ঋণখেলাপি গ্রিস গভীর সঙ্কটে

প্রথম কোনো অগ্রসর অর্থনীতির দেশ হিসেবে ঋণখেলাপি হল গ্রিস।

>>রয়টার্স
Published : 30 June 2015, 10:40 PM
Updated : 1 July 2015, 04:23 AM

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, তাদের ঋণের ১৬০ কোটি (১ দশমিক ৬ বিলিয়ন) ইউরো পরিশোধের শেষ সময় মঙ্গলবার মধ্যরাত পেরিয়ে গেলেও তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে গ্রিস।

আইএমএফের মুখপাত্র গ্যারি রাইস বলেন, কেবল বকেয়া পরিশোধের পরই আইএমএফের পরবর্তী তহবিল পাবে গ্রিস।

শেষ মুহূর্তে গ্রিস ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর অনুরোধ করেছিল বলে জানান তিনি।

আইএমএফের কিস্তি পরিশোধের জন্য গ্রিস ইউরোজোনভুক্ত দেশগুলোর কাছে নতুন করে দুই হাজার ৯১০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চাইলেও তাতে সাড়া মেলেনি।

ইউরোজোনের অর্থমন্ত্রীরা সন্ধ্যায় তাদের এ প্রস্তাব নিয়ে টেলিকনফারেন্সে আলোচনা করলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।

তারা বলছেন, গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সি সিপ্রাসের সর্বশেষ ঋণ প্রস্তাব নিয়ে বুধবার আলোচনা করবেন।

তবে ওই আলোচনায় গ্রিসের জন্য কোনো শুভ বার্তা আসবে কি না তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। নতুন করে ঋণ চাওয়ার পাশাপাশি ঋণ পুনর্গঠনও চাইছেন সিপ্রাস, যে বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয় ঋণদাতারা।

সম্প্রতি দুই পক্ষের মধ্যে তিক্ত আলোচনার পর এথেন্স ও ইউরোপীয়ান রাজধানীগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়।

গ্রিসকে দেওয়া ইউরোজোনের চলতি বেইল আউটের মেয়াদ শেষ হল মঙ্গলবার।

নতুন করে সহায়তার জন্য (বেইল আউট) গ্রিসকে কর বাড়ানোর পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক ব্যয় কমানোসহ কঠিন আর্থিক পুনর্গঠনের শর্ত দেয় ইউরোজোন। তাদের কঠোর ব্যয়সঙ্কোচনের শর্তে সায় দেয়নি গ্রিসের বামপন্থি সরকার।

এথেন্সে ইইউপন্থিদের বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

এথেন্সে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে ইউরোপন্থিদের সমাবেশে বড় আকৃতির একটি ইইউ পতাকার নিচে নেচে-গেয়ে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

নতুন বেইল আউট প্রস্তাব নিয়ে ৫ জুলাই গণভোটের আয়োজন করেছে গ্রিস সরকার। কয়েকশ’ কোটি ইউরোর বেইল আউট তহবিল নেয়ার জন্য ঋণদাতাদের দেওয়া কঠোর শর্তগুলো গ্রহণ নাকি প্রত্যাখ্যান করা হবে,রোববারের গণভোটে সেই সিদ্ধান্তই জানাবে দেশের মানুষ। 

৪০ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস অবশ্য ‘না’ ভোট দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

দাতাদের শর্ত মেনে বেইল আউট তহবিল নেওয়ার পক্ষে বেশি ভোট পড়লে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “গ্রিক জনগণ যদি একজন লাঞ্ছিত প্রধানমন্ত্রী চান,  তাহলে সরকারের বাইরে এ রকম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য অনেকেই তৈরি আছেন। কিন্তু আমি তা হব না।”

তার এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দাতারা।

রোববারের গণভোটের আগে কোনো ধরনের সমঝোতার কথা নাকচ করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল।

ইউরো জোনের অর্থমন্ত্রীদের গ্রুপের চেয়ারম্যান জেরোয়েন ডিজেলব্লোয়েম গ্রিসকে সতর্ক করে বলেছেন, নতুন সহায়তার ক্ষেত্রে আথেন্সকে স্বাগতম। তবে তাদের শর্ত মেনে আসতে হবে।

“যা পরিবর্তন হতে পারে তা হলো গ্রিক সরকারের রাজনৈতিক অবস্থান, যা এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে,” বলেন তিনি।

ঋণখেলাপ

২০১০ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএমএফ থেকে দুটি বেইল আউটে প্রায় ২৪০ বিলিয়ন ইউরো নেয় গ্রিস। এই অর্থে চলতে থাকে দেশটি, যদিও তার জন্য নাগরিকদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ সময়ে পেনশন, বেতন ও সরকারি সেবায় কাটছাঁট হয় গ্রিসে।

ঋণখেলাপি হওয়ায় গ্রিস ইউরোজোন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে এলো, যাতে ইইউর একক মুদ্রা প্রকল্প ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি দেখা দিল।

“ইউরো থেকে গ্রিস যদি বেরিয়ে যায় তাহলে কী হবে? একটি নেতিবাচক বার্তা যাবে যে, ইউরো সদস্যপদ উল্টো হতে পারে,” বলেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়নে রাজয়।

এথেন্সে বিক্ষোভের সময় ব্যাংক অফ গ্রিসের সামনে দাঙ্গা পুলিশের অবস্থান। ছবি: রয়টার্স

“মানুষ মনে করতে পারে, একটি দেশ যদি ইউরো ছাড়তে পারে তাহলে ভবিষ্যতে অন্যরাও পারবে।”

ইউরোজোনের সঙ্গে টানাপোড়েনে এরইমধ্যে সংকট ঘনীভূত হয়েছে গ্রিসে। সপ্তাহজুড়ে ব্যাংকগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার, পাশাপাশি এটিএম বুথ থেকে দিনে ৬০ ইউরোর বেশি না তোলার বিধান জারি করা হয়েছে।

সার্বিক অনিশ্চয়তার মুখে গ্রিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাংক থেকে অর্থ তোলার পাশাপাশি সুপারমার্কেটগুলোতে লম্বা লাইন দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে মজুদ করার চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষ।