দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের এড়িয়ে ‘ভোট চুরির’ নির্বাচন করতেই নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ দিয়েছে।
“২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব। থার্টি ফার্স্ট আর ইংরেজি নববর্ষের কারণে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনার এবং মিশন কর্মকর্তারা ছুটিতে থাকেন। তাদের দৃষ্টির অন্তরালে একটা বড় ভোট চুরির নির্বাচন করতে সরকারের কৌশলী নির্দেশে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন নির্ধারণ করছে ইসি।”
ঐক্যফ্রন্টের দাবিতে অনড় থাকার কথা জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, “নির্বাচনের শিডিউল এক মাস পেছাতে হবে। নির্বাচনে সবার জন্য মাঠ সমতল করতে হবে। শুধু নিজের জন্য মাঠ সমতল করবেন আর অন্যদের বের করে দেবেন এটা চলবে না।“
বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গত রোববার সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলে অনিশ্চিয়তার অবসান ঘটে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ২৩ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ধরে যে তফসিল দিয়েছিল, তা একমাস পেছানোর দাবি জানানো হয় ঐক্যফ্রন্টের ওই সংবাদ সম্মেলনে।
এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন সোমবার তফসিল পুননির্ধারণ করে। সাত দিন পিছিয়ে ভোটের নতুন তারিখ ঠিক হয় ৩০ ডিসেম্বর। তার আগে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় রাখা হয়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশ পুনঃনির্ধারিত তফসিলকে স্বাগত জানালেও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের পুনঃতফসিলে সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে।
অবশ্য মনোনয়ন জমার সময় বাড়ায় বিএনপিও তাদের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমার সময় দুই দিন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেছেন। তাদের মিছিল ও অবস্থানের কারণে বিএনপি অফিসের সামনে দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে যানজট।
বিএনপি নেতাদের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমা দেয়া যাবে। ফরম কিনতে লাগবে ৫ হাজার টাকা। আর জমা দেওয়ার সময়ে ২৫ টাকা জামানত দিতে হবে।
সকালের সংবাদ সম্মেলনে রিজভী অভিযোগ করেন, তফসিল ঘোষণার পরও সারাদেশে তাদের নেতা-কর্মীদের ‘নাশকতার মামলা দিয়ে হয়রানি’ করা হচ্ছে। সোমবারও সারাদেশে তাদের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, “এটা নিজস্ব জমিদারি মনে করে জোর করে ভয় দেখিয়ে, গোয়েন্দাদের পাঠিয়ে আপনারা গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করবেন- এটা চলবে না।”
সিলেটের বিশ্বনাথ, ওসমানী নগর, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, ভোলা, পাবনা, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলায় গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের একটি তালিকা তুলে ধরে তাদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান রিজভী।
অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।