ইতিহাসের দুয়ারে কড়া নাড়ছেন হিলারি

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে দুই যুগের বেশি সময় ধরে তার বিচরণ; ফার্স্ট লেডি, সিনেটর এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকায় তাকে দেখেছে বিশ্ব। হিলারি ক্লিনটন এবার লড়ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন‌্য।

মীর মোশাররফ হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2016, 02:34 AM
Updated : 8 Nov 2016, 09:49 PM

হিলারি ৩০ বছর বয়সে যখন যুক্তরাষ্ট্রের রোজ ল ফার্মে যোগ দেন, তিনি ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রথম নারী সহযোগী। ৫৩ বছর বয়সে তিনিই নিউ ইয়র্ক থেকে প্রথম নারী হিসেবে সিনেটর নির্বাচিত হন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৬৯ বছর বয়সী এই নারী ইতিহাস গড়তে পারবেন কি না, তা জানা যাবে মঙ্গলবার। 

ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহর শিকাগো থেকে ১৫ মাইল উত্তরপশ্চিমে পার্ক রিজ শহরে ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর হিলারির জন্ম। বাবা হিউ রডহ্যাম ছিলেন নৌবাহিনীতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন।

রিপাবলিকান দলের সমর্থক হিউ নৌবাহিনী ছাড়ার পর কাপড়ের ব‌্যবসায় মনোযোগ দেন। মা ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে হিলারিও সময় দিয়েছেন সেই কাপড়ের দোকানে।

ইলিনয়ের মেইন ইস্ট হাই স্কুলে চার বছর পড়েন হিলারি। এক বছর পড়েন মেইন সাউথ হাই স্কুলে। ছিলেন গার্ল স্কাউট। স্কুলে মেয়েদের সফটবল লীগেও খেলেছেন।

মা ডরোথি এমা হাউয়েল রডহ্যামের সঙ্গে প্রতি রোববার চার্চে যেতেন হিলারি। সেই সময়ের চার্চের শিক্ষা যে পরবর্তী জীবনে নানাভাবে পথ দেখিয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে তা বারবার ভোটারদের বলেছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই প্রার্থী।

তারুণ‌্যে বাবার মতই রিপাবলিকান ঘরানার দিকে ঝোঁক ছিল হিলারির। ১৯৬৪ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন নিতে আগ্রহী ব্যারি গোল্ড ওয়াটারের প্রচারেও অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৬৮ সালে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের বক্তব্য শুনে বদলে যায় রাজনীতির পাঠ। ওই বছরই যুক্ত হন ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে।

হাইস্কুল শেষে হিলারি ভর্তি হন ওয়েলেসলি কলেজে। সেখানেই জড়িয়ে পড়েন সমাজ সংস্কার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে।

১৯৬৯ সালে ওয়েলেসলি কলেজের সিনিয়র ক্লাস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন। একই বছর কলেজের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে বক্তৃতা দিতে তাকেই বাছাই করেন সহপাঠীরা। কলেজে পড়ার সময় হিলারি একবার লাইফ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও স্থান পেয়েছিলেন।

এরপরই হিলারি যোগ দেন ইয়েল ল স্কুলে। আইনের সেই স্কুলের লাইব্রেরিতেই ভবিষ্যৎ স্বামী বিল ক্লিনটনের সঙ্গে তার পরিচয়।

ল স্কুলে পড়ার সময় অভিবাসী খামারী ও তাদের সন্তানদের নিয়ে গবেষণা করেন হিলারি, যা পরে তাকে শিশু অধিকার বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী করে তোলে।

১৯৭১ সালে ওয়াশিংটনে এসে হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর ওয়াল্টার মানডেলের অভিবাসী বিষয়ক সাব-কমিটিতে কাজ নেন। পরের বছর ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জর্জ ম্যাকগোভার্নের হয়ে পশ্চিমের রাজ্যগুলোতে যান প্রচারের কাজে।

১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করার পর হিলারি ইয়েল চাইল্ড স্টাডি সেন্টারে ভর্তি হন। সেখানে শিশু ও মেডিসিন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। সে সময় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিবন্ধিতার কারণে স্কুলের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে তাকে। তার ওই চেষ্টার পথ ধরেই পরে মার্কিন কংগ্রেস প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে আইন করে।

