ফের তামিলনাড়ুর ক্ষমতায় আসছেন জয়ললিতা

দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতা হারানোর আট মাসের মাথায় ফের ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসতে যাচ্ছেন জয়ললিতা জয়রাম।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2015, 04:32 AM
Updated : 22 May 2015, 04:25 PM

তামিলনাড়ু রাজ্য সরকারের ক্ষমতাসীন দল অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাগামের (এইএডিএমকে)সংসদীয় দল শুক্রবার চেন্নাইয়ে এক বৈঠকে জয়ললিতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য মনোনীত করেছে।

সব ঠিক থাকলে এইএডিএমকে কর্মী-সমর্থকদের ‘আম্মা’ শনিবারই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে পারেন, যাকে এক সময় ভারতের মানুষ চিনত তামিল ছবির নায়িকা হিসাবে।

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এইএডিএমকের সংসদীয় দলের ১৫০ সদস্যের মধ্যে ১৪৪ জন সকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে ৬৭ বছর বয়সী জয়ললিতা সভায় অংশ নেননি। 

রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও পান্নিরসেলভামকে সভা শেষ করেই জয়ললিতার বাগানবাড়িতে যেতে দেখা যায়। নেত্রীর ক্ষমতায় আরোহণের পথ করতে শুক্রবারই পান্নিরসেলভাম পদত্যাগ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।      

দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আট মাস আগে জয়ললিতাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে জেলে যেতে হয়। কর্নাটক হাই কোর্ট চলতি মাসের শুরুতে তাকে খালাস দিলে আবারও তার ক্ষমতায় ফেরার পথ তৈরি হয়। তবে নিয়ম অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তাকে বিধানসভার একটি আসনে নির্বাচিত হতে হবে।

তামিল ছবিতে জয়ললিতার ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৬১ সালে, তখনও তিনি স্কুলছাত্রী। এক সময়ের জনপ্রিয় তামিল অভিনেতা এম জি রামচন্দ্রনের হাত ধরে ১৯৮২ সালে জয়ললিতা যখন রাজনীতিতে যোগ দেন, অভিনেত্রী হিসাবে তখন তিনি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।

রামচন্দ্রন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়ার পর ১৯৯১ সালে তামিলনাড়ুর ক্ষমতায় আসেন জয়ললিতা। রাজনীতিতে দ্যুতি ছড়িয়ে পরিণত হন ‘আম্মায়’। 

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ওই মেয়াদে দুর্নীতির অভিযোগে জয়ললিতার বিরুদ্ধে মামলা করেন বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা সুব্রামানিয়াম স্বামী।

তার অভিযোগ ছিল, প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে জয়ললিতা মাত্র এক রুপি বেতন নিতেন। কিন্তু ওই সময়ে পাঁচ বছরে তিনি কমপক্ষে ৬৬ কোটি রুপির মালিক হয়েছেন।

মামলার নথি অনুযায়ী, তখন জয়ললিতার সম্পদের মধ্যে ছিল দুই হাজার একর জমি, ২৮ কেজি সোনা, ৮০০ কেজি রুপা, ১৭টি গাড়ি, সাড়ে ১০ হাজার শাড়ি, ৭৫০ জোড়া জুতা, ৯১টি হাতঘড়ি এবং কোটি টাকার প্রসাধনী। 

২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ললিতার দল দ্বিতীয়বারের মতো তামিলনাডুর ক্ষমতায় এলে বিচার যাতে প্রভাবিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে বিরোধীপক্ষের দাবির মুখে মামলাটি তামিলনাড়ু থেকে ব্যাঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতে আনা হয়।

মামলা হওয়ার ১৮ বছর পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ মামলার রায়ে ৫৪ কোটি রুপির অবৈধ সম্পদ রাখায় দায়ে মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, সেই সঙ্গে করা হয় ১০০ কোটি রুপি জরিমানা।

জয়ললিতার সহযোগী শশীকালা নটরাজনসহ  মামলার তিন আসামিকেও কারাদণ্ড দেয় আদালত।

তিন সপ্তাহ জেলে থাকার পর ভারতের সর্বোচ্চ আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান এইএডিএমকেনেত্রী। আপিল করেন হাই কোর্টে।  

গত ১১ মে কর্ণাটকের হাই কোর্ট যে রায় দেয়, তাতে নির্দোষ ঘোষণা করা হয় জয়ললিতাকে। মামলার অপর তিন আসামিও খালাস পান।

ওই রায়ের পর তামিলনাড়ুতে উল্লাসে ফেটে পড়েন জয়ললিতার সমর্থকরা। নেচে-গেয়ে, পতাকা উড়িয়ে ‘আম্মার’ জন্য তারা আনন্দ প্রকাশ করেন।

গত বছর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৩৯টি আসনের মধ্যে ৩৭টিতে জয়ী হয়ে চমক দেখায় এআইএডিএমকে। আগামী বছর হবে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন । হাই কোর্টের রায়ের পর জয়ললিতার নির্বাচনে অংশ নিতে আর বাধা নেই।