ভূমধ্যসাগর সংকট শরণার্থী সমস্যা: ইউএনএইচসিআর

যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব আর নির্যাতন থেকে বাঁচতে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া এক লাখ ৩৭ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী ভূমধ্যসাগরীয় সংকটকে প্রাথমিকভাবে শরণার্থী সমস্যায় পরিণত করেছে বলে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2015, 02:33 PM
Updated : 1 July 2015, 02:34 PM

বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি বা গ্রিসে পৌঁছানো নারী-পুরুষ ও শিশুদের এক তৃতীয়াংশ সিরিয়া থেকে এসেছেন এবং তারা শরণার্থী ও অন্য কোনো ধরনের আশ্রয় পেয়েছেন।

ইউরোপে আসা দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসন প্রত্যাশী আফগানিস্তান ও ইরিত্রিয়ার নাগরিক, তাদের বেশিরভাগও শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় পেয়েছেন।

“ভূমধ্যসাগরের এই সমস্যা মোকাবেলার উপায় নিয়ে ইউরোপে বিতর্ক থাকলেও আমরা বলতে পারি, সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসা অধিকাংশ মানুষই শরণার্থী, যারা যুদ্ধ ও নিপীড়ন থেকে সুরক্ষা চাইছে ,” বলেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার আন্তোনিও গুটেয়েরেস।

গ্রিস, ইতালি, মাল্টা ও স্পেন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়, এবছর শরণার্থী ও অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েছে ৮৩ শতাংশ।

এবছর প্রথম ছয় মাসে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন এক লাখ ৩৭ হাজার মানুষ, যেখানে গত বছর একই সময়ে এসেছিলেন ৭৫ হাজার।

ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষত গ্রীষ্মের সময় অভিবাসন প্রত্যাশীদের সাগর পাড়ি দেওয়া উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। তাই অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্রোত সামনে আরও বাড়তে থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এর দৃষ্টান্ত হিসেবে ২০১৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম ছয় মাসের তুলনায় দ্বিগুণ মানুষের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এতে।

এবছর এপ্রিলে সাগরে অভিবাসন প্রত্যাশীদের মৃত্যুর হার রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছালেও অনেকটা নাটকীয়ভাবে মে ও জুনে তা কমে যায়। জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে সাগরে ডুবে মারা যাওয়া কিংবা নিখোঁজের সংখ্যা ৪৭৯ জন, যেখানে গতবছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ১৫।

এপ্রিলে সাগরে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছে। ওই সময় পানিতে ডুবে মারা যায় বা নিখোঁজ হয় এক হাজার ৩০৮ জন, যেখানে আগেরবছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৪২।

এরপর মে মাসে ৬৮ এবং জুনে ১২ জনের মৃত্যু কিংবা নিখোঁজ হওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

সাগরে মৃত্যুর হার কমে এলেও এ বিষয়ে শিথিলতা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার।

তিনি বলেন, “আমাদের অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। প্রতি সপ্তাহেই হাজার হাজার শরণার্থী ও অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ায় বাস্তবে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।”

ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্য ভূমধ্যসাগর রুটের (উত্তর আফ্রিকা থেকে ইতালি) তুলনায় পূর্ব ভূমধ্যসাগর রুট ধরে তুরস্ক থেকে গ্রিসে ঢোকার ঘটনা বেড়েছে।   

গ্রিসে ঢোকা অভিবাসন প্রত্যাশীদের সিংহভাগই সিরিয়ার নাগরিক, যারা প্রথম দফায় প্রতিবেশী তুরস্ক ও লেবাননে আশ্রয় নিয়েছিল।   

তবে কয়েক বছর ধরে অভিবাসন প্রত্যাশীবিরোধী চাপ বাড়তে থাকার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহায়তার অপ্রতুলতায় শরনার্থী আশ্রয়দাতা দেশগুলো অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত দিক দিয়ে সংকট মোকাবেলায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এতে শরণার্থীদের জন্য কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।

গুটেয়েরেস বলেন, “আশ্রয়প্রার্থীদের সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব ইউরোপের। এটা অস্বীকার করলে তা হবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাতায় বড় হুমকি। শরণার্থী সংকট মোকাবেলায় ইউরোপের দেশগুলোকে তাদের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে হবে।”