এবার মালয়েশিয়ায় ‘গণকবর’

থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মানবপাচারকারীদের আস্তানায় পাচারের শিকার মানুষের হাড়গোড় পাওয়ার এক মাসের মাথায় মালয়েশিয়ার সীমান্ত এলাকায় ১৭টি পরিত্যক্ত ক্যাম্পে একই ধরনের গণকবরের সন্ধান মিলেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2015, 05:47 AM
Updated : 24 May 2015, 11:08 AM

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদিকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রায়াত্ত বার্তা সংস্থা বারনামার এক প্রতিবেদনে রোববার বলা হয়, পেরলিস প্রদেশের থাই সীমান্ত সংলগ্ন পেদাং বেসার ও ওয়াং কেলিয়ান এলাকায় পাচারকারীদের এসব আস্তানার খোঁজ পেয়েছে পুলিশ ও কমান্ডোরা।

“পুলিশের মহা পরিদর্শক ও উপ মহা পরিদর্শক এখন সীমান্তের ওই এলাকায় আছেন। ওগুলো পাচারের শিকার হওয়া অবৈধ অভিবাসীদের কবর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।”

স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি ও রয়টার্স সেখানে অন্তত ৩০টি গণকবর পাওয়ার তথ্য দিয়েছে।

তবে সেখানে কতজনের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি মালয়েশিয়ার মন্ত্রী।

কুয়ালালমপুরে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “কোনো কোনো কবরে তিন বা চারজন, আবার কোনোটিতে একজনের লাশ আছে। আমাদের গণনা এখনো শেষ হয়নি।”

তবে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মালয়েশিয়ার স্টার অনলাইন বলেছে, এসব কবরে শ’খানেক কঙ্কাল থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

মালয়েশিয়া সীমান্তের যে অংশে এসব গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে, তার উল্টো দিকে থাইল্যান্ডের পাহাড়ি এলাকার নামও পেদাং বেসার। শংখলা প্রদেশের ওই এলাকাতেই গতমাসে কয়েকটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর মানবপাচারে জড়িত সন্দেহে জেলার মেয়রকেও গ্রেপ্তার করা হয়। 

ধারণা করা হয়, বিভিন্ন স্থান থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকায় করে প্রথমে আনা হয় থাইল্যান্ডে। সেখানে জঙ্গলের মধ্যে পাচারকারীদের বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের রাখা হয়। পরে সময় সুযোগ মতো তাদের আবার নৌকায় করে অথবা স্থলপথে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হয়।

আর এক্ষেত্রে শংখলা প্রদেশ ও পেদাং বেসারের ওই দুর্গম এলাকা পাচারকারীদের একটি রুট হিসাবে ব্যবহৃত হয় বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।   

সম্প্রতি বিবিসির একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, থাই সমাজের ‘প্রায় সবাই’ কোনো না কোনোভাবে মানবপাচারে যুক্ত।

তবে মালয়েশিয়ায় এই প্রথম গণকবরের সন্ধান মিলল, যদিও কিছুদিন আগে দেশটির সরকার দাবি করেছিল, সেখানে পাচারকারীদের কোনো ক্যাম্প নেই।

পেদাং বেসার ও ওয়াং কেলিয়ান এলাকায় পাচারকারীদের অস্তানার খবর নিশ্চিত হওয়ার পর ‘বিস্মিত’ জাহিদ হামিদি সাংবাদিকদের বলেন, অন্তত পাঁচ বছর ধরে মানবপাচারকারীরা এসব ক্যাম্প চালিয়ে আসছে বলে পুলিশের মনে হয়েছে। সেখানে অভিযান শুরুর আগে আগে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়।

“পুলিশ ও ভ্যাট ৬৯ কমান্ডো বাহিনী এখনও ওই এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। এ কাজে তারা থাইল্যান্ডের সহায়তা নিচ্ছে। আমরা হয়তো আরও লাশের খবর পাব।” 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার পুলিশ কমিশনার ‘শিগগিরই’ আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত জানাবেন।

স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা স্টার অনলাইনকে বলেছেন, পেদাং বেসারের সেখানে গণকবর পাওয়া গেছে, সেটি একটি সংরক্ষিত এলাকা। সেখানে সাধারণ জনগণের প্রবেশাধিকার নেই।

“পাহাড়ি ওই এলাকা এখন ঘিরে রাখা হয়েছে”, বলেন তিনি। 

মিয়ানমারে সরকারের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা গত কয়েক বছর ধরেই সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবেশি মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

বাংলাদেশ থেকেও কাঠের নৌকা বা মাছ ধরার ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টার ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।

গতমাসের শেষে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবর পাওয়ার পর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড উপকূলে সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাচারকারীদের কয়েকটি নৌকা থেকে তিন হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়।

সার্বিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের মুখে বিপদগ্রস্ত মানুষদের সাগর থেকে উদ্ধার করে সাময়িক আশ্রয় দিতে ও নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।