ওয়াটারগেইট কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের অভিশংসন প্রক্রিয়ায় কাজ করা জুডিশিয়ারি কমিটিতেও ছিলেন হিলারি। ১৯৭৪ সালে সেই বিচার চলাকালেই ‘অনৈতিক পেশাদারী আচরণের’ কারণে চিফ কাউন্সেল জেরি জেইফম্যান তাকে বরখাস্ত করেন। সে সময় ঘটনাটি নিয়ে সংবাদমাধ‌্যমে পরষ্পরবিরোধী সব তথ্য আসে। হিলারি নিজে এ নিয়ে কখনো মুখ খোলেননি।

হিলারি রডহ্যাম থেকে হিলারি ক্লিনটন

হিলারি যখন ইউনিভার্সিটি অব আরকান’স ল স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন, বিল ক্লিনটনও তখন একই স্কুলে, একই পেশায়। ১৯৭৫ সালের ১১ অক্টোবর বিয়ে হয় তাদের। হিলারি রডহ্যাম তখন থেকে হয়ে ওঠেন হিলারি ক্লিনটন।

১৯৭৬ সালে জিমি কার্টারের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন হিলারি। ডেমোক্রেট প্রার্থী কার্টার সেবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ওই বছরই বিল ক্লিনটন হন অ‌্যাটর্নি জেনারেল।

১৯৭৭ সালে রোজ ল ফার্মে কাজ শুরুর পর একই বছর প্রেসিডেন্ট কার্টারের প্রতিষ্ঠিত লিগ্যাল সার্ভিস করপোরেশনের খণ্ডকালীন সভাপতি হন হিলারি। আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে পরে তিনি গড়ে তোলেন শিশু অধিকার রক্ষায় রাজ‌্যের প্রথম অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ‘আরকানস’ অ্যাডভোকেটস ফর চিলড্রেন অ্যান্ড ফ্যামিলিজ’।

বিল ক্লিনটন আরকান’সর প্রথম গভর্নর হওয়ার পর রাজ‌্যের ফার্স্টলেডি হিসেবে হিলারি পিছিয়ে পড়া স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারে মনোযোগী হন। ১৯৮০ সালে তাদের পরিবারে আসে নতুন মুখ। জনি মিশেলের গান ‘চেলসিজ মর্নিং’ থেকে মেয়ের নাম রাখেন তারা চেলসি।

এক যুগ ধরে রাজ্যের ফার্স্টলেডি থাকাকালে হিলারি আরকান’সর শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভাপতি, আরকান’স’ চিলড্রেন হাসপাতাল, লিগ্যাল সার্ভিস ও চিলড্রেন ডিফেন্স ফান্ডের বোর্ড সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ ও ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ল জার্নাল যে একশ প্রভাবশালী আইনজীবীর নাম প্রকাশ করে, সেখানে হিলারিও ছিলেন।

হোয়াইট হাউজ

বিল ক্লিনটন ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডি হিসেবে হিলারি সব নাগরিককে সাধ্যের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা দিতে নতুন লড়াই শুরু করেন; যোগ দেন প্রেসিডেন্টের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার বিষয়ক টাস্কফোর্সে।

বীমা কোম্পানি ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অন্য কোম্পানিগুলোর বিরোধিতার মুখে তার দেয়া সংস্কার প্রস্তাব কংগ্রেসের দুই কক্ষেই প্রত্যাখ্যাত হয়। তবু হাল ছাড়েননি হিলারি।

১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে নারীদের নিয়ে জাতিসংঘের চতুর্থ বিশেষ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন হিলারি।

প্রথম দফা হোয়াইট হাউজে থাকার সময় ক্লিনটন ও হিলারি হোয়াইট ওয়াটার রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন। ওই বিনিয়োগের কারণে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রায় ৭৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এ নিয়ে পরে কংগ্রেসের শুনানিতে মুখোমুখি হতে হয়েছিল হিলারিকে।

