৩৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেই

একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের নামে যত মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে, তার আড়াই গুণ বেশি মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে বিএনপির নামে। এর মধ্যে ৩৬টি আসনে আওয়ামী লীগের নামে কোনো মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2018, 02:53 PM
Updated : 29 Nov 2018, 02:53 PM

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার পরদিন ইসির কর্মকর্তাদের কাছে এই তথ্য পাওয়া যায়।

এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে সারা দেশে ৩০০ আসনে মোট ৩০৬৫টি পূর্ণাঙ্গ মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে বলে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের ২৮১টি, বিএনপির ৬৯৬টি, জাতীয় পার্টির ২৩৩টি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ১৩৫৭টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।

দলীয় মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে মোট ২৫৬৭টি। এর বাইরে স্বতন্ত্র ৪৯৮টি মনোনয়নপত্র মিলিয়ে মোট সংখ্যা ৩০৬৫।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, ২৬৪টি আসনে আওয়ামী লীগের নামে ২৮১টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। বিএনপির নামে ৬৯৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ২৯৫টি আসনে।

অর্থাৎ ৩৬টি আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী এখনই নেই, এসব আসন জোটের অন্য দলগুলোকে ছেড়ে দেওয়া নিশ্চিত। আবার ১৭টি আসনে দলের প্রত্যয়ন নিয়ে একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করে রেখেছেন।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি ও বিকল্প ধারার আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা এখনও হয়নি। তা চূড়ান্ত হলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বরের পর জানা যাবে, জোটের কোন দল কতটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

আওয়ামী লীগ বলে রেখেছে, জোট শরিকদের ৬৫-৭০টি আসন ছাড়তে পারে তারা। শরিকদের সঙ্গে সমঝোতার পর প্রতি আসনে একজন প্রার্থী রেখে অন্যদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হবে।

আওয়ামী লীগের ফাঁকা আসন

ঠাকুরগাঁও-৩; নীলফামারী-৩ ও ৪; লালমনিরহাট-৩; রংপুর-১ ও ৩; কুড়িগ্রাম-২; গাইবান্ধা-১; বগুড়া-২, ৩, ৪, ৬ ও ৭; রাজশাহী-২; কুষ্টিয়া-২; বরিশাল-৩ ও ৬; পিরোজপুর-২ ও ৩; ময়মনসিংহ-৪ ও ৮; কিশোরগঞ্জ-৩; মুন্সিগঞ্জ-১; ঢাকা-৪, ৬ ও ৮; নারায়ণগঞ্জ-৫; সুনামগঞ্জ-৪; সিলেট-২; মৌলভীবাজার-২; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২; ফেনী-১ ও ৩; লক্ষ্মীপুর-২ এবং চট্টগ্রাম-২ ও ৫।

মামলায় জেরবার বিএনপি এবার প্রায় প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রত্যয়ন দিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করিয়ে রেখেছে। দলটির নেতারা বলছেন, কোনো কারণে কারও প্রার্থী হওয়া আটকে গেলে বিকল্প প্রার্থী ভোট করবেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়েও বিএনপির সমঝোতা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এই জোটেও কোন দল কতটি আসনে লড়বে, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

বিএনপির ফাঁকা আসন

টাঙ্গাইল-৮, মৌলভীবাজার-২, কুমিল্লা-৭, লক্ষ্মীপুর-৪ ও চট্টগ্রাম-১৪।

নবম সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের ২৬৪ আসনে এবং ধানের শীষ প্রতীকের ২৬০ আসনে প্রার্থী ছিল। সেবার ৩৮টি দল অংশ নিয়েছিল ভোটে।

বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচন পেরিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের নামেই মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অন্য দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্রদের নামে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে জেপির ১৭টি, সাম্যবাদী দলের ৩টি, গণতন্ত্রী পার্টির আটটি, ন্যাপের ১৪টি, ওয়ার্কার্স পার্টির ৩৩টি, জাসদের ৫৩টি, তরীকত ফেডারেশনের ২০টি এবং বিকল্প ধারার ৩৭টি। এছাড়া জাকের পার্টি ১০৮টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।

