৩০ তারিখের পর ভোট পেছানোর সুযোগ নেই: সিইসি

নির্বাচন আরও পেছানোর দাবি নাকচ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের তারিখ ৩০ ডিসেম্বরের পরে নেওয়ার সুযোগ নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2018, 06:28 AM
Updated : 13 Nov 2018, 07:04 AM

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মঙ্গলবার আগারগাঁয়ের নির্বাচন ভবনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

সিইসি বলেন, “৩০ তারিখে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। এরপর আর নির্বাচনের তারিখ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।”

কেন সুযোগ নেই তার ব্যাখ্যাও দেন সিইসি। তিনি বলেন, বর্তমান সংসদের মেয়াদপূর্তি হবে ২৮ জানুয়ারি। ৩০ ডিসেম্বর ভোট হলে নতুন সরকার গঠনের জন্য হাতে সময় থাকছে ২৯ দিন।

“এই ২৯ দিন কিন্তু খুব বড় কোনো সময় না। নির্বাচনের যে ফলাফলগুলো আসবে সেগুলোর গেজেট করা, এই ৩০০ আসনের গেজেট করা কিন্তু যা-তা বিষয় না।”

এছাড়া জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লম্বা সময় ব্যস্ত থাকতে হয় বলে সে সময় নির্বাচন করা কঠিন বলে যুক্তি দেন সিইসি।

নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে মতানৈক্যের মধ্যেই গত ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি নূরুল হুদা। সেখানে ২৩ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ধরে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ রাখা হয়।

বিএনপির ভোট বর্জনের মধ্যে গঠিত দশম সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি, সেই সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। ফলে তার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির সামনে।

তফসিলের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো মনোনয়নের প্রস্তুতি শুরু করলেও সাত দফা দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি ও তাদের জোট শরিকরা স্পষ্ট ঘোষণা না দেওয়ায় দশম সংসদের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা জাগছিল অনেকের মনে।

বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রোববার সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলে সংশয় কাটে। তবে এ জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

এই দাবির প্রেক্ষিতে সোমবার নির্বাচন এক সপ্তাহ পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ রেখে পুনঃতফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সিইসি বলেন, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এটা কমিশনের জন্য ‘স্বস্তির বিষয়’।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশ ইসির ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিএনপির পক্ষ থেকে ভোট এক মাস পেছানোর দাবিতে অনড় থাকার কথা জানানো হয়।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “২৫ ডিসেম্বর খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব। থার্টি ফার্স্ট আর ইংরেজি নববর্ষের কারণে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনার এবং মিশন কর্মকর্তারা ছুটিতে থাকেন। তাদের দৃষ্টির অন্তরালে একটা বড় ভোট চুরির নির্বাচন করতে সরকারের কৌশলী নির্দেশে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন নির্ধারণ করছে ইসি।”

অন্যদিকে নির্বাচন ভবনের ব্রিফিংয়ে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, “৩০ তারিখ অত্যন্ত কমপ্যাক্ট টাইম আমি মনে করি। খ্রিস্টান সম্প্রদায় আমাদের বলেছে, আগে বা পরে তাদের অনুষ্ঠানের কাছাকাছি যেন নির্বাচন না হয়। সে বিষয়টি আমরা বিবেচনায় নিয়েছি “

৪ নভেম্বর তফসিল দিয়ে ২১ ডিসেম্বর ভোট করার ইচ্ছা ছিল জানিয়ে নূরুল হুদা বলেন, “পরে যখন তারা (খ্রিস্টান সম্প্রদায়) অনুরোধ করল, তখন তফসিল ৮ তারিখে এবং নির্বাচন ৩০ তারিখ নির্ধারণ করেছি। এই ৩০ তারিখের পরে নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নাই।”

এই প্রেক্ষাপটে ৩০ ডিসেম্বর সামনে রেখেই নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিতে এবং দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তত থাকতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন তিনি।