ফেডারেশন থেকেও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তবে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে।

এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি তরিকতের প্রার্থী হিসেবে জোট শরিক আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে এমপি হন।   

এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের আনোয়ার খানের তরিকত থেকে মনোনয়ন ফরম নেওয়ার খবর আলোচনার জন্ম দেয়।  

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ৭ ডিসেম্বর এক ব্রিফিংয়ে জানান, মহাজোটের শরিকদের এবার ১৬টি আসনে নৌকায় ভোট করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে তরিকত পাচ্ছে দুটি। 

এর মধ্যে চট্টগ্রাম-২ আসনে তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি এবং লক্ষ্মীপুর-১ আসনে আনোয়ার খানকে নৌকা প্রতীক দেওয়ার কথা সেদিন জানানো হয়।

এরপর নির্বাচন কমিশনে পাঠানো আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়নের তালিকাতেও লক্ষ্মীপুর-১ আসনে আনোয়ার খানকে তরিকতের প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

সেই ‘ভুল’ সংশোধন করতে রোববার ইসিতে আরেকটি চিঠি দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

পাশাপাশি টাঙ্গাইল-৫ আসনে ছানোয়ার হোসেনকে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার কথা জানানো হয় দলের পক্ষ থেকে।  

এই দুইজনকে নিয়ে এবার আওয়ামী লীগের মোট প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২৬০ জনে। শরিকদের মধ্যে ১৩ জন নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এছাড়া মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির ২৫ জন নিজেদের লাঙ্গল প্রতীকে এবং জাতীয় পার্টি-জেপির দুজন বাই সাইকেল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

 

বিএনপির পরিবর্তন ৯ আসনে

রোববার শেষ মুহূর্তে বিএনপিও নয়টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়।

৩০০ আসনের মধ্যে ২৪২টিতে বিএনপি নিজ দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে। ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে নিবন্ধনহীন জামায়াতে ইসলামীকে ২২টি আসন ছেড়ে দিয়েছে তারা। ইসিতে দেওয়া তালিকায় তাদের দলের নাম বিএনপি লেখা হয়েছে।

এর বাইরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামকে সাতটি, জেএসডিকে চারটি, নাগরিক ঐক্যকে চারটি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে চারটি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিএনপির জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত শরিক দলগুলো ১৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তাদের সবার প্রতীক হবে ধানের শীষ।

২০ দলীয় জোট শরিকদের মধ্যে এলডিপিকে পাঁচটি, খেলাফত মজলিশকে দুটি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে তিনটি, জাতীয় পার্টিকে (কাজী জাফর) দুটি, বিজেপিকে একটি, কল্যাণ পার্টিকে একটি, এনপিপিকে একটি, লেবার পার্টিকে একটি, পিপিবিকে একটি করে আসন ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি।

অর্থাৎ বিএনপির ২০ দলীয় জোটের এই শরিকরা ১৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এদের মধ্যে এলডিপির চার নেতা ধানের শীষ প্রতীক নিলেও দলটির চেয়ারম্যান অলি আহমদ চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ভোট করবেন নিজের দলের প্রতীকে।