বিএনপির রাজনৈতিক মিত্রদের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে গণফোরামের ৬১টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৩৭টি, জেএসডির ৫১টি, এলডিপির ১৫টি, বিজেপির ১১টি, এনপিপির ৯০টি, জাগপার ৬টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ১৩টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ৪৯টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ১৫টি, কল্যাণ পার্টির ৫টি।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সিপিবির ৭৭টি, বাসদের ৪৯টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ৩০টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।

এছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের ৩২টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের ১২টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২৯৯টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ২১টি, খেলাফত মজলিসের ১২টি, বিএমএলের ১৭টি, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ১টি, বিএনএফের ৭১টি মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের অংশগ্রহণ নিয়ে বৃহস্পতিবার সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, “আমরা যেটা আশা করেছিলাম একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে, আমাদের সে আশা পূরণ হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম একটা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।”

নবম সংসদ নির্বাচনে দলভিত্তিক চূড়ান্ত প্রার্থী

আওয়ামী লীগ ২৬৪; বিএনপি ২৬০; জাতীয় পার্টি ৪৯; স্বতন্ত্র ১৫১; জাসদ ৭ (নৌকা ৪); ওয়ার্কার্স পার্টি ৫ (নৌকা ৩); বিজেপি ২ (ধানের শীষ); ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১৬৭, বিকল্পধারা ৬৩; জমিয়তে ইসলাম ৭ (ধানের শীষ ২); জাকের পার্টি ৩৭; ইসলামী ঐক্যজোট ৪ (ধানের শীষ ২); জাগপা ২ (ধানের শীষ ১), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৪৭; গণফোরাম ৪৫; সিপিবি ৩৭; বাসদ ৫৭; জেএসডি ৪৫;  বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ১৮; বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৮, ন্যাপ ১৪; কল্যাণ পার্টি ৩৯; তরীকত ৩১; বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ৩৩; পিডিপি ২১; এনপিপি ৩০; জেপি ৭; বাংলাদেশ ন্যাপ ৫; গণফ্রন্ট ১৪; গণতন্ত্রী পার্টি ৫; বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ৫; বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৫; ইসলামিক ফ্রন্ট ২; সাম্যবাদী দল ১ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১০।

জামায়াত ৩৯টি, ফ্রিডম পার্টি দুটি; ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ১১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল ওই নির্বাচনে। এ তিনটি দলের নিবন্ধন পরে বাতিল হয়েছে।

দশম সংসদ নির্বাচনের দলভিত্তিক প্রার্থী

আওয়ামী লীগ ২৪৭; জাতীয় পার্টি ৮৬; ওয়ার্কার্স পার্টি ১৮; জাসদ ২৪; তরীকত ৩; জেপি ২৮; বিএনএফ ২২; ন্যাপ ৬; বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ২; গণফ্রন্ট ১; বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ১; স্বতন্ত্র প্রার্থী ১০৪।

সংসদ নির্বাচন

মনোনয়ন দাখিলকারীর সংখ্যা

বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী সংখ্যা

প্রথম

১২০৩

১০৮৯

দ্বিতীয়

২৩৫২

২১২৩

তৃতীয়

 

১৫২৭

১১২৪

চতুর্থ

১১২০

৯১৯

পঞ্চম

৩৮৫৫

২৭৮৭

ষষ্ঠ

১৯৮৭

১৪০৫

সপ্তম

৩০৯৩

২৫৭৬

অষ্টম

২৫৬৩

১৯৩৯

নবম

২৪৬০

১৫৬৭

দশম

১১০৭

৫৪৩ (১৫৩ বিনা প্রতিদন্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) ১৪৭ আসনে ৩৯০ জন

একাদশ

৩০৬৫

৯ ডিসেম্বর চূড়ান্ত হবে।