রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক থাকলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে শহরাঞ্চলের কিছু কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।
Published : 08 Nov 2018, 07:02 PM
বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার ভাষণে তিনি বলেছেন, “শহরগুলোর সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা থেকে দ্বৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় বেছে নেওয়া অল্প কয়েকটিতে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে।”
আগামী ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনে সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র ৪০ হাজার ১৯৯টি। এর মধ্যে কতটিতে ইভিএম ব্যবহার হবে, তা স্পষ্ট হয়নি সিইসির ভাষণে।
এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে ইসি এগিয়ে চলার পথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকলেও ঘোর বিরোধিতা ছিল বিএনপিসহ তার মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর। তাদের দাবি, এতে ‘ডিজিটাল কারচুপি’ হবে।
এই অবস্থায় এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার আহ্বান ছিল আওয়ামী লীগের মিত্র দল জাতীয় পার্টিরও।
ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে সিইসি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ইভিএম ব্যবহার করা গেলে নির্বাচনের গুণগত মান উন্নত হবে এবং সময়, অর্থ ও শ্রমের সাশ্রয় হবে।
“জেলা এবং অঞ্চল পর্যায়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে ইভিএমের উপকারিতা সম্পর্কে ভোটারগণকে অবহিত করা হয়েছে। ইভিএম ব্যবহারে তাদের মধ্যে উৎসাহব্যঞ্জক আগ্রহ দেখা গিয়েছে।”
এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ ভোট গ্রহণে ইভিএম ব্যবহার ‘সফল হয়েছে’ বলে ভাষণে উল্লেখ করেন নূরুল হুদা।
আট বছর ধরে স্থানীয় নির্বাচনে ব্যালট পেপারের পাশাপাশি যন্ত্রে ভোটগ্রহণ চালু হলেও সংসদ নির্বাচনে এবারই তা প্রথম ব্যবহার হতে যাচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য নির্বাচনী আইন সংশোধনের প্রয়োজন ছিল। নানা বিতর্কের মধ্যে সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে সেই আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কিন্তু ততদিনে সংসদ অধিবেশন শেষ হয়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন কার্যকর করা হয়। এতে খোলে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পথ।
এবার সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার সুযোগও রাখা রয়েছে।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম
ইভিএম ও অনলাইনের বিষয়টি যুক্ত করে সংশোধিত নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ও ইভিএম বিধিমালাও ইতোপূর্বে জারি করে ইসি।
ইভিএম ব্যবহার শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে; সেবার স্বল্প পরিসরে যন্ত্রে ভোটগ্রহণ হয়েছিল।
ওই নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম ২০১৫ সালের এসে বন্ধ হয়ে যায়।পরবর্তীতে ডিজিটাইজড সুবিধা সম্বলিত নতুন ইভিএম তৈরি করে ইসি, যা ২০১৬ সালে রংপুর সিটি নির্বাচনে ব্যবহার হয়। তার দুই বছরের মাথায় সংসদে নতুন প্রযুক্তিটি চালু হচ্ছে।
সংশোধিত নির্বাচনী আইনে ইভিএমের ‘অপব্যবহার’ করলে সর্বনিম্ন তিন বছর এবং সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
ইভিএম হ্যাকিং নিয়ে যে সন্দেহ উঠেছে, তা নিরসনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়।
ইভিএমের পক্ষে বড় যুক্তি দেখানো হচ্ছে, এতে কাগজের ব্যালট ছাপানোর খরচ কমে, ভোট দেওয়া যায় সহজে এবং ফলাফল পাওয়া যায় সঙ্গে সঙ্গে।
ইভিএমে ভোট যেভাবে হয়
স্থানীয় নির্বাচনে এ ইভিএম ব্যবহার হয়েছে রংপুর, খুলনা, গাজীপুর ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে।
আঙ্গুলের ছাপ, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা স্মার্ট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোটার শনাক্ত করা হয়।
নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটকক্ষে একজন করে ভোটার ভেরিফিকেশন করেন পোলিং অফিসার।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ
ডেটাবেইজে ভোটার বৈধ হিসেবে শনাক্ত হলেই ভেরিফিকেশনের সঙ্গে যুক্ত প্রজেক্টের মাধ্যমে তা পোলিং এজেন্টের কাছে দৃশ্যমান হবে।
মেশিনটিতে কুইক রেসপন্স কোড QR CODE সহ আরও কিছু তথ্য সম্বলিত টোকেন মুদ্রণ করে ভোটারকে দেওয়া হয়।
ভোটার টোকেন নিয়ে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে এলে ভোটিং মেশিনের QR CODE স্ক্যানারের মাধ্যমে শনাক্ত করে গোপন কক্ষে থাকা তিনটি পদের জন্য ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ইস্যু করা হবে।
ভোটার পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক দেখে বাম দিকে বোতামে চাপ দিয়ে সিলেক্ট করবেন এবং ওই ব্যালট ইউনিটের সবুজ রংয়ের CONFIRM বোতাম চেপে তার ভোট শেষ করবেন।
কখনো ভুলবশত কোনো প্রতীক সিলেক্ট করা হলে, ব্যালট ইউনিটের লাল রংয়ের CANCEL বোতাম চেপে পরবর্তীতে যে কোনো প্রার্থীকে আবার সিলেক্ট করা যাবে।
এভাবে দুই বার CANCEL করা যাবে, তৃতীয়বার যেটি সিলেক্ট করা হবে সেটি বৈধ ভোট হিসেবে গৃহীত হবে।
ইভিএম সংক্রান্ত খবর