মালয়েশিয়া পুলিশের মহা পরিদর্শক খালিদ আবু বকরকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুই সপ্তাহ ধরে অভিযান চালিয়ে তার বাহিনীর সদস্যরা এসব কবর চিহ্নিত করেছে, যার কোনো কোনোটিতে একাধিক দেহাবশেষ থাকতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ১ মে থেকে থাই সীমান্তের ৫০০ মিটার উত্তরে ২৮টি পরিত্যক্ত ক্যাম্পে এসব কবর পাওয়া গেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আবু বকর।
এর মধ্যে একটি গণকবরের অবস্থান গতমাসে থাইল্যান্ডে পাওয়া কবর থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে।
কবরগুলো থেকে দেহাবশেষ তোলার কাজ চলছে বলে মালয়েশীয় পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন।
এক মাস আগে থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশের পাহাড়ি এলাকায় পাচারকারীদের ক্যাম্পে ওই গণকবরে ২৬টি দেহাবশেষ পাওয়ার পরই সাগরপথে মানবপাচারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনায় আসে।
ধারণা করা হয়, বিভিন্ন স্থান থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকায় করে প্রথমে আনা হয় থাইল্যান্ডে। সেখানে জঙ্গলের মধ্যে পাচারকারীদের বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের রাখা হয়। পরে সময় সুযোগ মতো তাদের আবার নৌকায় করে অথবা স্থলপথে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হয়।
আর এক্ষেত্রে শংখলা প্রদেশ ও পেদাং বেসারের ওই দুর্গম এলাকা পাচারকারীদের একটি রুট হিসাবে ব্যবহৃত হয় বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি বিবিসির একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, থাই সমাজের ‘প্রায় সবাই’ কোনো না কোনোভাবে মানবপাচারে যুক্ত।
থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবর পাওয়ার পর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড উপকূলে সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাচারকারীদের কয়েকটি নৌকা থেকে তিন হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়, যারা বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করে সংশ্লিষ্ট তিন দেশ।
মালয়েশিয়ার পুলিশ চলতি মাসের শুরু থেকেই থাই সীমান্ত সংলগ্ন পেদাং বেসার ও ওয়াং কেলিয়ান এলাকায় পাচারকারীদের আস্তানার খোঁজ পেলেও বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে রোববার।
এদিন ১৭টি পরিত্যক্ত ক্যাম্পে ৩০টি কবরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি। পরদিন এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য দেন দেশটির পুলিশ প্রধান।
মিয়ানমারে সরকারের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা গত কয়েক বছর ধরেই সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবেশী মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
বাংলাদেশ থেকেও কাঠের নৌকা বা মাছ ধরার ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টার ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।
সার্বিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের মুখে বিপদগ্রস্ত মানুষদের সাগর থেকে উদ্ধার করে সাময়িক আশ্রয় দিতে ও নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।
এছাড়া বাংলাদেশ সরকারও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহায়তায় সেখানে আটক বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।