সোমবার বেলা পৌনে ১১টায় রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির এই কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথমেই খালেদা জিয়ার বাবার বাড়ির আসন ফেনী-১ ( পরশুরাম উপজেলা, ফুলগাজী উপজেলা ও ছাগলনাইয়া ) এর জন্য তার পক্ষে বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
খালেদা জিয়ার আরেক পুরনো আসন বগুড়া-৬ (সদর) এর জন্য তার পক্ষে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
এছাড়া শ্বশুরবাড়ির আসন বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) এর জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষে আরেকটি মনোনয়ন ফরম কেনেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
অষ্টম সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া ফেনী, বগুড়ার এই তিনটিসহ পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে।
বর্তমানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের শিরিন আক্তার ফেনী-১, জাতীয় পার্টির নূরুল ইসলাম ওমর বগুড়া-৬ এবং জাতীয় পার্টির মুহম্মাদ আলতাফ আলী বগুড়া-৭ আসন থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আছেন কারাগারে। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় এবারও তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তবে বিএনপি এবার ভোটে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক উৎসাহ। ধানের শীষ মার্কা নিয়ে ভোট করতে আগ্রহীরা সকাল থেকেই কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নয়া পল্টনে জড়ো হতে শুরু করেছেন। তাদের মিছিল থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা আবদুল্লাহ বলেন, “আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, দেশনেত্রীর প্রতি যে অন্যায় করা হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানাব এর মাধ্যমে। জনগণের কাছে গিয়ে আমরা সরকারের মুখোশ উন্মোচন করব।”
বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অংশগ্রহণের অনিশ্চয়তার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার সিইসি কে এম নূরুল হুদা ২৩ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ধরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
এরপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দলগুলো ভোটের কাজে নেমে পড়লেও বিএনপির স্পষ্ট ঘোষণা না আসায় দশম সংসদ নির্বাচনের বর্জনের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাই উঁকিঝুঁকি মারছিল মানুষের মনে।
কিন্তু রোববার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলন থেকে জোটের প্রধান নেতা কামাল হোসেন ও মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। পরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলও ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় আট বিভাগের আলাদা বুথ থেকে দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হচ্ছে।
মনোনয়ন ফরম কিনতে লাগছে ৫ হাজার টাকা। আর জমা দেওয়ার সময় ২৫ হাজার টাকা জামানত দিতে হচ্ছে। সোমবার ও মঙ্গলবার বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি হবে; মঙ্গল ও বুধবার তা জমা দেওয়া যাবে।
২০০১ সালের নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদে গিয়েছিলেন মির্জা ফখরুল, বিএনপির সেই সরকারে তিনি পেয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।
তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে হেরে যান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জিতে রমেশই এখন ওই আসনের এমপি।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সময় মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবদিন ফারুক, ভিপি জয়নাল আবেদীন, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রেহানা আখতার রানু, মীর সরফত আলী সপু, বেলাল আহমেদ, তাইফুল ইসলাম টিপু সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলবল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে আসায় নয়া পল্টনের সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা জট ছাড়িয়ে রাস্তা খোলা রাখার চেষ্টা করছেন।