চূড়ান্ত মনোনয়নে নৌকায় আশরাফ, ম খা আলমগীর, বাদ পড়লেন মায়া

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ১৭টি আসনে আওয়ামী লীগ একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল, সেসব আসনে একক প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2018, 12:14 PM
Updated : 7 Dec 2018, 01:43 PM

তাতে ‘হেভিওয়েটদের’ মধ্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক মন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর নৌকার চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেও বাদ পড়েছেন ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা।

জোটের দর কষাকষি শেষ হওয়ার আগেই ঢাকার একটি আসনে চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যেখান থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদও নির্বাচন করতে চান। 

আর নৌকার প্রাথমিক মনোনয়নে থাকা জোট শরিক জাসদের একাংশের শরিফ নুরুল আম্বিয়াও চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি পাননি।

রংপুর-৬ আসনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি বৃহস্পতিবার রাতেই তার হাতে তুলে দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিতে শেখ হাসিনা ও শিরীন শারমিন দুজনের মনোনয়নপত্রই দাখিল করা হয়েছিল রংপুরের এই আসনে।

শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী তার বাবার বাড়ির গোপালগঞ্জ-৩ আসনটি নিজের জন্য রেখে শ্বশুরবাড়ির এলাকায় রংপুর-৬ আসনটি শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ছেড়ে দিলেন।

কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই নৌকা প্রতীক নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোট করবেন।

বর্তমাস সরকারের জনপ্রশাসনমন্ত্রী আশরাফ ক্যান্সারের আক্রান্ত হয়ে বিদেশে চিকিৎসাধীন।  তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে এ আসনে সাবেক ছাত্রনেতা মশিউর রহমান হুমায়ূনকেও নৌকার প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।

রাজধানীর অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত ঢাকা-১৭ আসন থেকে এবার নৌকার প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয় চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক এবং আবদুল কাদের খানকে। মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও এই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

শেষ পর্যন্ত আলোচিত এই আসন জোটকে না ছেড়ে ফারুকের ওপরই ভরসা রেখেছে আওয়ামী লীগ।  

গত নির্বাচনে দলে বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্র হিসেবে ঢাকা-৭ আসনের এমপি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের হাজী সেলিম। দুর্নীতি মামলায় সাজার জটিলতায় তার প্রার্থিতা নিয়ে শঙ্কা থাকায় বিকল্প প্রার্থী হিসেবে আবুল হাসনাতও এবার প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। হাজী সেলিমের প্রার্থিতা টিকে যাওয়ায় তিনিই এবার নৌকার প্রার্থী।

ঢাকা-৫ আসনে হাবিবুর রহমান মোল্লা ও কাজী মনিরুল ইসলামকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হলেও তাদের মধ্যে বর্তমান এমপি হাবিবকেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে।  

জামালপুর-১ আবুল কালাম আজাদ চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। তার সঙ্গে নূর মোহাম্মদ ছিলেন প্রাথমিক মনোনয়নের তালিকায়।

প্রাথমিকভাবে মনোনীত সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরার বদলে জামালপুর-৫ আসনে মো. মোজাফ্ফর হোসেনকে এবার নৌকার দায়িত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

মামলার সাজা নিয়ে জটিলতায় চাঁদপুর-১ আসনে সাবেক মন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। ওই আসনে তার সঙ্গে নৌকার প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম রহমানকে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের দুজনের মনোনয়নপত্রই বৈধ ঘোষণা করে। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ঋণ কেলেঙ্কারিতে আলোচিত ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন খান আলমগীরকেই চূড়া্ত মনোনয়ন দিলো। 

মামলার সাজা নিয়ে জটিলতা ছিল চাঁদপুর-২ আসনের এমপি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ক্ষেত্রেও। এ কারণে তার সঙ্গে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল মো. নূরুল আমিনকে। শেষ পর্যন্ত মায়ার বদলে নূরুল আমিনই চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন।  

লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে বিমান পরিবহন মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী ছিলেন গোলাম ফারুখ পিংকু।

জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ পটুয়াখালী-৩ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি পেয়েছে। এখানে খোন্দকার শামসুল হক রেজাকেও দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান চাঁদপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত টিকেট পেয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থী ছিলেন মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া।

টাঙ্গাইল-২ আসনে তানভীর হাসান ছোট মনির সঙ্গে ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলে খন্দকার মসিউজ্জামান রোমেলকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তাদের মধ্যে এনআইডি জালিয়াতির অভিযোগ ওঠা ছোট মনিরকেই প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হল।

নড়াইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের বিএম কবিরুল হক নৌকার চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। চৌদ্দ দলীয় জোটের শরিক জাসদের শরিফ নুরুল আম্বিয়াকেও এ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।

নওগাঁ -৫ আসনে নৌকা প্রতীকে লড়বেন নিজাম উদ্দিন জলিল জন। তার সঙ্গে এ আসনে আবদুল মালেকও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

নাটোর-১ আসনে মো. শহিদুল ইসলাম বকুল ও রমজান আলী সরকারের মধ্যে বকুলকেই আওয়ামী লীগ ভোটের ছাড়পত্র দিয়েছে।

বরগুনা-১ আসনে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু পেয়েছেন দলের চুড়ান্ত মনোনয়ন।  প্রাথমিক মনোনয়নে তার সঙ্গে জাহাঙ্গীর কবিরের নাম ছিল।