ভোটের যোগ্য ৩৯ দলের কার কী অবস্থান

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে ৩৯টি নিবন্ধিত দল।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2018, 04:48 PM
Updated : 8 Nov 2018, 06:50 PM

পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপির জোট ও বাম জোটভুক্ত অন্তত দুই ডজন দল রয়েছে।

বাকি এক ডজন দল কোনো জোটে নেই। তবে তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন করে আসছে।

আগের নির্বাচনে কে কোথায় ছিল

বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ১২টি দল অংশ নিয়েছিল। 

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ ন‌্যাশনালিস্ট পার্টি-বিএনএফ, বাংলাদেশ ন‌্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও গণতন্ত্রী পার্টি অংশ নিয়েছিল নির্বাচনে।

দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়া দলগুলো হল- বিএনপি, লিবারেল ডেমক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ইসলামী ঐক‌্যজোট, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণ ফোরাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ কল‌্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ ন‌্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে মোট ৩৮টি দল অংশ নিয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১১টি (বিএনএফ ছাড়া) দলসহ আরও ২৭টি দল সেই ভোটে ছিল।

নবম সংসদে ভোটে না থাকার খেলাফত মজলিশ উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে নিবন্ধন বাঁচিয়েছে। এরইমধ্যে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। নবম সংসদ নির্বাচনের পর নিবন্ধন বাতিল হয় জামায়াতে ইসলামীর।

নিবন্ধন চালু হওয়ার আগে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৫টি দল অংশ নিয়েছিল। দেড় যুগ পর ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হয়।

গত আড়াই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম দলের অংশগ্রহণ ছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ১২টি দলের মধ্যে পাঁচটি দলেরই মোট ভোট ১০ হাজারের নিচে।

এবার কে কোন অবস্থানে

বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোটে থাকা নিবন্ধিত দলগুলো একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে জানিয়েছে।

সেগুলো হল- আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি,  বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি-জেপি ও জাতীয় পার্টি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’, সংক্ষেপে ইউএনএ গঠিত হয়েছে সম্প্রতি। এ জোটের শরিকদের কেউ নিবন্ধিত নয়।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে থাকা নিবন্ধিত দলগুলো এখনও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।

বিএনপি বাদে অন্য দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল-জাগপা, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।

নিবন্ধিত দল বাংলাদেশ ন্যাপ সম্প্রতি ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু দলটির একটি অংশ একই নাম নিয়ে ওই জোটে থেকে যায়। 

কামাল হোসেনের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকা গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নিবন্ধন রয়েছে। তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তও এখনও জানানো হয়নি।

এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা গত নির্বাচন বর্জন করলেও এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের মধ্যে নিবন্ধন রয়েছে সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির। তারাও নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত এখনও জানায়নি।

জোটের বাইরে যারা

জোটের বাইরে নিবন্ধিত দলের মধ্যে অন্তত এক ডজন দল রয়েছে। জোটে না থাকলেও আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন করে থাকে এ অনেকে। এরমধ্যে  বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, ইসলামী ঐক্য জোট,  ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাকের পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।

জোটের স্বীকৃতি তফসিলের ৩ দিনের মধ্যে

নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত দলের জোট হলে তাতে ইসির করার কিছু নেই। তবে নিবন্ধিত দলগুলো জোটভুক্ত হয়ে কোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে হলে কমিশনকে জানাতে হবে।

রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরুর পর এখন অনিবন্ধিত কোনো দল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। তবে নিবন্ধিত দলের সঙ্গে জোট বেঁধে তাদের মার্কা নিয়ে অনিবন্ধিত দলের প্রার্থীও ভোট করতে পারে। সেক্ষেত্রে অনিবন্ধিত দলের ওই প্রার্থী কাগজে কলমে মনোনয়নদাতা নিবন্ধিত দলের প্রার্থী হিসেবেই গণ্য হন।

দলীয় প্রার্থিতার বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সুযোগ রয়েছে।