ইভিএমের কেন্দ্রগুলোতে সেনাবাহিনী রাখার পরিকল্পনা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে সেই কেন্দ্রগুলোতে সেনাবাহিনী রাখার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2018, 02:01 PM
Updated : 10 Nov 2018, 02:01 PM

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ শনিবার নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “যেসব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে সেই সব যন্ত্র পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনী রাখা হবে। কারণ এটি একটি টেকনিক্যাল বিষয়। টেকনিক্যাল বিষয় এবং আস্থার কথা বিবেচনায় রেখেই এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। তারা কেন্দ্রে অবস্থান করবেন।”

আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিন রেখে গত বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। শহরাঞ্চলে অল্প কিছু এলাকায় ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহারের কথা বলেছেন তিনি। তবে কত সংখ্যক কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে অবস্থান জানালেও তার ঘোর বিরোধিতা করছে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রশ্ন ওঠায় ইভিএম ব্যবহার এবার না করার পক্ষে মত দেয় অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশ।

ইভিএমের কেন্দ্রগুলোতে সেনা সদস্যদের মোতায়েনের বিষয়ে এখনও পরিকল্পনার পর্যায়ে এবং বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি বলে জানান সচিব হেলালুদ্দীন।

তিনি বলেন, “আমরা যদি সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করি এবং তারা যদি রাজি হন, তাহলে ইভিএমের কেন্দ্রগুলোর ওই সব এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিযুক্ত থাকবেন। তাদের আগেভাগে প্রশিক্ষণ দিয়ে সে সমস্ত কেন্দ্রে নিয়োগ করা হবে।”

‘ধানমন্ডিতে মৃত্যুর ঘটনায় ব্যবস্থা’

তফসিল ঘোষণার পর শনিবার ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনায় নির্বাচন কমিশন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব।

হেলালুদ্দীন বলেন, “নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রচার-প্রচারণা, মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ। এখন এটা যদি কেউ করে থাকে কিংবা কোনো দল বা কোনো ব্যক্তি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচারণা চালান, নির্বাচনী প্রচারণা চালান তবে স্বাভাবিকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে।

“আমরা ইতোমধ্যে সব রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি যাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়।তারা আইন লঙ্ঘন বিষয়ে দেখভাল করবেন এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।”

নির্বাচন কেন্দ্র করে যাতে কোথাও কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটে এবং কেউ এখন প্রচারণা চালাতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিইসি ইতোমধ্যে পুলিশ প্রধানকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবার থেকেই ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হচ্ছে। দলবল নিয়ে ফরম তুলছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

শনিবার সকালে মোহাম্মদপুরের নবদোয় হাউজিংয়ে এক মনোনয়ন প্রত্যাশীর অনুসারীদের বহনকারী বাসে প্রতিপক্ষের হামলার পর ওই বাসের চাপায় মৃত্যু হয়েছে দুই কিশোরের।

এ ঘটনার জন্য স্থানীয় সাংসদ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং এবার সেখানে মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের সমর্থকরা পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনা নিয়ে ধানমণ্ডিতে যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকায় চলাচলকারীদের।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইসি সচিব বলেন, “ভোট একটি উৎসব। প্রচার প্রচারণা, নমিনেশন পেপার নেওয়া, জমা দেওয়া এটি একটি নির্দিষ্ট সীমানায় হচ্ছে। এর ফলে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, এটা আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে না।”

সব দলের মতৈক্য হলে নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার জোট শরিকরা নির্বাচনের তফসিলে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন পেছানোর দাবি তুলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, “এখন পর্যন্ত নির্বাচনের তারিখ পেছানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে সব দল একমত হলে নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”

আগামী ২৩ ডিসেম্বর রোববার সংসদ নির্বাচনের ভোট। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১৯ নভেম্বর সোমবার। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ২২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার। আর প্রতীক বরাদ্দ ৩০ নভেম্বর শুক্রবার।

জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে হলে আগামীকাল রোববারের মধ্যে ইসিকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা এ বিষয়ে সময চাইবেন।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান জানতে চাইলে হেলালুদ্দীন বলেন, “এই সময়ের মধ্যে জানানোর জন্য আইনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারপরও যদি তারা সময় চান এবং কমিশন মনে করে তাহলে সেটা কমিশনের বিষয়। কমিশন যদি মনে করে এটি আইনের মধ্যে না কুলায়, তাহলে সময় বাড়াবে না। এটি সম্পূর্ণই কমিশনের সিদ্ধান্ত।

“দলগুলো যদি এই সময়ের মধ্যে তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা অন্য দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে হবে।”