‘দুর্দান্ত ১০ বছর’ উদযাপন

‘ডটকম’ জগতে বাংলাদেশের সংবাদকে নিয়ে যাওয়ার দিশারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পূর্ণ করল ১০ বছর, যা উদযাপনে সঙ্গী হলেন বাংলাদেশের সব অঙ্গনের নেতৃস্থানীয় ব‌্যক্তিরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2016, 02:25 PM
Updated : 23 Oct 2016, 02:25 PM

সরকার আর রাজনৈতিক দলের নীতি-নির্ধারক; বিচারপতি-আইনজীবী, ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা, কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী-সংগঠক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা আর নানা ক্ষেত্রে বাঁক বদলের সাক্ষীদের অংশগ্রহণে রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হয়ে উঠেছিল মিলনমেলা।

নানা আয়োজনে সাজানো আনন্দঘন এই অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে হাসি আর কথায় মেতে উঠেছিলেন রাজনীতিকরা। কূটনীতিকদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখরা অনুষ্ঠানে দেন অন‌্য মাত্রা।

 

সন্ধ‌্যার পর থেকেই র‌্যাডিসনের বলরুমে উপস্থিত হতে শুরু করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা, শুভেচ্ছা জানান বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্রের কর্ণধারদের।

জাতীয় সঙ্গীতের মধ‌্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরুর পর বক্তৃতা পর্বে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশে গণমাধ‌্যমের বিকাশের সমস‌্যা এবং ইন্টারনেট সংবাদ মাধ‌্যমের সম্ভাবনার দিকটি তুলে ধরেন।

তার দেখায়, বাংলাদেশে সাংবাদিকরা তুলনামূলকভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন। গণমাধ‌্যমের স্বাধীনতা আসলে কী, এই স্বাধীনতা কার- এ বিষয়গুলো এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

“সমস‌্যাটা মালিকানায়। দেশে যে ধরনের ব‌্যক্তিরা সংবাদমাধ‌্যমের মালিকানায় রয়েছেন, সে বিষয়টিই মুক্ত গণমাধ‌্যমের পথে বাধা তৈরি করছে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার পুরনো ঘরানার সংবাদমাধ‌্যমে বিজ্ঞাপনের পেছনে অনেক বেশি অর্থ ব‌্য‌য় করছে। এই বিজ্ঞাপন নীতি কেবল অবাস্তবই নয়, মান্ধাতা আমলেরও বটে।”

বক্তৃতার ফাঁকেই ২০০৫ সালে ইন্টারনেট সংবাদপত্র হিসেবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের যাত্রা শুরু এবং এই পথ চলার তথ‌্য উপস্থাপন করা হয়।

প্রধান সম্পাদকের বক্তৃতা পর্বের পর সবাই মিলে মঞ্চে কেক কাটার মধ‌্য দিয়ে ‘দুর্দান্ত ১০ বছর’ পূর্তি উদযাপন করেন। এরপর ছায়ানটের শিল্পীদের ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গাওয়ার মধ‌্য দিয়ে অনুষ্ঠানের যবনিকা ঘটলেও তার মধ‌্য দিয়ে দশক পেরিয়ে নতুন পথচলার শুরু করল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

এই আয়োজনে সঙ্গী হয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “অনলাইন সংবাদ মাধ্যম হিসেবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী

তথ‌্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখে সাংবাদিকতার কঠিন কাজটি করে যাওয়ার জন‌্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশংসা করেন।

তথ‌্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তুলে ধরেন কীভাবে তার প্রতিদিন শুরু হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মাধ‌্যমে এবং দিনের শেষটাও হয় একই ভাবে।

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আলাপে তথ‌্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এডিএনের কর্ণধার আসিফ মাহমুদ

অনুষ্ঠানে জাসদের সভাপতি ইনু এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস‌্য পলকের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের হাসিমুখে আলোচনায় রাজনীতির বিরোধ ব‌্যবধান গড়তে পারেনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের দশক পূর্তির অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর এই ছবি রাজনৈতিক সম্প্রীতির নজির হয়ে ওঠে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্থায়ী কমিটির সদস‌্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় নেতা আফরোজা আব্বাস, খায়রুল কবির খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল।

মির্জা ফখরুল প্রতিকূলতার মধ‌্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখার প্রশংসা করেন।

এই বস্তুনিষ্ঠতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম অব‌্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার সঙ্গে অ‌্যারোমা দত্ত

 

মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির, সমাজকর্মী অ‌্যারোমা দত্ত, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব‌্যুনালের আইনজীবী তুরিন আফরোজ, বাংলাদেশের একাত্তরের বন্ধু জুলিয়ান ফ্রান্সিস, মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ সাদিক সঙ্গী হন এই আনন্দ আয়োজনে, ছিলেন সর্বোচ্চ আদালতের কয়েকজন বিচারকও।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের দশক পূর্তির অনুষ্ঠানে অন্য অতিথিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বার্নিকাট।

অনুষ্ঠানে নীল শাড়িতে উপস্থিত হয়ে সবার দৃষ্টি কাড়েন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। তার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়ের মায়াদন, আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির বাংলাদেশ মিশন উপপ্রধান বরিস কেলিসেভিস, জার্মানির ঢাকা মিশনের উপপ্রধান মিশায়েল শুলথেইস এবং উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত রি সং হিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্রের দশক পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

কর্মস্থল বাংলাদেশে সংবাদের উৎস হিসেবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের উপর ভরসার কথা জানান বার্নিকাট। মায়াদনও বলেন, তিনি নিয়মিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম দেখেন।

বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে হিসেবে খ‌্যাতি নিয়ে রাজনীতিতে আসা সারাহ বেগম কবরী ছিলেন অনুষ্ঠানের আকর্ষণ হয়ে।  

ঢাকাই চলচ্চিত্রের মিষ্টিমুখ কবরীর উপস্থিতি পুরো অনুষ্ঠানেই আলো ছড়ায়।

জনপ্রশাসন সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব জয়নাল আবেদীনসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ছিলেন অনুষ্ঠানে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম‌্যান কাজী আমিনুল ইসলাম, কূটনীতিক শাহেদ আক্তার ও নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব মো. জকরিয়াও ছিলেন।

প্রধান তথ‌্য কর্মকর্তা এ কে এম শামীম চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টিভির ব‌্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, ডিবিসি টিভির প্রধান সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহেদ মালেক ছিলেন ইন্টারনেট সংবাদপত্রের এই অনুষ্ঠানে।

ছিলেন বিটিআরসির চেয়ারম‌্যান শাহজাহান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম‌্যান আহসান হাবিব খান, কমিশনার জহুরুল হক, সচিব সারওয়ার আলম, তথ‌্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ খান।

বিটিআরসির চেয়ারম‌্যান শাহজাহান মাহমুদ

ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক খালেকুজ্জামান ইলিয়াস, অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, অধ‌্যাপক এম এ তসলিম, অধ‌্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক নাদির জুনায়েদ, ফারুক মাইনুদ্দিন, মানস চৌধুরী যোগ দেন এই আনন্দ আয়োজনে।

সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “অনলাইন পত্রিকার বিডিনিউজ একটি মাইলফলক। ইতোমধ্যে গ্রহণযোগ্যতার শীর্ষে এবং সব ধরনের মানুষের কাছে বিশ্বস্ত নাম।”

বিজিএমইএ-এর সাবেক প্রথম সহ সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব, এডিএনের চেয়ারম‌্যান আসিফ মাহমুদ ও তার স্ত্রী রুমানা চৌধুরী, বারভিডার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবরসহ বেশ কয়েক ব‌্যবসায়ী নেতা যোগ দেন এই অনুষ্ঠানে। ছিলেন ব্র্যাকের আসিফ সালেহ, বীনা খান।

সামরিক বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তার পাশাপাশি ছিলেন র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান, পুলিশের ডিআইজি (মিডিয়া) শহিদুর রহমান, ডিএমপির উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান।

বাংলাদেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের ইমাম মওলানা ফরীদউদ্দীন মাসঊদও এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

অতিথিদের নিয়ে এই কেক কাটেন প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী

চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী আলিমুল্লাহ খোকন, অভিনেত্রী বন্যা মির্জা, ইরেশ যাকের, সাবরিনা সুলতানা কেয়া, সঙ্গীত শিল্পী টিনা মোস্তারী ছিলেন অনুষ্ঠানে।

আহারে অতিথিরা

বেঙ্গল গ্রুপের কর্ণধার আবুল খায়ের লিটু, চিত্রশিল্পী সব‌্যসাচী হাজরা, ডিজাইনার লিপি খন্দকার, বিপ্লব সাহা, শাহরুখ আমিন, বিনোদন টোয়েন্টিফোর সম্পাদক মঈনুল হক রোজ, রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভিন, লুৎফা আহমেদ, গুলশান নাসরিন চৌধুরী এই আনন্দ আয়োজনে সঙ্গী হন।

অনুষ্ঠানে অতিথিদের অভ‌্যর্থনা জানান আর্টস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, জ‌্যেষ্ঠ সম্পাদক আমানুল্লাহ কবীর ও সৈয়দ বদরুল আহসান।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা

এই অনুষ্ঠানটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

অনুষ্ঠানস্থল বলরুমের সামনে বিভিন্ন সময়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত অন্তত ৫০টি আলোকচিত্র ৩০টি ফ্রেমে সাজিয়ে রাখা হয়। এর মধ্যে উঠে আসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পাশাপাশি আলোচিত নানা ঘটনাবলি।

২০০৭ সালের আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারের আলোকচিত্র ছিল এর মধ‌্যে।

জাতীয় সঙ্গীতে শুরু হয় অনুষ্ঠান

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হিলারি ক্লিনটনের ২০১২ সালে বাংলাদেশে আসার মুহূর্তটিও ছবিঘরে সাজানো ছিল। ছিল যুক্তরাজ‌্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, ফুটবলার লিওনেল মেসির ছবিও।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম পরিবার

২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ বিহারের হামলা, ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংঘর্ষ, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশসহ নানা চিত্র ফ্রেমবন্দি হয়েছে এই অনুষ্ঠানে। নিজের শেষ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে থাকা হুমায়ুন আহমেদের ছবিও রয়েছে সেখানে।

বলরুমে প্রবেশ পথেই ডিজিটাল স্ক্রিনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পথ-পরিক্রমার অংশবিশেষ তুলে ধরা হয়।