জাপানেও গেছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যানথ্রাক্স 

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে তাজা অ্যানথ্রাক্স জীবাণু পাঠানো দেশগুলোর তালিকায় এবার জাপানও যুক্ত হয়েছে। 

>>রয়টার্স
Published : 13 June 2015, 05:45 AM
Updated : 13 June 2015, 05:45 AM

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল স্টিভ ওয়ারেন জানিয়েছেন, টোকিও থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি ক্যাম্প জামা-তে এসব নমুনা পাঠানো হয়েছিল।
 
২০০৫ সালে পাঠানো নমুনাগুলো ২০০৯ সালে ধ্বংস করে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। 
 
এদিকে, প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর যে গবেষণাগারটি থেকে অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়ার এসব নমুনা পাঠানো হয়েছে, ২০০৭ সালে নমুনা ধ্বংস করতে ব্যর্থ হওয়ায় উটাহ রাজ্যের ওই গবেষণাগারটি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল, কিন্তু গবেষণাগারটিকে কখনো জরিমানা করা হয়নি।
 
ওয়ারেন জানিয়েছেন, শনাক্তকরণ যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করার জন্য জীবাণুর ওই নমুনা জাপানে পাঠানো হয়েছিল, এগুলোকে নির্জীব জীবাণু ভাবা হলেও পরীক্ষায় এগুলো তাজা হিসেবে শনাক্ত হয়।  
 
তিনি বলেন, “এটি লক্ষ রাখা খুব দরকার, এই সময়ে জাপানে, নির্জীব বা তাজা, কোনো ধরনের অ্যানথ্রাক্স জীবাণু নেই।” 
 
এখন জানা গেল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে পাঁচটি দেশে তাজা অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। জাপান ছাড়া অন্য দেশগুলো হল- যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও দক্ষিণ কোরিয়া। 
 
যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরে রাজধানী ওয়াশিংটনসহ ১৯টি রাজ্যের ৬৯টি গবেষণাগারে প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়াটির এসব তাজা নমুনা পাঠানো হয়েছিল। এসব ব্যাকটেরিয়া দিয়ে জীবাণু অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব। 
 
একদশকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীর বহু ঘাঁটিতে নির্জীব অ্যানথ্রাক্স জীবাণুর নমুনা পাঠানো হয়েছে। জীবাণু অস্ত্রের বিষয়ে গবেষণার জন্য এসব নির্জীব অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়ার নমুনা পাঠানো হয়েছিল। 
 
কিন্তু এতদিন পর জানা গেছে যে, নির্জীব চিহ্নিত করে অ্যানথ্রাক্সের যেসব নমুনা পাঠানো হয়েছিল, তার সবগুলোই নির্জীব ছিল না। অনেকগুলো নমুনাকেই ঠিকমতো নির্জীব না করেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। 
 
পাঠানো অ্যানথ্রাক্স নমুনার সংস্পর্শে আসা কেউ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অসুস্থ হননি। তবে পূর্ব সতর্কতা হিসেবে বেশ কয়েকটি গবেষণাগারের ৩১ জন কর্মীকে অ্যানথ্রাক্সের আগাম চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। 
  যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এসব ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
 
উটাহর ডাগওয়ে প্রোভিং গ্রাউন্ড সামরিক ঘাঁটির মান নিয়ন্ত্রণ সমস্যা থেকে দায়িত্বে অবহেলাজনিত অ্যানথ্রাক্স পাঠানোর এসব ঘটনা ঘটেছে কিনা তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করছেন সিডিসির তদন্তকারীরা। 
 
ঘটনাগুলো আশঙ্কাজনক হলেও এতে জনসাধারণের কোনো ঝুঁকি নেই বলে দাবি করেছেন পেন্টাগনের কর্মকর্তারা।
 
এক আদেশে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী নিজেদের সব গবেষণাগারকে আগে পাঠানো নির্জীব অ্যানথাক্স জীবাণুর নমুনাও পরীক্ষা করে দেখতে বলেছে। পরীক্ষা করা ছাড়া এসব নমুনা নিয়ে আর সব গবেষণা স্থগিত রাখারও আদেশ দেয়া হয়েছে। 
 
জীবাণুঅস্ত্র নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা দায়িত্বে অবহেলাজনিত এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে সর্বাধুনিক আগাম সতকর্তা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। 

২০০১ সালে ৯/১১ হামলার কিছুদিন পর কয়েকটি ঘটনায় অ্যানথ্রাক্স নিয়ে সচেতন হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় বিভিন্ন বার্তা সংস্থার দপ্তরসহ যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের দপ্তরে চিঠির মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স জীবাণু পাঠানো হয়। 
 
ওই সময় এসব জীবাণুর সংস্পর্শে আসা ২২ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে পাঁচজন মারা যান। এরপর থেকে দেশটির সামরিক বাহিনী অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠে।  
 
অ্যানথাক্স জীবাণুর সংস্পর্শে এলে ত্বকে জ্বালাপোড়া, পাকস্থলির গণ্ডগোল, বমিভাব ও জ্বর দেখা দেয়। এসব লক্ষণ প্রকাশের এক পর্যায়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।