১৯৯৬ সালে বিল ক্লিনটন আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ফার্স্টলেডি হিলারি রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট সিনেটরদের নিয়ে তৈরি করেন শিশুদের স্বাস্থবীমা প্রকল্প। চিলড্রেনস হেলথ ইনস্যুরেন্স প্রোগ্রাম (সিএইচআইপি) নামের ওই প্রকল্প ছিল ১৯৬৫ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নেওয়া প্রথম বিস্তৃত স্বাস্থ্যবীমা।

প্রকল্পের শুরুতেই বীমার আওতায় না থাকা তৎকালীন অর্ধেক শিশুকে স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রকল্পটির অধীনে ২০১৬ পর্যন্ত ৮০ লাখ শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয় বলে হিলারির নির্বাচনী প্রচার শিবিরের দাবি।

বিল ক্লিনটনের মনিকা লিউয়েনস্কি কেলেঙ্কারির সময় হিলারি জনসম্মুখে স্বামীর পক্ষে বললেও ভেতরে ভেতরে বিচ্ছেদের কথা ভেবেছিলেন, পরে যা নিজেই বলেছেন তিনি। বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে সে সময় অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হলেও কংগ্রেসে সমর্থনের অভাবে তা মুখ থুবড়ে পড়ে।

সিনেটর হিলারি

হোয়াইট হাউজ ছাড়ার বছর ২০০০ সালে হিলারি নিউ ইয়র্কের প্রথম নারী সিনেটর নির্বাচিত হন। সেবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ফার্স্টলেডি সিনেটে নির্বাচিত হলেন।

পরের বছর ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার পর হিলারি নিউ ইয়র্ক শহরকে নতুন করে গড়ে তুলতে আত্মনিয়োগ করেন। শহরের পুনঃনির্মাণ এবং ‘গ্রাউন্ড জিরো’ হিসেব খ্যাত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলায় আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তিনি গড়ে তোলেন ২০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল।

সিনেটের সদস্য হিসেবে হিলারি ‘ট্রাইকেয়ার’ প্রকল্পকে আরও বিস্তৃত করার প্রস্তাব আনেন। ওই প্রস্তাবের মাধ্যমে মার্কিন রিজার্ভের সদস্য এবং ন্যাশনাল গার্ড ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আগের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া শুরু করে।

কংগ্রেসের নেওয়া কার্যক্রম প্রান্তিক অঞ্চলে ভূমিকা রাখছে না অভিযোগ তুলে হিলারি ই-বে ও নিউ ইয়র্কের স্থানীয় কলেজগুলোর সহায়তায় প্রান্তিক মানুষদের জন্য চালু করেন ক্ষুদ্র ব্যবসা; যার মধ্যে আছে প্রযুক্তি সহায়তা, ক্ষুদ্র ঋণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।

তিনি রাজ্যের দুর্গম এলাকাগুলোতে ব্রডব্যান্ড সেবা বিস্তৃত করেন। সেইসঙ্গে নিউ ইয়র্কের কৃষক ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে চালু করেন ফার্ম-টু-ফর্ক প্রকল্প। এর মাধ্যমে কৃষকরা নিউ ইয়র্কের রেস্তোরাঁ, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরাসরি খাবার বিক্রি শুরু করে।

টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার পর আফগানিস্তান ও ইরাক অভিযানে সমর্থন দিলেও অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে বুশ প্রশাসনের সঙ্গে হিলারির দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।

সিনেটর থাকার দিনগুলোতে নিউ ইয়র্কের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল হিলারির। ট্রাম্প-মেলানিয়ার বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। সে সময় হিলারি-বিল ও ট্রাম্প-মেলানিয়ার হাস্যেজ্জ্বল ছবি এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় নতুন করে আলোচনায় আসে।

২০০৬ সালে সিনেটের একই আসনে পুননির্বাচিত হন হিলারি। দুই বছর পর প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়নযুদ্ধে শামিল হন। কিন্তু মনোনয়ন যুদ্ধে বারাক ওবামার কাছে হার মানতে হয় সাবেক এ ফার্স্টলেডিকে।

