তারেকের বিষয়ে ‘কী করার আছে’, দেখবে ইসি

বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দণ্ডিত পলাতক আসামি তারেক রহমানের অংশগ্রহণের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে নির্বাচন কমিশনের ‘কী করার আছে’ তা আলোচনা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2018, 12:04 PM
Updated : 18 Nov 2018, 01:01 PM

রোববার নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ মামলা না করতে ইসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘প্রয়োজনীয় নির্দেশনা’ দেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে রোববার সকাল থেকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সাক্ষাতকারে যোগ দিচ্ছেন বলে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “একজন দণ্ডিত, সাজাপ্রাপ্ত- পলাতক আসামি দলীয় ফোরামে এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারে কিনা সেটা আমি জাতির কাছে বলব। জাতির কাছে এর বিচার চাইছি। আর এ বিষয়ে ইলেকশন কমিশনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান এক দশক আগে জরুরি অবস্থার সময় দেশ ছাড়ার পর থেকেই পরিবার নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন। দুটি দুর্নীতি মামলায় তাকে ১৭ বছর এবং ২১ অগাস্ট গ্রেনেড মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা বলেছেন, আমরা শুনেছি। এ ধরনের কোনো কিছু মনিটর করার মত নিজস্ব কোনো ক্যাপাসিটি আমাদের নাই। যদি কেউ তথ্য-প্রমাণসহ আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাহলে আইনের মধ্যে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বলব।

“আর আইনের মধ্যে যদি কিছু না থাকে, তাহলে আমরা কমিশনের সাথে বসে কী করতে পারি, তা পর্যালোচনা করে দেখে তারপর সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেব।”

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, একজন দণ্ডিত আসামি দেশে থাকলে তিনি হয় কারাগারে থাকবেন, অথবা পলাতক। কেউ কারাগারে থাকলে এ ধরনের কাজ করতে পারেন না।

“জেল থেকে জামিনে এসে করলে কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু এই ক্ষেত্রটা একবারে ভিন্ন। আইনের মধ্যে কী আছে সেটা দেখে আমরা ব্যবস্থা নেব।”

নির্বাচন কমিশন তারেকের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পায়নি জানিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, “অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘গায়েবী ও মিথ্যা’ মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে অভিযোগ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে বিএনপি।

রোববার দুই সহস্রাধিক মামলার তালিকা দিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ করেছে দলটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি তালিকাটা ব্যক্তিগতভাবে এখনও দেখিনি। আমরা দেখি সত্যিকার অর্থে যদি কোনো হয়রানিমূলক মামলা হয়ে থাকে এবং সেটা যদি রাজনৈতিক হয়ে থাকলে, আমরা পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেব যেন হয়রানিমূলক মামলা না করে। কারণ তাতে নির্বাচনী পরিবেশ কিছুটা হলেও নষ্ট হয়।”

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আগাম প্রচারের ব্যানার-পোস্টার রোববারের মধ্যে যারা না সরাবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেন এই নির্বাচন কমিশনার।   

তিনি বলেন, “ব্যানার-পোস্টার সরানোর বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা ‘স্ট্রেট ফরোওয়ার্ড’। আমরা এগুলো তুলে ফেলার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছি। যদি তুলে ফেলা না হয়, তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছি। সাথে সাথে এটাও আমরা বলেছি, নিজেরা যেগুলো সরাবে না সেগুলো সরানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উদ্যোগ নেব।”

সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়ে বিএনপির আপত্তি প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রফিকুল ইসলাম বলেন, “থ্যাংক ইউ পিএম- এটি আমি টেলিভিশনে দেখেছি। এটি প্রচারের জন্য বেসরকারি টেলিভিশনের নীতিমালা আছে। বেসরকারি টেলিভিশনকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ক্ষমতা বা ইচ্ছা আমাদের নাই। উনারা স্বঃপ্রণোদিত হয়ে এই প্রচার করতে পারেন। সেটা নির্বাচনী প্রচার হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম।

“একটা সরকার আছে, সেই সরকারের কর্মকাণ্ড তারা প্রচার করছে। আমরা বেসরকারি টেলিভিশনের সম্প্রচারে কোনো নির্দেশনা দিলে আপনারা হস্তক্ষেপের কারণে আন্দোলনে নামবেন।”

পুলিশ নির্বাচনের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের ফোন করে খোঁজ খবর নিচ্ছে- এমন একটি খবরের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রফিকুল বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের কোনো নির্দেশ নাই। আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি, রিটার্নিং কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো নির্দেশ দেননি।

“কোনো পুলিশ কর্মকর্তা যদি অতি উৎসাহী হয়ে এ ধরনের কিছু করে থাকে, তাহলে আপনারা ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিস্তারিত আমাদের দেন- কি করতে হবে তা আমাদের ওপর ছেড়ে দেন।”

কোনো ব্যক্তিকে যেন হয়রানি করা না হয়, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।