ইভিএম: রংপুরের ভোটাররা কী ভাবছেন

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটগ্রহণ নিয়ে রংপুর-৩ আসনের ভোটারদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2018, 08:30 AM
Updated : 28 Nov 2018, 08:30 AM

অনেকেই এ পদ্ধতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, প্রকাশ করেছেন উচ্ছ্বাস। তবে কেউ কেউ জালিয়াতির আশঙ্কার কথা বলেছেন। এ পদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে অনেকে বলেছেন প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা।    

দেশে এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, রংপুর-৩, চট্টগ্রাম-৯, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২ আসনের সব কেন্দ্রে যন্ত্রে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

রংপুর সদর উপজেলা এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি এলাকা নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসনে ভোটার আছেন ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭৩ জন।

এই ভোটারদের একটি অংশ পল্লী এলাকার বাসিন্দা। ইভিএম নিয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা তাদের নেই। সংবাদ মাধ্যমের খবর আর রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে ইভিএম নিয়ে যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, তা থেকেই এ বিষয়ে তাদের নিজস্ব ধারণা তৈরি হয়েছে।

এ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে আসছিলেন। ইভিএমের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থানে রয়েছে বিএনপিও।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছেন, ইভিএমে ভোট হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সহজ হবে। নির্বাচন কমিশনও একই কথা বলছে।

রংপুর-৩ আসনের ভোটার নগরীর পাল পাড়া এলাকার  সাংবাদিক মো. তারেক (৩০) মনে করেন, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে দেশে ভোট হয়, তার তুলনায় ইভিএম ভালো।

“তবে এ আসনের অধিকাংশ ভোটারই ইভিএম বোঝেন না। ফলে ইভিএম এখানে কতটা কার্যকর হবে তা এখনও নিশ্চিত না ।”

৪নং ওয়াডের বালাকুমার এলাকার তরুণ ভোটার রমানাথ রায় (২০)এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। তার বিশ্বাস, ইভিএমের মাধ্যমে স্বচ্ছতা বজায় রেখে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব। যন্ত্রে ভোটগ্রহণকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার একটি সফল উদাহরণ হিসেবে দেখতে চান তিনি।

ধাপ এলাকার আরেক নতুন ভোটার কোহিনুর আক্তার (১৯) বলেন, ইভিএমে ভোট দেওয়া হবে একটি নতুন অভিজ্ঞতা, তাই তিনি রোমাঞ্চিত।

নগরীর কেরানি পাড়া এলাকার লতিফুল বারী রতন (৩০) বলেন, “ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট ভালোই হবে।তবে এখন থেকে সাধারণ ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।”

ইভিএম কী তা জানেন না নগরীর বাহার কাছনা এলাকার ভোটার সুজন। আগে কখনও যেহেতু এ পদ্ধতিতে ভোট দেননি, তাই এবার তিনি কিছুটা চিন্তিত।

ইভিএম পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সসম্পাদক আতিক উল আলম কল্লোল বলেন, এখানে জাল ভোটের কোনো সুযোগ নেই। সাধারণ ভোটাররা এ যন্ত্রে অভ্যস্ত না, তারপরও ডিজিটাল বাংলাদেশে ইভিএম পদ্ধতি ইতিবাচক।”

তিনি বলেন, সম্প্রতি রংপুরে ইভিএম মেলা হয়েছে। সেখানে অল্প কিছু ভোটার এ যন্ত্র দেখেছেন।।এছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। সেখানে কিছুটা হলেও ধারণা হয়েছে ভোটারদের।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইভিএমকে প্রযুক্তির দিক দিয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ হিসেবে দেখাতে চাইলেও বিএনপি নেতারা একে ভোট ‘কারচুপির যন্ত্র’ হিসেবে বর্ণনা করছেন।

রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইজ আহমেদ বলেন, “ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট কারচুপি করা সম্ভব। সাধারণ ভোটাররা ইভিএম সম্পর্কে জানেন না। এই যন্ত্রকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করা যায়। ভোট কারচুপি করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকার এটা করেছে।”

অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সাফি বলেন, “ইভিএমের মাধ্যমে দ্রুত ভোটগ্রহণ ও গণনা সম্পন্ন করা যায়। এ পদ্ধতিতে ভোট কারচুপি, জোর করে সিল মেরে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইভিএম ব্যবহার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত। আর ইভিএম নিয়ে রংপুরের ভোটারদের তেমন কোনো সমস্যা হবে বলে তিনি মনে করেন না।