নেত্রকোনা-৪: অভিযোগবিদ্ধ রেবেকা, লড়তে চান শফি

নেত্রকোনা-৪ আসনে টানা ১০ বছরের সংসদ সদস্য রেবেকা মোমিনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে এবার সেখানে নৌকার হাল ধরতে চাইছেন সাবেক ছাত্রনেতা শফি আহমেদ।

মাসুম বিল্লাহ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2018, 01:58 PM
Updated : 21 Nov 2018, 03:25 PM

হাওরাঞ্চলের এই আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির দণ্ড পাওয়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী।

নেত্রকোনার হাওর অধ্যুষিত মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী উপজেলা নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-৪ আসন। তিন উপজেলায় ২১টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভায় মোট ভোটার দুই লাখ ৯২ হাজার ২৩৬ জন।

স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পালাবদল হয়ে জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি আসছে এই আসন থেকে।

নেত্রকোনা-৪ এ ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন আবদুল খালেক। তার মৃত্যুতে উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের ত্রাণ পুনর্বাসন ও খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আবদুল মোমিন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে সমালোচনাবিদ্ধ মোমিন পরে আওয়ামী লীগে ফিরে এসে এমপি হলেও ঠাঁই পাননি শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায়।

মোমিনের মৃত্যুর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার স্ত্রী রেবেকা। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি।

কিন্তু এবার নির্বাচন নিয়ে উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে বিভক্তি।

রেবেকা মোমিন

রেবেকার বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তানদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

মোহনগঞ্জের একজন আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকাকেন্দ্রিক থাকার কারণে এলাকার রাজনীতিতে খুব একটা প্রভাব রাখতে পারছেন না রেবেকা মোমিন। তবে স্বামীর রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে দুবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে যান তিনি।”

এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ কম থাকায় রেবেকার জন্য নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া এবার কঠিন বলেই মনে করেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।

স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বিরোধের কারণে গত ‍উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুড়ি ও মদন উপজেলায় নৌকার প্রার্থীরা হেরে যান।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে খালিয়াজুড়িতে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সামছুজ্জামান তালুকদার সোয়েব সিদ্দিকী।

বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেবেকা মোমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিপক্ষ গ্রুপ এ ধরনের বিভিন্ন কথা বলছে। এলাকায় যাই বা না যাই, উন্নয়ন কেমন হয়েছে- সেটা দেখেন।”

তিনি বলেন, “এলাকার নেতারা আমার জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছে। এখন নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি কী করেন, সেটাই দেখার বিষয়।”

শফি আহমেদ

আওয়ামী লীগের একটি অংশ এবার অপেক্ষাকৃত তরুণ সংগঠক শফি আহমেদকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন।

গত শতকের ৮০ দশকের ছাত্রনেতা ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শফি আহমেদ জাসদ থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় উপ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন।

২০০৭ সালের বাতিল হওয়া নির্বাচনে নেত্রকোনা-৪ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন শফি। কিন্তু সেবার নির্বাচন না হওয়ায় তার আর ভোট করা হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী শফির সমর্থকরা মনে করেন, তাদের নেতা বরাবরই শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। নইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার জেতার সম্ভাবনাই বেশি থাকত। এবার নিশ্চয়ই আনুগত্যের পুরস্কার তাকে দেবেন শেখ হাসিনা।

বিএনপি থেকে বাবরের স্ত্রী

বিএনপি থেকে এবার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত বাবরের স্ত্রী শ্রাবণীর, এমনটাই বলছেন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

আলোচিত একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলছে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালী এই প্রতিমন্ত্রীর সামনে।

জন্ম নেত্রকোণায় হলেও বাবরের বেড়ে ওঠা রাজধানীর মগবাজারে। ১৯৯৬ সালে বিএনপির রাজনীতি যোগ দেওয়ার পর থেকেই দ্রুত তার উত্থান হতে থাকে।

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাবর ১৯৯১ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন নেত্রকোনা-৪ আসনে। পরের বার মোমিনের কাছে হারলেও ২০০১ সালে ফের নির্বাচিত হন। এরপরই শুরু হয় বাবরের বড় ধরনের উত্থান। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

জরুরি অবস্থার পর কারাগার থেকে বেরিয়ে দলের প্রার্থী হতে চাইলেও সেবার বিএনপির মনোনয়ন পাননি বাবর। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি।