যুক্তরাজ্যে প্রচার শেষের পথে, কোন দল যাচ্ছে ক্ষমতায়?

যুক্তরাজ্যে ৭ মে’র সাধারণ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2015, 04:38 PM
Updated : 6 May 2015, 06:06 PM

সর্বশেষ জনমত জরিপগুলোর কোনোটিতে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের কাছাকাছি এবং কোনোটিতে সমান অবস্থানের কারণে কোন দল ক্ষমতায় যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবারের  নির্বাচনের আগে মঙ্গলবার থেকে শেষ দু’দিনে দেশব্যাপী সাধ্যমতো প্রচার চালিয়ে এসেছেন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। দলীয় আদর্শ ও উন্নয়নের ইশতেহার ঘোষণা করে শেষ কয়েক ঘন্টায়ও ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা।

এরই মধ্যে টিএনএস (ট্রানজেকশন নেটওয়ার্ক সার্ভিসেস) কোম্পানির একটি জরিপে দেখা গেছে,  ভোটের ঠিক আগের দিন বুধবার ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ৩৩ শতাংশ জনসমর্থন পেয়ে বিরোধী দল লেবার পার্টির তুলনায় এক পয়েন্টে এগিয়ে আছে। লেবার পার্টির জনসর্মর্থন ৩২ শতাংশ।

এছাড়া, লিবারাল ডেমক্রেট ৮ শতাংশ, ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেনডেন্স পার্টি ১৪ শতাংশ এবং স্কটিশ নেশনাল পার্টি পেয়েছে ৬ শতাংশ সমর্থন।

অন্যদিকে, গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে আইসিএম পরিচালিত অপর এক জরিপে দেখা গেছে, নির্বাচন কাছিয়ে আসার এ সময়ে কনজারভেটিভ ও লেবার দুই দলই ৩৫ শতাংশ জনসমর্থন পেয়ে সমান অবস্থানে চলে  এসেছে।

জনমত জরিপগুলোর ফল ভুল না হলে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে কোন দলই হয়ত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। ফলে কোন দলকেই সুস্পষ্টভাবে বিজয়ী বলা যাবে না। কারা সরকার গঠন করবে? কে প্রধানমন্ত্রী হবেন? এসব প্রশ্ন নির্বাচনী ফল প্রকাশের পরও অমীমাংসিত থেকে যেতে পারে।

ফলে স্মরণকালের মধ্যে এবারের নির্বাচনকে ঘিরেই যুক্তরাজ্যে  সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

বিবিসি’র রাজনীতি বিষয়ক উপসম্পাদক জেমস ল্যান্ডেল বলেছেন, রাজনীতিবীদ, জরিপ প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমকে এবার নির্বাচনের গতিবিধি বুঝতে রীতিমত সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

তবে এ পরিস্থিতির মধ্যেও নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন বুধবার কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী  ডেভিড ক্যামেরন আশা প্রকাশ করে বলেছেন, “ তার দল নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতবে।”

এখনো অনেক মানুষ ভোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে উল্লেখ করে  ক্যামেরন বলেন, “আমাদেরকে শেষ মুহূর্তে  তাদের কাছে পৌঁছতে হবে।”

ক্যামেরন প্রচার চালাচ্ছেন লন্ডনে আর লেবার পার্টির প্রার্থী এড মিলিব্যান্ড দক্ষিণ ইংল্যান্ডে।

মিলিব্যান্ড যুক্তরাজ্যে কঠোর পরিশ্রমকে আবারো পুরস্কৃত করার জন্য ভোটারদের ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কিছুটা কৌশল অবলম্বন করে মিলিব্যান্ড বলেন, “জনগণ সঠিক বিচার করবে।”

অন্যদিকে, লিবারাল ডেমক্রেট পার্টির নেতা নিক ক্লেগ বলেন, “যথেষ্ট আসন নিয়ে লিবারাল ডেমক্রেট পার্টি সরকার গঠনে শক্তিশালী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারবে বলে আমি আশাবাদী।”

ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেনডেন্স পার্টি ‘সুনির্দিষ্ট এবং খুব সম্ভবত নাটকীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে’  বলে আশা প্রকাশ করেন দলটির মুখপাত্র।

সাবেক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা লর্ড ও’নেল বলেন, ডেভিড ক্যামেরনই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। তবে কনজারভেটিভ পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না।

বৃহস্পতিবার গ্রিনিচ মান সময় অনুযায়ী, ০৬০০ থেকে শুরু হয়ে ২১০০ পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।  হাউজ অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের জন্য লড়াই করবেন প্রার্থীরা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে কোন দলকে অন্তত ৩২৬টি আসন পেতে হবে।

কিন্তু পাঁচ সপ্তাহ ধরে প্রচারণা চালিয়েও ক্যামেরনের দল বা মিলিব্যান্ডের দল, কোনোটিই জনপ্রিয়তায় বড় ধরনের কোনো ব্যবধান তৈরি করতে পারেনি। মঙ্গলবার পাঁচটি মতামত জরিপের ফলের মধ্যে দুইটিতে কনজারভেটিভ এগিয়ে, একটিতে লেবার পার্টি এগিয়ে এবং বাকি দুইটিতে দুই দল  সমান অবস্থানে ছিল।

নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থাকা না থাকা, যুক্তরাজ্যে স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ভর করায় ফলাফল নিয়ে ব্যাপক উৎকণ্ঠা ও আশার দোলাচাল দেখা যাচ্ছে।

ফের ক্ষমতাসীন হলে ইইউ’তে থাকা না থাকা নিয়ে গণভোট করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্যামেরন।

কনজারভেটিভরা বলছে,  অর্থনৈতিক কঙ্কট কাটানো, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, অভিবাসনসহ নানা বিষয়ে তাদের গৃহীত পদক্ষেপে সুফল আসায় এগুলো অব্যাহত রাখতে হবে এবং দেশকে অর্থনৈতিক সঙ্কটমুক্ত করতে হলে তাদেরকেই ভোট দিতে হবে।

অন্যদিকে, এড মিলিব্যান্ডের লেবার পার্টি বলছে, কনজারভেটিভদের নীতির ফলে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েছে, জীবনযাত্রার মান কমেছে। ধনীদের ওপর কর কমিয়ে এবং সেবা ও কল্যাণ ভাতা সংকুচিত করে সাধারণ মানুষকে আর্থিক সঙ্কটে ফেলা হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুয়ের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে হলে লেবার পার্টিকেই ভোট দিতে হবে।

অভিবাসন ইস্যুর পাশাপাশি এবারের নির্বাচনে স্কটল্যান্ডের ইস্যুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নির্বাচনী জরিপের ফলে দেখা যাচ্ছে, স্কটল্যান্ডের জাতীয়তাবাদীরা তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি নির্বাচনে ৫৬টির মতো আসন পেলে বড় দলগুলো তাদের সাথে জোট করতে পারে, এর ফলে তারা জাতীয় রাজনীতিতে কিংমেকার হয়ে উঠতে পারে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পাঁচ বছর আগে ব্রিটেনে প্রথমবারের মতো জোট সরকার গঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে ক্যামেরন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়ে নিক ক্লেগের মধ্যপন্থি লিবারেল ডেমক্রেট দলের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করেছিলেন।

যুক্তরাজ্যের অনেক নাগরিকের ধারণা ছিল, এটি একবারই ঘটেছে।

কিন্তু স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ও ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেনডেন্স পার্টির (ইউকেআইপি) উত্থান দেশটির রাজনৈতিক মানচিত্রকে বেশ কয়েকটি অংশে বিভক্ত করে দিয়েছে। এরা প্রধান দুই দলের জনসমর্থনে ভাগ বসিয়েছে।