ভূমিকম্পের কয়েক সেকেন্ড আগে পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব 

কয়েক দশকের গবেষণা সত্ত্বেও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়ার কোনো পদ্ধতি আমাদের এখনও জানা নেই, তবে কয়েক দিন বা ঘন্টা নয়, কয়েক সেকেন্ড আগে পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।   

>>রয়টার্স
Published : 27 April 2015, 09:13 AM
Updated : 27 April 2015, 09:13 AM

১৩’শ শতাব্দি থেকে নেপালের ভূমিকম্পের রেকর্ড রাখা হচ্ছে, এখানে প্রতি ৭৫ বছর পর পর বড় ধরনের একটি ভূমিকম্প হয় এটিও সবার জানা। কিন্তু ৭৫ বছর পর ঠিক কখন, কোথায় ভূমিকম্প শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। আবার ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় অবস্থানের কারণে এলাকটিতে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে।  
 
“ভূমিকম্প পূর্বাভাস দেয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের এখনও হয়নি,” বলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ পেগি হেলওয়েগ। 
 
নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুর আশপাশের এলাকায় ১৯৩৪ সালে একবার এবং ১৯৮৮ সালে আর একবার বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিল। চলতি মাসের প্রথম দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা কাঠমাণ্ডুতে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। তারা আগামী কয়েক দশকের মধ্যে এখানে বড় ধরনের আরেকটি ভূমিকম্প হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই এ ধরনের কিছু ঘটবে বলে আভাস দিতে পারেননি তারা। 
 
কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ আগে পূর্বাভাস দেয়ার বিষয়টি এখনও অনেক দূরের বিষয়। এ বিষয়ে অগ্রগতি যা হয়েছে তা হল, কয়েক সেকেন্ড আগে নিখুঁত পূর্বাভাস দিয়ে জীবন বাঁচানো সম্ভব হতে পারে।
 
কিন্তু এখানেও বিশ্ব ধনী-গরীবে বিভক্ত হয়ে আছে। বিশ্বের হাতে গোনো ভূমিকম্পপ্রবণ কয়েকটি দেশেই কেবল ভূমিকম্পের কয়েক মূহুর্ত আগে এ ধরনের সতর্কতা জারি করার ব্যবস্থা আছে। এসব জায়গায় ভূমিকম্পের মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে সতর্কতা জারি করা যায়। 
 
মেক্সিকো, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের পূর্বাভাস দেয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে সর্বাধুনিক ব্যবস্থাটি আছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। রাজ্য ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এ ব্যবস্থাটি নাম শেকএলার্ট।
 
এ ব্যবস্থায় সিস্মোমিটার স্থাপন করা বেশ কয়েকটি স্টেশন আছে। এসব সিস্মোমিটারে ভূমিকম্পের সময় তৈরি হওয়া ‘পি-ওয়েভ’ সনাক্ত করা যায়। নিরীহ এই ওয়েভগুলো ভূ-স্তরগুলোর ভিতর দিয়ে ধ্বংসাত্মক ‘এস-ওয়ভে’র আগেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।    ‘পি-ওয়েভে’ মাটি কাঁপে না, কিন্তু ‘এস-ওয়েভে’ কাঁপে, ভূমিকম্প বলতে আমরা ‘এস-ওয়েভ’কেই বুঝি। 
 
কোনো এক স্টেশনের সিস্মোমিটারে পি-ওয়েভে ধরা পড়লে তা তাৎক্ষণিকভাবে টেলিফোন লাইন, মোডেম বা উপগ্রহের মাধ্যমে স্থানীয় প্রধান ভূকম্পন গবেষণা কেন্দ্রে জানিয়ে দিতে পারে। গবেষণা কেন্দ্রের অত্যাধুনিক কম্পিউটারে সেই ওয়েভের উৎস ও তীব্রতা হিসাব করে ভূমিকম্পের ধরন বোঝা যায়। 
 
২০১৪ সালে শেকএল্যার্ট নাপা ভূমিকম্পের পাঁচ থেকে ১০ সেকেন্ড আগে সান ফ্রান্সিসকো বে এলাকায় ভূমিকম্পের সতর্কতা জারি করতে সক্ষম হয়েছিল । 
 
নেপালের এ ধরনের ভূমিকম্প পূর্বাভাস দেয়ার ব্যবস্থা থাকলে ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড আগে সতর্কতা জরি করা যেত, তাতে মানুষ মাথায় বালিশ দিয়ে টেবিলে নীচে আশ্রয় নিয়ে বা দ্রুত ঘরবাড়ি থেকে বের হয়ে নিজেদের জীবন বাঁচাতে পারতো। 
 
কিন্তু এ ধরনের ব্যবস্থা বেশ ব্যয় বহুল। যুক্তরাষ্ট্রের পুরো পশ্চিম উপকূলজুড়ে শেকএলার্ট ব্যবস্থা বসাতে তিন কোটি ৮৩ লাখ ডলার (৩০৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা) ব্যয় করতে হয়েছে, আর এই ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণে গত বছর ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৬১ লাখ (১২৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা) ডলার।