বাংলাদেশে মুক্ত সাংবাদিকতার চর্চার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের ‘মালিকদেরই’ মূল সমস্যা মনে করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।
Published : 23 Oct 2016, 09:42 PM
‘মান্ধাতা আমলের বিজ্ঞাপন নীতিতে জনগণের অর্থের অপচয়’
কপিরাইট লঙ্ঘন: ‘এবার আইনি লড়াই’
‘দুর্দান্ত ১০ বছর’ উদযাপনের সঙ্গী স্পিকার, তথ্যমন্ত্রী, বিএনপি মহাসচিব
রোববার দেশের প্রথম এই ইন্টারনেট সংবাদপত্রের দশক পূর্তির অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অঙ্গনের শীর্ষ ব্যক্তিদের সামনে তৌফিক ইমরোজ খালিদী তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “সমস্যাটা মালিকানায়। দেশে যে ধরনের ব্যক্তিরা সংবাদমাধ্যমের মালিকানায় রয়েছেন, সে বিষয়টিই মুক্ত গণমাধ্যমের পথে বাধা তৈরি করছে।”
তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, তার দেখায়, বাংলাদেশে সাংবাদিকরা তুলনামূলকভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আসলে কী, এই স্বাধীনতা কার- এ বিষয়গুলো এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি মালিকানা ও অনুমোদন প্রক্রিয়াকে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের দুটি দুর্বল জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং রাজনৈতিক এজেন্ডা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে নিজেদের চেষ্টার কথা বলেন।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে অবস্থান বিশদ করতে গিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক বলেন, সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন ধরনের ‘ফোন’ আসে, তিনি নিজেও তা পান।
“সরকার বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন- সেটাই স্বাভাবিক। এছাড়া আরও কেউ কেউ থাকে, যারা হস্তক্ষেপ করতে চান। তাদের চেষ্টা তাদের করতে দিন। এই দেশে তো কোনো কিছুই নিখুঁত নয়। কীভাবে ট্রাফিক সমস্যা সামলানো যায়, তার সমাধান আমরা এখনও বের করতে পারিনি।
“আমার বক্তব্য হল, সাংবাদিক হিসেবে আমাদের কাজটা আমাদের করতে হবে। রাষ্ট্রের সেই ‘অন্য ব্যক্তিদের’ কীভাবে সামলানো যায়, তা আমাদের শিখতে হবে, নিজেদের সেভাবে তৈরি করতে হবে।”
কেন বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম তা পারছে না? এই প্রশ্নের উত্তরে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলছেন ‘মালিকানার সমস্যার’ কথা।
“উত্তরটা খুবই সোজা। মালিকানা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সব আলোচনাতেই আমি এ কথাটা বলি, তা সেটা দেশে হোক, বা বিশ্বের অন্য যে কোনো স্থানে।”
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যেমন পাঠক, দর্শক ও শ্রোতাদের কাছে দায়বদ্ধ, তেমনি রাজনীতিবিদদেরও জনগণের কাছে জবাবদিহি করার কথা। সংবাদ পেশাজীবীরা যখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতার চর্চা করেন, তারা জনগণেরই প্রতিনিধিত্ব করেন।
“তারাই (রাজনীতিবিদ) আমাদের নেতা। কিন্তু আমরা যখন জনগণের হয়ে কোনো প্রশ্ন করি, তার উত্তর তাদের দিতে হবে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের অপরিবর্তনীয় সমর্থনের কথা সবারই জানা।”
এ প্রসঙ্গে তিন বছর আগে র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের এই মঞ্চেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেওয়া নিজের বক্তব্য থেকে স্মরণ করেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
“রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া গণমাধ্যমের কাজ নয়। রাষ্ট্রক্ষমতা বদলের কোনো প্রক্রিয়ায় কোনো সংবাদমাধ্যমের জড়িয়ে পড়া আমরা সমর্থন করি না। রাজনীতির সংবাদ আমরা পরিবেশন করি, বিশ্লেষণ বা মন্তব্যও তুলে আনি, কিন্তু সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া আমাদের কাজ নয়।
“কেউ যখন ‘তৃতীয় শক্তির’ কথা বলে- আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, তারা তৃতীয় একটি রাজনৈতিক শক্তি নিয়েই কথা বলছেন। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে তৃতীয় কোনো শক্তিকে আমরা কখনো সমর্থন করিনি। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সুরক্ষার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। আর গণমাধ্যমকেও তা সমর্থন করার মতো অবস্থানে থাকতে হবে। কারণ এতে আমাদেরও স্বার্থ জড়িত। সঠিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ছাড়া মুক্ত ও কার্যকর গণমাধ্যম টিকে থাকতে পারে না।”
সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে যাওয়া বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদের একটি বক্তব্যের সঙ্গে একমত হওয়ার কথা জানিয়ে তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের মত দেশের আরও পরিপক্ক ও স্পর্শকাতর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা থাকা প্রয়োজন।
“আমি জানি, সংবাদ পেশাজীবীদের মান নিয়ে আপনাদের অনেকের অভিযোগ রয়েছে। যে স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তি প্রকাশ্যে এই সমালোচনা মানতে রাজি আছেন, আমি তাদের একজন। আমি স্বীকার করি, গঠন নিয়ে যখন কথা হয়, তখন কাঙ্ক্ষিত মান নিশ্চিত করতে কিছু ক্ষেত্রে আমরাও ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু তথ্য পুরোপুরি ভিন্ন বিষয়।
“যখন তথ্যের সত্যতার প্রশ্ন আসে, সেখানে আপসের কোনো সুযোগ নেই। তথ্যের সত্যতা ও সাংবাদিকতায় নৈতিকতার মান নিশ্চিত করার জন্য সম্পাদকীয় নজরদারিতে আমরা বড় পরিসরে বিনিয়োগ করে যাচ্ছি।”
আমরা যখন প্রতিশ্রুতি দেই যে সংবাদকে বিজ্ঞাপনের সঙ্গে মেলাবো না, আমরা সে কথা রাখি।... সমস্যা হল, সেজন্য আয়ের অংক থেকে বড় একটি অংশ আমাদের হারাতে হয়।”
২০০৬ সালে পাঠকদের জন্য ২৪ ঘণ্টা দেশ-বিদেশের সর্বশেষ ঘটনার খবর বাংলা ও ইংরেজি- দুই ভাষায় বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ নিয়ে আসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম গত এক দশকে নিয়মিত উপহার দিয়েছে নতুন নতুন সংবাদ সেবা।
প্রতি মাসে দশ কোটি পেইজ ভিউ এবং এক কোটি ইউনিক ভিজিটর নিয়ে পরিণত হয়েছে একক পাঠক সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংবাদ মাধ্যমে; পাঠকের কাছে বিবেচিত হচ্ছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সংবাদ প্রকাশক হিসেবে।