ভোট পেছানোর দাবি নিয়ে ইসিতে যাবে ঐক্যফ্রন্ট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আরও পেছানোর দাবি নিয়ে বুধবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

জেষ্ঠ্য প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2018, 08:26 AM
Updated : 13 Nov 2018, 03:16 PM

মঙ্গলবার মতিঝিলে ড. কামালের চেম্বারে জোটের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “আমরা যে দাবি করেছি নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি। আমরা আগামীকাল দুপুর ১২টায় আমাদের এই দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যাব। ড. কামাল হোসেন সাহেবসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ সেখানে থাকবেন।

“আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন আমাদের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।”

নির্বাচন কমিশন প্রথম দফার তফসিলে ২৩ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ঠিক করলেও নির্বাচন এক মাস পেছানোর দাবি জানিয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট।

এরপর ইসি নির্বাচন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ঠিক করে পুনঃতফসিল দিলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি ও তাদের শরিকরা।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের এড়িয়ে ‘ভোট চুরির’ নির্বাচন করতেই নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ দিয়েছে বলে তারা মনে করছেন। 

তবে নির্বাচন আরও পেছানোর দাবি নাকচ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের তারিখ ৩০ ডিসেম্বরের পরে নেওয়ার সুযোগ নেই।

সিইসির বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘“আমরা সেজন্য তো যাচ্ছি। উনি (সিইসি) স্পষ্ট করে বললেই তো হবে না। আমরা আমাদের দাবি-দাওয়াগুলো অবশ্যই বলব। সিইসি তো সব একাই বলে যাচ্ছেন।”

নির্বাচন এক মাস পেছানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নির্বাচন এক মাস পেছাতে আমরা দাবি করেছি এজন্য যে, তফসিল যে সময় ঘোষণা করা হয়েছে সে সময়টিতে বড়দিনের ছুটি থাকে। ওই সময়টি আমাদের খ্রিস্টান সম্প্রদায় একটা উৎসবের আমাজে থাকেন, তাদের ধর্মীয় বড়দিন।”

“এছাড়া নববর্ষ আসছে, সেটা একটা বড় অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে আমরা যে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আশা করছি, একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন দেখার জন্য তাদের সেই সুযোগও থাকছে না যদি ওই সময়ে ভোট হয়।”

পুনঃতফসিলে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ রাখায় ঐক্যফ্রন্ট ‘হতাশ’ হয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “আমরা মনে করছি, কমিশন একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করবার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নয়।”

নির্বাচন কমিশনে কোন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে তা ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা কামাল হোসেন আগামী ১৬ নভেম্বর সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পরে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্তাদের সঙ্গেও  সম্পাদকদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন।

নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপি কীভাবে আসন ভাগাভাগি করবে, সে সিদ্ধান্ত ‘আরও পরে’ নেওয়া হবে জানান ফখরুল।

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে তার মতিঝিলের চেম্বারে জোটের এই বৈঠকে মির্জার ফখরুল ছাড়াও জেএসডির আবদুল মালেক রতন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মুনটু, মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

ইসিতে যাবেন ১৪ জন

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আলোচনার জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়ার পর তাদের বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় সময় দিয়েছে ইসি।

গণফোরাম নেতা রফিকুল ইসলাম পথিক মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠি নির্বাচন ভবনে পৌঁছে দেন।

সেখানে বলা হয়, “তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার রেওয়াজ মানা হয়নি। তড়িঘড়ি এক তরফা তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এক মাস পেছানোর দাবি করলেও সরকারের পরামর্শে সাত দিন পিছিয়ে পুনঃতফসিল করা হয়েছে।”

ঐক্যফ্রন্টের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নামও পাঠানো হয় ওই চিঠির সঙ্গে।

কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছড়াও বিএনপির খন্দকার মোশারফ হোসেন, মওদুদ আহমেদ; জেএসডির আ স ম রব, আবদুল মালেক রতন; কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মুনটু, মোকাব্বির খান; নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এস এম আকরাম; জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমদ এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নাম রয়েছে এ তালিকায়।

আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রকিফুল ইসলাম রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনারা আমাদের সঙ্গে বসতে চাচ্ছেন। কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইছেন আমরা তো জানি না। আমরা বসি, কথা বলি। তারা কি বলতে চায় আমরা শুনি। (তফসিল পেছানোর দাবি) বিষয়গুলো আসবে পরে।”