চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ১২৩ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা

একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলা মিলিয়ে ১৬টি আসনে বিভিন্ন দলের ১২৩ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2018, 02:12 PM
Updated : 3 Dec 2018, 03:53 AM

রোববার চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র বাছাই চলে।

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে মোট মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল ১৮০টি। এরমধ্যে নগরীসহ আশপাশের ছয় আসনে ৬৯ জনের মনোনয়ন বৈধ হয়। আর জেলার ১০ আসনে ৫৪ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।

মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে ৪৭টি। বাকিগুলো স্থগিত রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের ছয়টি আসনের মনোনয়নপত্র বাছাই হয় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে। এখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারমান মোরশেদ খান ও মীর মো. নাছির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় সদস্য মীর মো. হেলাল উদ্দিন, উত্তর জেলার বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী, নগর কমিটির সহ-সভাপতি সামশুল আলম ও বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহসহ ২২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়।

আর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলার বাকি ১০টি আসনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়েন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে সামির কাদের চৌধুরী, সন্দ্বীপের সাবেক সাংসদ মোস্তফা কামাল পাশা এবং রাঙ্গুনিয়া বিএনপির দুই নেতা আবদুল আলিম ও আবু আহমেদ হাসনাতসহ ২৫ জন।

বাছাই শেষে বিকালে সংবাদ সম্মেলনে বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, শতভাগ আন্তরিকতা, সততা ও নিরপেক্ষতার সাথে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়েছে। যাতে কোনো একজন প্রার্থীও অমনযোগীতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হন।

কোনো প্রার্থীর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “শত কোটি টাকার ঋণখেলাপিও আছেন। আবার লাখ লাখ টাকার বিল খেলাপিও আছেন। অনেকে যথাযথ সনদপত্রও জমা দেননি।

“সবাইকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েছি। এরপরও তাদের নির্বাচন কমিশন ও উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে।”

চট্টগ্রাম-৮ আসনে (বোয়ালখালী) বিএনপি নেতা মোরশেদ খান বিল খেলাপি হওয়ায় এবং শিক্ষা সনদ না দেওয়ায়; একই আসনে আরেক বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ ব্যাংক হিসাব না খোলায় অযোগ্যে ঘোষিত হন। এদের মধ্যে মোরশেদ খান ২০০৮ সালে এই আসনে নির্বাচনে অংশ নেন।

এই আসনে বিএনপির নগর কমিটির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান এবং জাসদ নেতা মঈনুদ্দিন খান বাদলসহ নয়জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম-৯ আসনে বিএনপির নগর কমিটির সহ-সভাপতি সামশুল আলম ঋণখেলাপি হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল হয়। তিনি শিল্পীগোষ্ঠী মেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্সের মালিক। ২০০৮ সালে তিনি একই আসন থেকে নির্বাচন করেন।

এই আসনে নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন, আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরীসহ নয়জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।

ঋণখেলাপি হওয়ায় চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি আসলাম চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলায় আসলাম চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যরা আসামি। এই আসন থেকে ২০০৮ সালে তিনি নির্বাচন করেছিলেন।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বিএনপি নেতা মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলালের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, দুইজন প্রার্থীর সাজা হয়েছিল। তাদের দাবি উচ্চ আদালতে বাতিল হয়েছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত যথাযথ নথিপত্র তারা দিতে পারেননি।

এই আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এছাড়া কল্যাণ পার্টির নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমও প্রার্থী হয়েছেন। এ দুজনসহ ১০ জনের প্রার্থিতা বৈধ হয়েছে।

১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ সালের টিঅ্যান্ডটি বিল বকেয়া থাকায় চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সাংসদ মোস্তফা কামাল পাশার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষিত হয়।

এখানে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা এবং বিএনপি নেতা মোস্তফা কামালের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে।

খেলাপি ঋণ এবং মনোনয়ন সংক্রান্ত নথি সঠিকভাবে উপস্থাপন না করায় চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বিএনপির প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।

এখানে বিএনপি নেত্রী নুরী আরা ছাফা, বিএনপি নেতা খুরশীদ জামিল চৌধুরী ও আজিম উল্লাহ বাহারের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। এ আসনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।

একই কারণে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনেও গিয়াস কাদেরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ২০০৮ সালে গিয়াস কাদের রাউজান আসনে নির্বাচন করেছিলেন।

এ আসনে বিএনপির অন্য দুই প্রার্থী কুতুব উদ্দিন বাহার এবং শওকত আলী নূরের মনোনয়ন বৈধ ঘোষিত হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলটির প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

ঋণখেলাপি হওয়ায় চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বাতিল হয়েছে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে সামির কাদের চৌধুরীর মনোনয়নপত্রও।

এখানে বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে করিম চৌধুরী। এই আসনে বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন শিকদারের মনোনয়ন বৈধ ঘোষিত হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে বিএনপির প্রার্থী নুরুল আমিন মিরসরাই উপজেলার চেয়ারমান। ওই পদে তার পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় মনোনয়নপত্রটি বাতিল হয়ে গেছে।

এই আসনে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম ইউসুফ ও কামাল উদ্দিন আহম্মেদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষিত হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। 

অন্যদিকে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তার দেওয়া ভোটার সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য মনোনয়নটি স্থগিত রাখা হয়েছে।

সীতাকুণ্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ দিদারুল আলম। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী এওয়াই বি আই সিদ্দিকীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে হাসান মাহমুদ চৌধুরী নামের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নও স্থগিত রাখা হয়েছে।