জোটে ভোট: মনোনয়ন নিয়ে ধন্দে বিএনপি

দুই জোটকে সঙ্গে নিয়ে অভিন্ন প্রতীকে ভোট করার সিদ্ধান্তের পর মনোনয়নের নিয়ম নিয়ে এখন বিভ্রান্তিতে পড়েছে বিএনপি।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2018, 10:57 AM
Updated : 19 Nov 2018, 10:58 AM

একটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হলে পরে চূড়ান্তভাবে একক প্রার্থী কীভাবে নির্ধারণ হবে এবং জোটের প্রার্থীর প্রতীক কীভাবে নির্ধারিত হবে বুঝতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর পাঠানো ওই চিঠি সোমবার ইসিতে পৌঁছে দেওয়ার পর বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিজন কান্তি সরকার বলেন, “আমাদের জোটগত প্রতীক ব্যবহার ও প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু বিষয় স্পষ্ট করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।”

সেই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পদত্যাগ করতে হবে কিনা তা জানতে চেয়ে আলাদা একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিজন।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত দল রয়েছে আটটি। 

এছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে গড়া সরকারবিরোধীদের আরেক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরও তিনটি নিবন্ধিত দল নির্বাচনে বিএনপির প্রতীক ব্যবহারের ইচ্ছার কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে। 

কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩) (বি) ধারায় প্রাথমিক মনোনয়ন এবং ১৬(২) ধারায় চূড়ান্ত মনোনয়ন নিয়ে ধন্দে পড়েছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি।

মির্জা ফখরুলের চিঠিতে বলা হয়েছে, “মনোনয়নপত্রের ফরম-২ এ ‘প্রাথমিক মনোনয়ন’ বলে কিছুর উল্লেখ নেই। এতে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক ও চূড়ান্ত মনোনয়ন কীভাবে দেওয়া হবে তা স্পষ্ট করা দরকার।”

এক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাদাভাবে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে কি না, একটি আসনে দল বা জোটের একাধিক প্রার্থী প্রাথমিক মনোনয়ন নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর জোটগতভাবে একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হলে অন্যদের প্রার্থিতাও বৈধ থেকে যাবে কি না, চূড়ান্ত মনোনয়নের পর জোটের প্রার্থীদের প্রতীক কীভাবে নির্ধারণ হবে তা জানতে চেয়েছে বিএনপি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জোটগতভাবে একক প্রার্থীর প্রতীকের জন্য প্রধান দলের সম্মতিপত্র  দিতে হবে কমিশনে। সেই সঙ্গে যারা ওই প্রতীক ব্যবহার করবে, তাদেরও একটি চিঠি কমিশনকে দিতে হবে। দুই পক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে, দলের জন্য সংরক্ষিত প্রতীক দলীয় প্রার্থীরা বরাদ্দ পাবে। তবে জোটের শরিকদের [আরপিও ২০[১] সেই প্রতীক ব্যবহার করতে দিলে দলীয় সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বা সমমর্যাদার কারও অনুমতি লাগবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, কোনো আসনে একই দলের একাধিক প্রার্থী প্রাথমিক মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে দলীয় সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক/সম পদমর্যাদার একজন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরিত মনোনয়নের বিষয়ে প্রত্যয়ন থাকতে হবে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে দল চূড়ান্ত মনোনীত একজনকে প্রত্যয়ন দেবে। সেক্ষেত্রে বাকিরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাহারের তালিকায় চলে যাবে।

কিন্তু জোটভুক্ত অভিন্ন প্রতীক ব্যবহারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আসনে দুই দলের সম্মতিপত্র (যার প্রতীক ব্যবহার করবে এবং যে দল ব্যবহার করবে) রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগেই এ কাজটি করতে হবে। প্রত্যাহারের সময় শেষে নির্বাচন কমিশন প্রতীক বরাদ্দ করবে।

একই দলের একাধিক প্রার্থী থাকলে, কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে এবং দল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একক প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিলে সবার মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে বলে ইসি যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান জানিয়েছেন।

নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট একক প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু অনেক আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় প্রধান দুই দলকে বিভিন্ন কারণে ‘ঝামেলায়’ পড়তে হয়।

২০০৮ সালের ওই নির্বাচনে মহাজোটের আওয়ামী লীগ ২৬৪ আসনে, জাতীয় পার্টি ৪৯ আসনে, জাসদ ৭ আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি ৫ আসনে এবং চারদলীয় জোটের বিএনপি ২৬০ আসনে, জামায়াতে ইসলামী ৩৯ আসনে, বিজেপি দুই আসনে প্রার্থী দিয়েছিল।

আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন ১৫১ জন। দলের মনোনয়ন না পেয়ে এদের অনেকে যেমন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন, তেমনি মতবিরোধের কারণে মহাজোট ও চারদলীয় জোট বেশ কিছু আসনে একক প্রার্থী দিতে পারেনি।

২০১৩ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ ঠেকাতে ইসির সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব দেয়। দলের প্রতিনিধি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তখন বলেছিলেন, দলের কোনো কর্মী যখন মনোনয়ন অগ্রাহ্য বা অমান্য করে, তখন দলের শৃঙ্খলাই শুধু নয়, গণতন্ত্রের ভিতও নড়ে যায়।

নবম সংসদ নির্বাচনে এ নিয়ে সমস্যায় পড়ায় তা কাটিয়ে উঠতে তৎকালীন ইসি নিয়ম করে, দলের ‘সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক মনোনীত একজনের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা গ্রহণ করবেন। অন্যদের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের মেরুকরণে নিবন্ধিত ৩৯ দলের প্রায় অর্ধেকই নিজেদের নির্বাচনী প্রতীক তুলে রেখে শামিল হয়েছে বড় শরিকের পতাকা তলে।

অভিন্ন প্রতীকে নির্বাচন করতে চাইলে নির্বাচন কমিশনে তা জানানোর শেষ সময় ছিল বৃহস্পতিবার। তাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের আটটি নিবন্ধিত দল ‘নৌকা’ প্রতীক এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ১১টি দল ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে।