সেনা মোতায়েন ভোটের দুই থেকে দশ দিন আগে: ইসি সচিব

জাতীয় সংসদ নির্বচনের দুই থেকে দশ দিন আগে সেনা মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2018, 06:21 AM
Updated : 15 Nov 2018, 01:51 PM

নির্বাচন সামনে রেখে বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

ইসি সচিব বলেন, “নির্বাচনের এক সপ্তাহ বা দশ দিন আগে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হবে। তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা থাকতে হবে, সে অনুযায়ী আপনাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।”

বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংসদ নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে এলেও নির্বাচন কমিশন তাতে সাড়া দেয়নি।

গত ৮ নভেম্বর প্রথম দফা তফসিল ঘোষণার দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, এবার সেনা মোতায়েন হবে আগের মতোই। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা থাকবে না।

তিনি বলেন, “নির্বাচন চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে যথা-প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে।”

বাংলাদেশে এর আগের প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই সেনা মোতায়েন হয়েছে। ভোটের মাঠে সেনাসদস্যরা বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতেই নিয়োজিত থাকেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছিল।

২০০১ সালের আগে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত কোনো বিধান আরপিওতে ছিল না। তারপরও ১৯৭৩ থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদেরও জেলা/থানা/উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছিল।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপেও সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার দাবি তুলেছিল। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, এটা সংবিধান পরিপন্থি, বিশ্বের কোথাও এরকম নজির নেই।

সশস্ত্র বাহিনীর কর্মপরিধি এবং কত সময় তারা নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করবে- সে বিষয়গুলো ঠিক হবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকে।

৩০ ডিসেম্বর ভোট রেখে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিল করা যাবে। ২ ডিসেম্বর বাছাইয়ের পর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা।

আচরণবিধিতে নজর দেওয়ার তাগিদ

মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে রাজনৈতিক দলের নেতারা যেন বিধি ভেঙে ‘শোডাউন’ না করতে পারে, সেদিকে নজর রাখতে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের তাগিদ দেন ইসি সচিব।

বুধবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “গতকাল পল্টনে শো-ডাউনকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। অনেকে হাতি-ঘোড়া নিয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে পাঁচ হাজার দশ হাজার লোক নিয়ে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন, এটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি এবং নির্বাচন আচরণবিধির বিরোধী। এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”

ইসির বেঁধে দেওয়া ১৮ নভেম্বরের মধ্যে আগাম প্রচারের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনসহ সব সামগ্রী সরিয়ে না নিলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, “আমাদের দেশের নির্বাচনে কোনো ধারাবাহিকতা নেই। কখনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার, কখনও সেনা সমর্থিত, কখনও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। ধারাবাহিকতা নেই বলে নির্বাচনের একটি সুষ্ঠু রীতি বা পদ্ধতি গড়ে ওঠেনি।”

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি সঠিক রীতি গড়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।   

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ অপরিহার্য মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু না হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূলের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এবারের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য না হলে বিশ্ববাসীর কাছে আমরা মাথা তুলে তাকাতে পারব না, কেননা বিশ্ববাসী আমাদের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে।”

নির্বাচনে কেউ কেন্দ্র দখল করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন এই নির্বাচন কমিশনার।