ব্রিটেনে বাড়ি পেতে প্রতারণা: গ্রেপ্তার ‘বাংলাদেশিরা’ও

প্রতারণার মাধ্যমে ইতালির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসীদের জন্য যুক্তরাজ্যে আবাসন সুবিধার ব্যবস্থা করে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে তদন্তের পর একটি দাতব্য সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2015, 10:07 AM
Updated : 26 May 2015, 10:41 AM

এই প্রতারণায় অভিযুক্ত ‘ফ্যামিলিজ ফর সারভাইভাল ইউকে’ নামে সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা জড়িত বলে যুক্তরাজ্যের মেইল অলনাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ওই সংস্থার সঙ্গে জড়িত আসমা খানমকে (৪৬) জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। যুক্তরাজ্যের ইস্ট লন্ডনের নিউবেরি পার্ক এলাকার বাসিন্দা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই নারীসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই চক্রটি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স পাওয়ার জন্য সেখানকার জব সেন্টারগুলোতে সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে ইতালি থেকে লোকজন আনে। তারপর তাদের ভুয়া পে স্লিপের ব্যবস্থা করে দিয়ে যুক্তরাজ্যের আবাসন সুবিধা হাতিয়ে নেয়।

তদন্ত কর্মকর্তারা ইস্ট লন্ডনের ইলফোর্ডে ‘ফ্যামিলিজ ফর সারভাইভাল ইউকে’র কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে নথিপত্র ও কম্পিউটার জব্দ করেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের করদাতাদের লাখ লাখ পাউন্ড হাতিয়ে নেওয়ার এই কেলেঙ্কারি নিয়ে ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার্কস অ্যান্ড পেনশন এবং রেডব্রিজ কাউন্সিলের তদন্তের পর এদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুবিধা নিয়ে প্রতারণায় ব্রিটেনে উদ্ঘাটিত যাবতকালের সবচেয়ে বড় ঘটনা হতে পারে এটি।

ইতালিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার পর গত তিন বছর ধরে যুক্তরাজ্যে আসা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসীরা এই সুবিধা হাতিয়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স নম্বর পাওয়ার পর তারা আবাসন সুবিধার ভুয়া দাবি করে নতুন বাড়িতে উঠে যাচ্ছে। তাদের আবেদনকে জোরালো করতে ভুয়া ‘পে স্লিপ’ দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতালির পাসপোর্টধারী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা গতবছর ইতালি থেকে লন্ডন স্টান্সটেড এয়ারপোর্টে আসে বলে জানিয়েছে অ্যাসেক্স পুলিশ।

ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স নম্বর পেতে লন্ডনে জব সেন্টারগুলোতে সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়ার জন্য তাদের হাতে নিয়োগপত্র ছিল এবং তাদের ওই দিনই ফিরতি টিকেটে ফেরত পাঠানো হয়।

মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, “পরে ডিডব্লিউপি ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স নম্বরের জন্য জমা পড়া চারশোর বেশি আবেদনপত্র চিহ্নিত করে, যার সবগুলোতে  ইস্ট লন্ডনের বো’র ঠিকানা দেওয়া ছিল। মঙ্গলবার পুলিশের অভিযানের সময় এই ঠিকানাতেও অভিযান চালানো হয়।”

ওই সব প্রতারকদের ভুয়া চাকরি কাগজপত্র সরবরাহকারী অন্তত পাঁচটি সংস্থার মধ্যে ‘ফ্যামিলিজ ফর সারভাইভাল ইউকে’ অন্যতম বলে অভিযোগ উঠেছে।

একটি চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানসহ অন্য কোম্পানির দুজন পরিচালককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব কোম্পানির বেশ কয়েকটির কোনো কর্মকাণ্ড নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে।

যুক্তরাজ্য সরকারের আইন অনুযায়ী, ব্রিটেনের কর্মসংস্থান প্রমাণ করতে পারলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকরা সেখানে আবাসন সুবিধা দাবি করতে পারবে।

রেডব্রিজ কাউন্সিলের এটা প্রথম প্রতারণার তদন্ত, যার ফলে কেউ গ্রেপ্তার হলো। এই তদন্তে ডিডব্লিউপির সঙ্গে মেট্রোপলিটন পুলিশের আর্থিক গোয়েন্দা শাখাও কাউন্সিলকে সহযোগিতা করেছে।

গত বছর গ্রীষ্মে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যাপক সংখ্যক ইতালীয় নাগরিকদের প্রত্যেকে সপ্তাহে ১৫৬ পাউন্ড উপার্জন করে বলে দাবি করে আবাসন সুবিধার জন্য আবেদন করার পর প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে সতর্ক হয় এই তদন্ত দল।  

ওই দাতব্য সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাহায্য সংস্থা হিসেবে গত বছর এটি সেইন্সবারির অনুমোদন পেয়ে অনুদান ও সাহায্য বাবদ ৩ লাখ ১৬ হাজার পাউন্ড আয় করেছে।

এবিষয়ে মন্তব্যের জন্য ‘ফ্যামিলিজ ফর সারভাইভাল ইউকে’র কাউকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে মেইল অনলাইন।

আসমা খানম ছাড়াও গ্রেপ্তারদের মধ্যে ক্রিস্টাল জব লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির সাবেক পরিচালক ৩৫ বছর বয়সী কে এম হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতারণার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।

বুধবার রেডব্রিজ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির হয়ে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান তারা দুজন।

মেইল অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আবাসন সুবিধার ভুয়া দাবির ঘটনায় অভিযুক্ত আরও আটজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা আইনের ২ নম্বর ধারার অধীনে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

“এই সপ্তাহে তাদের আদালতে হাজিরার কথা রয়েছে। সামনের সপ্তাহগুলোতে অন্য অভিযুক্ত অভিবাসীদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”

রেডব্রিজ কাউন্সিলের সদস্য ক্যাম রায় বলেন, “গত বছর এই প্রতারণার ঘটনা ধরা পড়ে। এর পর থেকে সুবিধা সংক্রান্ত প্রতারণার বিষয়ে আমাদের তদন্ত দল এর প্রমাণ সংগ্রহে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। তাদের কঠিন কাজের প্রত্যক্ষ ফল আমরা পেলাম।

‘যখন মানুষ কাউন্সিলের বিরুদ্ধে প্রতারণা করে, তখন তারা আপনাদের নিজেদের, বন্ধুদের, পরিবারের এবং পুরো জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে চুরি করে। প্রতারণার ফলে গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয় এবং তা আমাদের সবার উপর প্রভাব ফেলে।”

কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেন, এই তদন্তের ফলে প্রতি সপ্তাহে আবাসন সুবিধার হাজার হাজার অর্থ তারা বাঁচাতে পারবেন বলে আশা করছেন।

ডিডব্লিউপির একজন মুখপাত্র মেইল অনলাইনকে বলেরন, “বিশ্বজুড়ে সুবিধা নিয়ে প্রতারণার ঘটনার পেছনে লেগে থেকে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষমতা রয়েছে আমাদের প্রতারণা তদন্তকারীদের।

“ আমরা আইন লঙ্ঘনকারী এসব মানুষের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি আক্রমণ চালাবো, যাতে প্রকৃত পাওনাদাররাই এই আবাসন সুবিধা পান।

“আদালতের দেওয়া যেকোনো সাজার সঙ্গে অবৈধভাবে নেওয়া সব অর্থ ফেরত দিতে হবে এবং সারাজীবন অপরাধী হিসেবে রেকর্ডভুক্ত থাকবে।”