ভোট পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন জোটের দাবির পর ভোট এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল পুনঃনির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2018, 06:54 AM
Updated : 12 Nov 2018, 04:57 PM

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, “আমরা তফসিল পুনঃনির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে।”

তফসিল ঘোষণার চার দিনের মাথায় সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম প্রদর্শনীতে সিইসির এই ঘোষণা আসে।

তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন পেছানোর দাবিতে কমিশনে যে চিঠি দিয়েছিল, সে বিষয়ে সোমবার সকালে বৈঠক করে নির্বাচনের দিনক্ষণ পেছানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা।

“তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেটা নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনারদের সাথে আলোচনা করেছি, তারপর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।… এটা নির্বাচন কমিশনের জন্য স্বস্তির বিষয় যে বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।”

এ অনুষ্ঠানে ভোটের নতুন তারিখ ও মনোনয়নপত্র জমার শেখ তারিখ ঘোষণা করলেও মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রত্যাহারের তারিখ পরে ঠিক করা হবে বলে জানান সিইসি।

নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে মতানৈক্যের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি নূরুল হুদা।

সেখানে ২৩ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ধরে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল, ২২ নভেম্বর বাছাই এবং ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ রাখা হয়।

বিএনপির ভোট বর্জনের মধ্যে গঠিত দশম সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি, সেই সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। ফলে তার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির সামনে।

তফসিলের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো মনোনয়নের প্রস্তুতি শুরু করলেও সাত দফা দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি ও তাদের জোট শরিকরা স্পষ্ট ঘোষণা না দেওয়ায় দশম সংসদের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা জাগছিল অনেকের মনে।

তবে রোববার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন ও মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জোটের এক সংবাদ সম্মেলন থেকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলে সেই সংশয় কাটে। পরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলও ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।

তবে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

এদিকে বিএনপির সাবেক নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট তফসিলের পরপরই নির্বাচন সাত দিন পেছানোর দাবি জানিয়েছিল।

আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রাজনৈতিক জোটগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের তারিখ পিছিয়ে দিলে তাতে তাদের আপত্তি থাকবে না।

শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন তফসিল পুনঃনির্ধারণ করে নির্বাচনের জন্য নতুন যে তারিখ ঘোষণা করল, তাতে বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের দাবিই টিকলো। 

যার যা প্রতিক্রিয়া

ভোট সাত দিন পিছিয়ে দেওয়া হলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সরকারের নির্দেশনায়’ নির্বাচন কমিশন ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অন্য দিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং চলতি সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বলেছে, ইসির পুনঃতফসিলে কোনো সমস্যা দেখছে না তারা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তফসিলের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

“বিরোধী দল বা অন্যান্য যারা নির্বাচনে পার্টিসিপেট করেছেন, তাদের দাবিতে যদি নির্বাচন কমিশন তারিখ পেছান, তবে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”

নির্বাচন ও মনোনয়ন জমার তারিখ পেছালেও আওয়ামী লীগ তাদের মনোনয়ন ফরম নেওয়ার কাজ আগের ঘোষণা অনুযায়ী সোমবারই শেষ করবে বলে জানান কাদের।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বলছি ইসির জন্য যে দিনটি কমফর্টেবল হয় সেদিনই নির্বাচন হবে। এখন ৩০ ডিসেম্বর যদি নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত মনে করে নির্বাচন কমিশন, তাহলে তাই হবে।”

যাদের দাবি পুরোপুরি পূরণ হয়েছে, সেই যুক্তফ্রন্টের নেতা বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ভোট সাত দিন পেছানোর সিদ্ধান্তে সিইসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করায় আমরা খুশি হয়েছি। জনমত এবং জনস্বার্থের দুটি বিষয় মনে রেখে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করায় আমি যুক্তফ্রন্ট ও দেশবাসীর পক্ষ থেকে সিইসি ও সকল কমিশনারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”