শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, সেটা পাহারা দিতে হবে জনসাধারণকেই দেশের মালিক হিসেবে। এখানে আমরাও বলছি, পত্রপত্রিকায় সবাই আশঙ্কা করছেন যে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নানাভাবে বাধা দেওয়া হবে। সেই বাধাগুলো সরকার বা যে কেউ দিক না কেন, বাধা দিলে আমাদের সবাই মিলে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে রক্ষা করতে হবে।”
জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গণফোরাম সভাপতি বলেন, “আমার একটা বিনীত নিবেদন আপনারা কষ্ট করে নির্বাচনের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে যাতে ভোট দিতে একদম সকালে সকালে চলে যেতে পারেন, বুথ খোলার সাথে সাথে যেন আপনারা সেখানে উপস্থিত হোন। প্রত্যেক বাড়িতে যত ভোটার আছে সবাই যেন ভোট দেয় সেই ব্যবস্থা করবেন।”
ড. কামাল বলেন, “দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। আমি দেশবাসীর প্রতি ১৯৭১ সালের মতো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। আমি বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হচ্ছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অপরিহার্য অংশ। যদি জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারেন তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বই হুমকির মুখে পড়বে।”
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের পর সব আসনেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী নির্ধারিত হবে।”
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কামাল হোসেন বলেন, “নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ সব কর্মকর্তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান, আপনারা দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে নিজ নিজি দায়িত্ব পালন করুন। পোলিং এজেন্টরা যাতে নির্ভয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করুন।”
“আমাদের সংবিধানে আছে জনগণ দেশের মালিক। সেই মালিকানা প্রয়োগ করবে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। সেই বিষয়টি ২ তারিখ থেকে ২৮ দিন জনগণকে জানাতে হবে। আমি এ ব্যাপারে নাগরিক ও গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাচ্ছি। যাতে সঠিক তথ্য জনগণ জানতে পারে সেজন্য গণমাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা থাকতে হবে। দৈনন্দিন তথ্য দিন, যেখানে আইন লঙ্ঘন হচ্ছে সেটা জানান, আইন অমান্য করলে তা ধরিয়ে দেওয়া গণমাধ্যমে দায়িত্ব।”
নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“সুষ্ঠু পরিবেশের পরিপন্থি হচ্ছে পাইকারি হারে গ্রেপ্তার। যেটা চলছে এটা সুষ্ঠু পরিবেশ নয়। তফসিল ঘোষণার পরে সাতশর উপরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন প্রার্থীও আছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। প্রধানমন্ত্রীও বলেছিলেন। আমার কথা হল স্বাভাবিক পরিবেশ রাখার জন্য এই গ্রেপ্তার বন্ধ করা হোক। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বিশেষ করে যারা প্রার্থী তাদের সকলকে মুক্ত করা হোক।”
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের তালিকাও সরবারহ করা হয়।
“কিন্তু তফসিল ঘোষণার পরেও এখনো বেআইনিভাবে গায়েবি মামলায় শত শত নেতাকর্মীকে আটক করা হচ্ছে। প্রার্থী যারা হচ্ছেন, যারা আগে এমপি ছিলেন তাদেরকেও করা হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচনের যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সেটা কোনো মতে তৈরি হবে না।”
ফখরুল বলেন, “আমরা আশা করব ড. কামাল হোসেনের এই সংবাদ সম্মেলনের পরে গ্রেপ্তার বন্ধ হবে। অন্যথায় নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু করার জন্য আমরা বৃহত্তর একটা কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।”
সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান তালুকদার, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আবদুস সালাম, রেজা কিবরিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।