বিএনপির দণ্ডিত চারজনের প্রার্থিতা ফিরল না আপিলেও

ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় বিএনপির যে নেতাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল, নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও ফল পাননি তাদের চারজন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2018, 03:40 PM
Updated : 6 Dec 2018, 06:49 PM

তারা হলেন- সাবেক তিন প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং যশোরের সাবিরা সুলতানা।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের আপিল বৃহস্পতিবার নাকচ করে দেয় সিইসি কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী আপিল কর্তৃপক্ষ।

এদিন মোট ১৬০টি আপিল নিষ্পত্তি হয়। এর মধ্যে ৮০ জন প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন, যার মধ্যে বিএনপির বেশ কয়েকজন রয়েছে। কিন্তু টুকু, মীর নাছির, দুলু, সাবিরাসহ ৭৬ জনের আপিল গৃহীত হয়নি।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে মীর নাছির চট্টগ্রাম-৫ আসনে, টুকু সিরাজগঞ্জ-২ আসনে, দুলু নাটোর-২ আসনে এবং সাবিরা যশোর-২ আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন।

ফৌজদারি মামলায় দুই বছরের বেশি কাল দণ্ড হওয়ায় বাছাইয়ের সময় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

একই কারণে তিনটি আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়ে গেছে। তিনিও আপিল করেছেন এবং শুনানির শেষ দিন শনিবার তার আপিল উঠবে।

বুধবার বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রার্থিতা ফেরত পাওয়ায় দলীয় চেয়ারপারসনকে নিয়েও আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল; কিন্তু টুকুদের খবর তার জন্য হতাশাজনকই হবে।

আপিল করেও যারা প্রার্থিতা ফেরত পাননি, তাদের অনেকেই আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

শুনানির সময় দুলু বলেন, “হাজি সেলিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, লুৎফুজ্জামান বাবর, মোহাম্মদ নাসিম ২ বছরের বেশি দণ্ড নিয়ে জামিন নিয়ে ভোট করতে পেরেছিল। আমি তখন জেলে থাকার কারণে নির্বাচন করতে পারিনি।

“আমার এখনকার মামলা এক বছর আগে স্থগিত করেছি; সেটা সরকার কোনো আপিল করেনি। একই গ্রাউন্ডে হাজি সেলিম পারলে আমি নির্বাচন করতে পারব না কেন? আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ নির্বাচনে হারাতে পারে নাই। তাই আমাকে একটা সুযোগ দেন।”

নির্বাচন ভবনে স্থাপিত এজলাসে সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার এই শুনানি নেন। এরপর ইসি সচিব কমিশনের রায় বলে দেন- “আপনার আবেদন রিজেক্টেড, নামঞ্জুর।”

নির্বাচন ভবনে আপিল শুনানির পর আইনজীবীর সঙ্গে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু

পরে দুলু সাংবাদিকদের বলেন, “উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হোক, সেটা সরকার চায় না। সেকারণেই এসব নাটক করছে।”

উচ্চ আদালতের যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আমি আগেও বলেছি, বিএনপির যেসব প্রার্থীরা নিশ্চিত জিতবে, পরিকল্পিতভাবে তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হচ্ছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, আমি এর শেষ দেখতে চাই। আমি হাই কোর্টে যাব, সেখানে না হলে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাব।”

মীর নাছির সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকেও বাতিল করে দিল। তাহলে এত নাটক কেন? আমাকে ডেকে এনে একটা নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে।”

বিএনপির একক প্রার্থী ফিরেছে ৪ আসনে

বগুড়া-৭ আসনে খালেদা জিয়া ও মোর্শেদ মিল্টনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাতিল হওয়ায় বিএনপির প্রার্থী ছিল না। বৃহস্পতিবার আপিল শুনানিতে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন মোর্শেদ মিল্টন।

ঢাকা-১ আসনেও বাছাইয়ে বাতিল হওয়ায় বিএনপির প্রার্থী ছিল না। ইসি খন্দকার আবু আশফাকের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেয় আপিল মঞ্জুর করে।

জামালপুর-৪ আসনে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ায় ফরিদুল কবীর তালুকদার প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ইসিতে।

মানিকগঞ্জ-২ আসনে আবিদুর রহমান খানের উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ায় তিনিও ফিরে পেয়েছেন প্রার্থিতা।

বৃহস্পতিবার ৮০টি আপিল আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় বিএনপির অন্তত ৩৫ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়। এতে দলটির আসনভিত্তিক একাধিক প্রার্থীর সংখ্যাও দীর্ঘ হল।

এদিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনে আব্দুল মান্নান আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় সেখানে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী বেড়েছে। ওই আসনে আনোয়ারুল আজীম আনার নৌকার বৈধ প্রার্থী হিসেবে টিকে আছেন।