বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণায় আওয়ামী লীগের সমর্থন

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আপত্তি জানালেও বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় সমর্থন জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকজ্যেষ্ঠ প্রতিবদেক ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2018, 10:57 AM
Updated : 7 Nov 2018, 01:26 PM

সংলাপ চললেও রাজনৈতিক মতভেদ না ঘোচার মধ্যে বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।

তার আগের দিন বুধবার নির্বাচন ভবনে গিয়ে সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের অবস্থান জানায় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। ১৬ সদস্যের এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম।

আওয়ামী লীগের আগে বিভিন্ন দল ইসিতে গিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে এসেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক জোট সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে তফসিল না পেছানোর দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টি ও যুক্তফ্রন্ট। 

ইসিতে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, তফসিলের বিষয়ে ইসি যে সিদ্ধান্ত নেবে তার প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে।

“নির্বাচন কবে, কখন হবে, তা ইসি নির্ধারণ করবে। বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার কথা ইসির, তাতে সরকারের পক্ষ থেকে সমর্থন রয়েছে আমাদের। ইসি স্বাধীন, সাংবিধানিক ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। আমরা তফসিল আগানো বা পেছানোর কথা বলিনি। যখনই কমিশন তফসিল দেবে, তা আমরা সহযোগিতা করে যাব।”

তফসিল না পেছালে আন্দোলনের যে হুমকি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রয়েছে তা নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ইমাম।

তিনি বলেন, “আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন কমিশন তাদের বিষয়টি দেখবে; সাধারণ মানুষ তা মোকাবেলা করবে।”

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল আপত্তি জানালেও ভোটারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সীমিত আকারে তা ব্যবহারের পক্ষে মত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

সেনা মোতায়েন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ইমাম বলেন, বৈঠকে সেনা মোতায়েন নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে অতীতে যেভাবে সেনা মোতায়েন হয়েছে, এবারও সেভাবেই রাখার পক্ষে মত আওয়ামী লীগের।

“আমরা সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে নই। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার অধীনে তা মোতায়েন থাকবে। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে থাকবে, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে তা নিয়োজিত হবেন।”

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল নারী ভোটারদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক বুথ রাখার সুপারিশ করেছে। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীরা যাতে সুবিধামতো ভোট দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করার আহ্বানও জানান তারা।

বিকালে ইসির সম্মেলন কক্ষে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, “আমাদের নির্বাচন পরিচালনায় কোনো বিষয় যদি আপনাদের কাজে আসে, সে বুদ্ধি আপনারা দিতে পারেন। আমাদের কোনো কথাও যদি আপনাদের কাজে লাগে, সেটা আমরা বলব।”

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রাশিদুল আলম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন, রিয়াজুল কবীর কাওছার, গোলাম রাব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পপি, কেন্দ্রীয় নেতা তানভীর ইমাম, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী, এনামুল হক চৌধুরী, সেলিম মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমান বাবলা।

বেসরকারি কর্মকর্তাদের নিতে মানা

বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাছাইয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল

এইচ টি ইমাম জানান, ৩০০ আসনের ভোটে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ছাড়াই প্রায় ৭ লাখ লোকবল দরকার পড়ে। এ বিশাল লোকবল নিয়োগে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

৪০ হাজারের বেশি কেন্দ্রের প্রতিটিতে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়ে এ সাত লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দরকার হয়।

“আমরা বলেছি, কোনোভাবেই বেসরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও কর্মকর্তাদের যেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া না হয়। এ বিষয়ে কমিশন একমত হয়েছেন,” বলেন ইমাম।

সেই সঙ্গে নির্বাচনে দেশি পরর্যবেক্ষক সংস্থা ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছে  ক্ষমতাসীন দলটি।

ইমাম বলেন, “বিদেশি টুরিস্ট ভিসায় আসা কাউকে যেন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া না হয়; অনিবন্ধিত সংস্থার কেউ যেন নিয়োগ না পায়। নীতিমালা মেনেই যেন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।”

‘অমার্জিত বক্তব্য সহ্য করা হবে না’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ইসির সঙ্গে বৈঠকে ‘কুরুচিপূর্ণ’ বক্তব্য দিয়েছে দাবি করে এইচ টি ইমাম বলেন, এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবে সহ্য করা হবে না।

নির্বাচন ভবনে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল

“স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে হেয় প্রতিপন্ন করে অমার্জিত ভাষায় সংলাপে বক্তব্য দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের অনেকে। কেউ কেউ তর্জনি উঠিয়ে কমিশনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন। এ ধরনের বক্তব্যের ধিক্বার জানাই। এর সমুচিৎ জবাব দেওয়া হবে ভোটে।”

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম উল্লেখ না করে তাকে ইঙ্গিত করে এইচ টি ইমাম বলেন, “ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে অনেকে রয়েছে অনিবন্ধিত দল। যার মধ্যে অনেক অনিবন্ধিত দলের নেতৃবৃন্দ ছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন যেভাবে অমার্জিত এবং কুরুচিপূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাতে জনগণ বিস্মিত ও হতবাক হয়েছে।”

আলোচনায় আওয়ামী লীগ নেতারা অনিবন্ধিত দলের সঙ্গে বৈঠক না করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেন, “অনিবন্ধিত দলের সঙ্গে সংলাপ না করার পরামর্শ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিষয়টি আপনাদের অবহিত করলাম।

“উনারা (আওয়ামী লীগ) পরামর্শ দিয়েছে। তবে কার সঙ্গে সংলাপ করবে না করবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশনই।”

বুধবারের পর থেকে কমিশন যাতে আর কারও সঙ্গে নতুন করে সংলাপে না বসে, সেই পরামর্শ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে কখনও কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করে আসছে।”