ভূমিকম্প লণ্ড-ভণ্ড হয়ে যাওয়া দেশটিতে বিরাজ করছে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। ত্রাণ পৌঁছে দিতে হিমশম খাচ্ছে ত্রাণকর্মীরা।
একের পর এক ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন অনুভূত হওয়ার কারণে বারবার বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে কাঠমান্ডু বিমানবন্দর। আর এতে অন্যান্য বিমানের পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ত্রাণবাহী বিমান চলাচলও।
গুরুত্বপূর্ণ সব মহাসড়কগুলো বন্ধ হয়ে আছে ভূমিধসে। বির্স্তীণ এলাকাজুড়ে বহু গ্রাম বিদ্যুৎ, পানিহীন হয়ে পড়েছে। নেই খাবার কিংবা অন্য কোনো সহায়তা।
রাজধানীতে বাইরের দেশগুলো থেকে নানা ধরনের ত্রাণ এসে পৌঁছতে শুরু করলেও যোগাযোগ, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবং প্রয়োজনীয় হাতিয়ারের অভাবে বিপর্যস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
কাঠমান্ডুর বাইরে এক ছাত্রী জানায়, তারা পরিবারসহ আশ্রয় নিয়ে আছে এক খেলার মাঠে একটি প্লাস্টিক শিটের নিচে। এলাকাটিতে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই ছাত্রীর উক্তি, “সরকার থেকে কেউ এক গ্লাস পানি দিয়েও আমাদের সাহায্য করতে আসেনি। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেও কেউ আসেনি। একেবারেই অসহায় অবস্থায় আমরা এখানে পড়ে আছি।”
কাঠমান্ডুর পূর্বে বখতপুর শহরের এক অধিবাসী জানান, “ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে ত্রাণশিবিরে বাস করা মানুষেরা ক্রমেই অস্থির এবং ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। সবকিছুই বিতরণ হচ্ছে একটা বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে। সবচেয়ে জরুরি সাহায্যগুলো আসছে কম আর প্রত্যেকেই তা নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে।”
ভূমিকম্পে মৃতদেহ উদ্ধার তৎপরতা থেকে এখন দৃষ্টি জীবিতদের দিকে ফেরার এ সময়ে এখন রোগ ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে সতর্ক করছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ও কর্মকর্তারা। রোগ ছড়িয়ে পড়াটা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হয়ে দেখা দিয়েছে। মে মাসের শেষেই নেপালে শুরু হবে প্রচণ্ড মৌসুমি বৃষ্টিপাত।
জাতিসংঘের শিশু তহবিলের হিসাবমতে প্রায় ১০ লাখ শিশু ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা পানিবাহিত রোগসহ আরো নানারকম সংক্রামক রোগে ভোগার ঝুঁকিতে আছে।
অক্সফামের মানবিক ত্রাণ বিষয়ক কর্মকর্তা জুবিন জামান বলেন, বহু মানুষ খাবার সঙ্কটে আছে এবং টয়লেট সুবিধা ছাড়া বাস করছে। ভূমিকম্পে ভবন ধসে যত মানুষ মরেছে রোগে ভূগে তার চেয়েও বেশি মানুষের মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা আছে। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না। পরাঘাত অনুভূত হচ্ছে। তার ওপর গত দু’দিনের বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে।