নির্বাচন পেছানোসহ নানা দাবি নিয়ে বুধবার বিকালে নির্বাচন ভবনে গিয়ে সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি; ধৈর্য ধরে আমাদের সব প্রশ্ন শুনেছে এবং উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা আশা করি, নির্বাচন চলাকালীন একই সহোযোগিতা পাব।”
ভোটের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি ইসির কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
কামালের পাশে থাকা বিএনপি মহাসচিব ফখরুলকে তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, আলোচনায় আশ্বস্ত হয়েছেন কি না?
তিনি সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বলেন, “আমি সামগ্রিকভাবে একটা কথা বলি, আমাদের নির্বাচনে থাকা না থাকা নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণের ওপর।”
তিনি জানান, তারা ভোট পেছানো, ইভিএম ব্যবহার না করা, প্রশাসনে রদবদল, সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ বেশ কিছু বিষয়ে ইসির সঙ্গে আলোচনা করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ ছাড়া ‘ফলপ্রসূ’ নির্বাচন হবে না বলে কমিশনকে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
“উনারা (ইসি) বলছেন, তারা দেখবেন,” বলেন ফখরুল।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচন তিন সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল।
“ওনারা বলেছেন, তারা আলোচনা করে জানাবেন,” বলেন ফখরুল।
ইভিএম নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, নির্বাচনে ইভিএম একেবারেই ব্যবহার করা যাবে না। ইসি বলেছেন, তারা সব কেন্দ্রে বা বড় কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করবেন না। শুধু সিটি করপোরেশনগুলোতে সীমিত সংখ্যক ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা তারা করছেন।”
ইভিএম নির্বাচনে পুরোপুরিভাবে নিরাপদ নয়- তা বোঝাতে পারলে তা ব্যবহার করা হবে না বলে আশ্বাস পাওয়ার কথা জানান বিএনপি মহাসচিব।
সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রতিটি কেন্দ্রে সেনাবাহিনী রাখার দাবি জানিয়েছি। জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে রদবদলের কথা আমরা বলেছি। তারা বলেছেন, এটা করা যেতে পারে।”
বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গও আসে আলোচনায়।
ফখরুল বলেন, “হয়রানিমূলক মামলা, গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধের কথা আমরা বলেছি। তারা আমাদের কাছে তালিকা চেয়েছেন। অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেন কাউকে গ্রেপ্তার না করা হয়, পজিটিভভাবে তারা ব্যবস্থা নেবেন।”
ভোটকেন্দ্রের খবর গণমাধ্যমকে সরাসরি সম্প্রচারের সুযোগ দিতেও ইসির প্রতি আহ্বান জানায় ঐক্যফ্রন্ট।
মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের বিষয়টি আলোচনায় তোলেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
এজন্য সরকার ও পুলিশকে দায়ী করে ফখরুল বলেন, “নির্বাচনী পরিবেশের জন্য এটা একেবারেই শুভ লক্ষণ না।”
কামাল বলেন, বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সংঘটিত ঘটনায় ইসি দুঃখ প্রকাশ করেছে।
“এটা একেবারেই ভালো না। এটা কাম্য নয়। সিইসি আজকের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।”
ইসির সঙ্গে বৈঠকে কামাল ও ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশারফ হোসেন, মওদুদ আহমদ; কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান তালুকদার; জেএসডির আবদুল মালেক রতন, শহীদ উদ্দিন স্বপন; গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী; নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এস এম আকরাম; জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমদ এবং গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু ও মোকাব্বির খান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা চলে যাওয়ার পরপরই নির্বাচন ভবনে যায় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল।
তারা নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে আপত্তি জানায়। পাশাপাশি নয়া পল্টনে সংঘটিত ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
জানুয়ারিতে ভোট করতে ‘সমস্যা’
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনের তারিখ পেছানো সম্ভবপর নয়।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন বলেছেন, জানুয়ারিতে অনেক বিষয় আছে। ৩০ তারিখ যদি নির্বাচন হয়, এখানে অনেকগুলো রি-ইলেকশন করতে হতে পারে, গেজেটের ব্যাপার আছে, বিশ্ব ইজতেমার ব্যাপার আছে। সব কিছু মিলিয়ে জানুয়ারিতে নির্বাচনটা করা আমাদের জন্য অনেক কষ্টদায়ক হয়ে যাবে।”
সচিব জানান, কমিশন বসে ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে’ বিষয়টি জানাবেন বলে ঐক্যফ্রন্ট প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন সিইসি।
সিইসি নূরুল হুদা ইতোমধ্যে বলেছেন, ৩০ তারিখে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। এরপর আর নির্বাচনের তারিখ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।
‘‘ভোটে থাকা না থাকার বিষয়টি ইসির আচরণের ওপর নির্ভর করছে’- ঐক্যফ্রন্টের এমন বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসি সচিব বলেন, “সকল দলকে রেখেই কিন্তু নির্বাচন করতে চাই।”
নয়া পল্টনে সংঘর্ষের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান ইসি সচিব।
“পল্টনের বিষয়টা কী হয়েছে, তা পুলিশ বিভাগ থেকে জানতে চাওয়া হবে। কমিশন তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন।”
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি ‘আইনগত’ উল্লেখ করে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ইসি সচিব।