সে সময় সমর্থকদের উদ্দেশে হিলারি বলেছিলেন- “যদিও আমরা সবচেয়ে উঁচু আর সবচেয়ে কঠিন কাচের দেয়ালটি ভাঙতে পারিনি, তবু আপনাদের ধন্যবাদ। কেননা আমরা এতে অন্তত এক কোটি ৮০ লাখ আঘাত হানতে পেরেছি।”

‘স্মার্ট পাওয়ার’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হয়ে বারাক ওবামা তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হিলারি ক্লিনটনকেই বেছে নেন। পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে সে সময় বেশ কিছু পরিবর্তনের কৃতিত্ব দেওয়া হয় হিলারিকে।

‘স্মার্ট পাওয়ার’ নামে পরিচিতি পাওয়া ‘কোমল-কঠোর’ সেই নীতির মাধ্যমেই হিলারি হামাস ও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটান। তার সময়েই যুক্তরাষ্ট্র ‘নিষেধাজ্ঞায়’ থাকা ইরানের সঙ্গে নতুন আলোচনা শুরু করে।

মন্ত্রী থাকাকালে বিশ্বের ১১২টি দেশ ভ্রমণ করে আলোচনায় আসেন হিলারি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে জোর দেন তিনি। শিশু ও নারী পাচারের বিপক্ষে নেন শক্ত অবস্থান। নারীদের শিক্ষা ও ব্যবসায় অগ্রাধিকার দেন। তার সময়েই যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নারী ও শিশুর ওপর যুদ্ধকালীন সময়ে সহিংসতা রোধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তাব আনে।

দেশে এবং দেশের বাইরে সমকামীদের স্বীকৃতি নিয়েও সোচ্চার ভূমিকা রাখেন হিলারি। তিনি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সেই সময়ই শুরু হয় ‘আরব বসন্ত।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে সে সময় আরব ভূমির বিভিন্ন দেশে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে বলে ধারণা করা হয়।

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধও সে সময় বিস্তৃতি পায়। হিলারির সময় আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী সাফল‌্য পেলেও মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেটের গোড়াপত্তন ঘটে। বিরোধীরা ওই উত্থানের জন্য হিলারির পররাষ্ট্রনীতিকে দায়ী করে থাকে।

২০১২ সালে লিবিয়ার বেনগাজিতে সন্ত্রাসী হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতসহ চারজন নিহত হলে হিলারিকে কংগ্রেশনাল কমিটির শুনানির মুখোমুখি হতে হয়। ওই শুনানির সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন হিলারি, ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে।

কয়েক বছরের তদন্ত শেষে কংগ্রেশনাল কমিটি ওই হামলার জন্য হিলারিকে দায়ী না করলেও তার প্রশাসনের অদক্ষতাকে চিহ্নিত করে। ২০১৩ সালে হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়েন।

হোয়াইট হাউজের পথে নতুন যাত্রা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন‌্য হিলারি ক্লিনটনের দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরু হয় ২০১৫ সালের এপ্রিলে। ডেমোক্রেট শিবিরের মনোনয়নযুদ্ধ তিনি সহজেই উৎরে যাবেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর চলতি বছরের জুলাইয়ে দলের কনভেনশনে হিলারির হাতেই ‘গাধা’ প্রতীক তুলে দেয় ডেমোক্রেটিক পার্টি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকাকালে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যক্তিগত ই মেইল সার্ভার ব্যবহার করার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় নির্বাচনী প্রচারে বিপাকে পড়তে হয় হিলারিকে। তার দক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।

অবশ‌্য ভোটের মাত্র দুদিন আগে তদন্ত সংস্থা এফবিআই ‘রায়’ দেয়, হিলারির ইমেইলকাণ্ডে দোষের কিছু তারা পায়নি। তাতে হিলারির ক্ষতি কতটা কেটেছে, তা জানতে ভোটের ফল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে বিদেশি রাষ্ট্রের অর্থ সাহায্য নিয়েও বারবার প্রশ্ন তুলেছে ট্রাম্প শিবির। সেখানে অর্থ দেওয়া অনেকে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকেও অর্থ দিচ্ছে বলে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের দাবি।

তথ‌্যসূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান, রয়টার্স, সিএনএন, হিলারি ক্লিনটন ডটকম ও বায়োগ্রাফি ডটকম