সেন্ট্রাল স্কয়ারে উড়ন্ত পতাকার ঢেউ, মাতোয়ারা গ্রিকদের উল্লাস, আতশবাজির শব্দ দাতাদের কানে না পৌঁছুলেও তাদের শর্তে ‘না’ বলে দেওয়ার ‘সাহস দেখিয়েই’ সঙ্কট থেকে উত্তরণের আলো খুঁজছে গ্রিসবাসী।
রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি এ গণভোটে ৬১ শতাংশের রায় গেছে ‘না’ এর পক্ষে। অর্থাৎ দাতাদের শর্ত মেনে ঋণ সহায়তা না নেওয়ার পক্ষেই তারা।
তেইশ বছর বয়সী নিকোস তারাসিস যেমন বললেন, “এই রায় গ্রিসবাসীর ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। এখন বাকিটা ইউরোপীয়দের বিষয়; তারা এই গণরায়কে সম্মান দেখিয়ে সহায়তার হাত বাড়ায় কি না সেটি তাদের উপরই নির্ভর করছে।”
সাতচল্লিশ বছর বয়সী শিক্ষক একটু ভিন্নভাবেই তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন।
বললেন, “এই রায়ের অর্থ- সব ধরনের চাপের পরও আমরা ভীত নই। আমরা স্বতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে ইউরোপে থাকতে চাই।”
টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বললেন, জনগণ যে রায় দিয়েছে তা ইউরোপের সঙ্গে বিরোধের জন্য নয়, বরং একটি উপযুক্ত সমাধান খুঁজে বের করার জন্য।
টালমাটাল অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা বামপন্থী দল সিরিজার প্রধান বলেন, “ইউরোপের সঙ্গে বিরোধের জন্য নয়, বরং সংকট থেকে উত্তোরণে একটি উপযুক্ত, গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার ভার আপনারা আমাকে দিয়েছেন।”
সঙ্কটময় মুহূর্তে এই রায়ে জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে ‘না’ এর পক্ষে এমন বিপুল রায়ে হতভম্ব ইউরোপীয় শীর্ষ নেতারা মঙ্গলবার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় বৈঠক ডেকেছেন।
ক্ষমতাসীন বামপন্থি সিরিজা পার্টির নেতারা আর্থিক পুনরুদ্ধারে দাতাদের দেওয়া শর্তগুলো ‘মর্যাদাহানিকর’ বলে আসছিলেন। তারা বলছিলেন, গণভোটে ‘না’ জয়ী হলে দাতাদের সঙ্গে দ্রুত নতুন চুক্তিতে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
গণভোটের পর তাই সাফ বক্তব্যও এলো- এমন রায়ে গ্রিসের সঙ্গে আলোচনা শুরুর কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তারা। যদিও এ সপ্তাহেই নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসার চিন্তা ভাবনা করছেন ইউরোপের অর্থমন্ত্রীরা।
২০১০ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএমএফ থেকে দুটি বেইল আউটে প্রায় ২৪০ বিলিয়ন ইউরো নেয় গ্রিস। এই অর্থে চলতে থাকে দেশটি, যদিও তার জন্য নাগরিকদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ সময়ে পেনশন, বেতন ও সরকারি সেবায় কাটছাঁট হয় গ্রিসে।
নতুন করে সহায়তার জন্য (বেইল আউট) গ্রিসকে কর বাড়ানোর পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক ব্যয় কমানোসহ কঠিন আর্থিক পুনর্গঠনের শর্ত দেয় ইউরোজোন।