‘শতভাগ সুষ্ঠু হবে না’ মেনে নিয়েই প্রশ্নহীন ভোটের আশায় ইসি

পৃথিবীর কোথাও ‘শতভাগ সুষ্ঠু’ নির্বাচন হয় না মন্তব্য করে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেছেন, তারা একটি ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন করতে চাইছেন, যা নিয়ে কারও প্রশ্ন থাকবে না। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2018, 07:12 AM
Updated : 16 Nov 2018, 07:27 AM

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিএনপির সংশয়ের মধ্যেই শুক্রবার রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের ব্রিফিংয়ে কবিতা খানমের এমন বক্তব্য এল।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহি করতে হয় জনগণের কাছে। সুতরাং এমন কোনো নির্বাচন তারা করতে চান না, যার জন্য জনগণের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।

“শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, সেটা কোনো দেশেই হয় না; আমাদের দেশেও হবে না। সুতরাং আমরা বলতে চাই, একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমরা চাই, যেটা সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকে।”

নির্বাচনের উৎসবের আমেজ যেন কোনোভাবে বৈরী হয়ে না ওঠে সে বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের সতর্ক থাকার তাগিদ দেন এ নির্বাচন কমিশনার।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আজ নির্বাচনের হাওয়া বইছে। আজ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত  এবং নতুন সংসদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত এই হাওয়ার মধ্যেই আমাদের বসবাস। সুতরাং হাওয়াটা যেন কোনোভাবেই বৈরী না হয়-এই নির্দেশনা অবশ্যই আপনাদের প্রতিপালন করতে হবে।”

৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ রেখে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিল করা যাবে। ২ ডিসেম্বর বাছাইয়ের পর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা।

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করে আসা বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোটের তারিখ এক মাস পেছানোর দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু কমিশন বৃহস্পতিবার তাদের সেই দাবি নাকচ করে দেয়। 

গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ বিষয়ে বৈঠক করার পর ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, “আমি সামগ্রিকভাবে একটা কথা বলি, আমাদের নির্বাচনে থাকা না থাকা নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণের ওপর।”

আর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবারও অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে।

সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের ব্রিফিংয়ে কবিতা খানম বলেন, “নির্বাচন কমিশন কখনোই চাইবে না নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক। আমরা শপথ গ্রহণের পর থেকে প্রতিটা নির্বাচনে মাঠে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ইতোপূর্বে কোনো কমিশন এভাবে সাধারণ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে বিচরণ করেনি।”

নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ‘বিচারকের নিরপেক্ষতায়’ দায়িত্ব পালনের তাগিদ দিয়ে সাবেক এই বিচারক বলেন, “ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে আপনারা কোনো জাজমেন্ট করবেন না। সবার জন্য সমান আচরণ যেন থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।”

নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সব ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ‘সদ্ভাব’ বজায় রাখার পরামর্শ দেন এ নির্বাচন কমিশনার।

তিনি বলেন, “আইনের মাধ্যমে একটা নির্বাচন তুলে আনার ক্ষেত্রে সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন এ কাজ সুষ্ঠুভাবে করবে, এ আশা যারা ব্যক্ত করেন, আমি বলব তারা নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলো ইগনোর করার চেষ্টা করেন।”

কবিতা খানম বলেন, নির্বাচনী দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের মিডিয়ায় কথা বলার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রাখা দরকার। এমন কিছু বলা উচিত না যা নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারে।

শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে তিনি আহ্বান জানান, যেন তারা  আচার-আচরণ এবং কথা-বার্তায় ‘নির্বাচনকে অসুস্থ করে’ এমন বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকেন। 

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “দায়িত্ব পালনে যেন এতোটুকু অবহেলা না হয়। একট সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ‍তুলে আনার ক্ষেত্রে আপনারা সৎ থাকবেন। নির্বাচন কমিশনের শপথের মর্যাদা রাখার চেষ্টা করবেন। তিন মাসের কর্মকাণ্ড আপনাদের চাকরি জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। সুতরাং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সৎভাবে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন।”

কবিতা খানম বলেন, আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ না করার কারণেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিচ্যুতি ঘটে।কমিশন সেসব ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেবে না।

“না জেনে ভুল করবেন না এবং জেনে সতকর্তার সাথে কাজ করবেন। যেহেতু সব দোষ নন্দ ঘোষ, সে কারণে জবাবদিহিতার জায়গাটি আমরা অত্যন্ত শক্ত করতে চাই। কোনো ধরনের বিচ্যুতি বা আইনের ব্যত্যয় ঘটার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন জবাবদিহিতার জায়গাটিতে শক্তভাবে প্রতিবাদ করবে।”

অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ব্রিফিংয়ের উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য দেন।