খালেদার ভোটের ভবিষ্যৎ জানা যাবে মঙ্গলবার

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, তা জানা যাবে মঙ্গলবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2018, 11:04 AM
Updated : 10 Dec 2018, 12:03 PM

তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে করা তার রিট আবেদনের শুনানি সোমবার শেষ করেছে আদালত।

শুনানির পর বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার আবেদনটি আদেশের জন্য রেখেছে।

দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ এবং বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে প্রার্থী করেছিল বিএনপি। তার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা।

কিন্তু গত ২ ডিসেম্বর বাছাইয়ের সময় খালেদার কারাদণ্ডের কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খালেদা আপিল করলে তাও ইসিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্তে নাকচ হয়ে যায়।

এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। আদালতে তার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, যিনি ইসিতে শুনানিতেও তার পক্ষে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ইলেকশন এক্সপার্ট মিশনের’ আইনজ্ঞ ইরিনি- মারিয়া গোনারি।

শুনানির শুরুতে এজলাস কক্ষের শেষ সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাকে দেখে বসার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন। তখন শেষ সারির একটি বেঞ্চে আইনজীবীরা তাদের পাশে বসান গোনারিকে। শুনানি চলাকালে তাকে নোট নিতেও দেখা যায়।

বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, সরকারই তাদের নেত্রীর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ করে রেখেছে।

হাই কোর্টের আদেশের পর খালেদার অন্যতম আইনজীবী কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন কমিশন বেআইনিভাবে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছিল।

“আমরা আশা করছি, বেগম খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।”

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া।

বিএনপি নেতারা আশা করছিলেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তিনি ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সে অনুযায়ী তাকে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু গত সপ্তাহে হাই কোর্টে এক মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়।

এর ফলে খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতার আপিল করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ আটকে যায়। একজন বিএনপি নেতা ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলেও সর্বোচ্চ আদালতের সাড়া পাননি।

তবে দণ্ডের কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর বিএনপির দুই নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু হাই কোর্টে আবেদন করে প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন। সোমবারই তাদের বিষয়ে আদেশ হয়।

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খালেদার পক্ষে রিট আবেদন তিনটি রোববার দায়ের করেন তার আইনজীবী নওশাদ জমির। সোমবার তার শুনানির জন্য ওঠে।

খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। বিএনপি ওই আসনগুলোতে বিকল্প প্রার্থীও ঠিক করে রেখেছিল।

খালেদার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর রোববার মনোয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন বিএনপির পক্ষ থেকে ওই সব আসনে তাদের চূড়ান্ত প্রার্থীর নামও জানানো হয়।

বগুড়া-৬ আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়া-৭ এ প্রার্থী করা হয়েছে মোরশেদ মিলটনকে। খালেদার পৈত্রিক এলাকা ফেনী-১ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে মুন্সী রফিকুল আলমকে।