আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বলছে জার্মানিও

একশ বছর আগে তুর্কি অটোমান শাসকদের নৃশংসতায় প্রায় ১৫ লাখ আর্মেনীয় হত্যার ঘটনাকে   ‘গণহত্যা’ বলছে জার্মান সরকারও।

>>রয়টার্স
Published : 24 April 2015, 12:59 PM
Updated : 24 April 2015, 12:59 PM

জার্মানির পার্লামেন্ট শুক্রবার বিস্ময়কর এক ভোটে আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে একটি প্রস্তাবনা অনুমোদন করেছে। এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে তুরস্কের সঙ্গে কূটনৈতিক বিবাদে জড়ানোর ঝুঁকিতে পড়ল দেশটি।

এর আগে পোপ ফ্রান্সিস গত ১৩ এপ্রিল প্রকাশ্যে আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ডকে ‘বিংশ শতাব্দীর প্রথম গণহত্যা’ অভিহিত করে তুরস্কের সঙ্গে বিরোধে জড়ান। তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল তুরস্ক। এবার তুরস্ককে উপেক্ষা করে্ গণহত্যার কথা বলল জার্মানি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার এবং বহুসংখ্যক জাতিগত তুর্কি অধ্যুষিত জার্মানি পার্লামেন্টে ‘গণহত্যা’ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাশ করে তার অবস্থান থেকে অনেকখানি সরে এল।

ফ্রান্স ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর বিপরীতে বার্লিনই দীর্ঘদিন যাবৎ ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করার বিরোধী ছিল। এ যাবৎ শুধু বামদলের প্রস্তাবেই ‘গণহত্যা' শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছিল; অন্যান্য দলগুলো ‘বিতাড়ন ও হত্যাকাণ্ড' বলত৷ কিন্তু সে পরিস্থিতি এখন বদলে গেল।

শুক্রবার (২৪ এপিল) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত বুকে নিয়ে আর্মেনীয়দের গণহত্যার শতবর্ষ পূর্তি পালনের দিনটিতে জার্মানির পার্লামেন্টের অধিবেশনেও এ দিনটি স্মরণ করা হয়। আর এসময়ই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্ডেস্টাগে সব পার্লামেন্টারি দলগুলো একযোগে প্রস্তাবনার পক্ষে ভোট দেয়।

আর্মেনীয়দের দাবি, ১৫ লাখ আর্মেনীয় তুর্কি অটোমানদের হত্যাযজ্ঞের স্বীকার হয়েছিল। কিন্তু তুরস্ক সব সময়ই এ গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। ঐ সহিংসতা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিণতিতে হয়েছিল বলে দাবি তাদের।

ফলে জার্মানির পদক্ষেপ তুরস্ককে ক্ষেপিয়ে তুলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তুরস্ক এ সপ্তাহের শুরুতে অস্ট্রিয়ার পার্লামেন্টে গৃহীত একই ধরনের একটি প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিল।

১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ২৪ ও ২৫ এপ্রিল- দুই দিনে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ নিহত হয় আর্মেনিয়ায়৷ সেই যুদ্ধের পর ধ্বংস হয় অটোমান সাম্রাজ্য৷ অটোমানদের হামলাতেই নিহত হয়েছিল এ মানুষগুলো। পরে ১৯২৩ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের ভস্মের ওপর গড়ে ওঠে আধুনিক প্রজাতান্ত্রিক তুরস্ক৷

ওই ইতিহাসকে স্মরণ করে ২৪ এপ্রিল গণহত্যার শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন করছে আর্মেনিয়া৷ তারা চায় সারা বিশ্বও সেই হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ই বলুক৷ 

শুক্রবার আর্মেনিয়া স্মরণানুষ্ঠানের পাশাপাশি হাজার হাজার লোক শোভাযাত্রার পাশাপাশি  রাজধানী উপকণ্ঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি  শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করে।  নিহতদের স্মরণে আয়োজিত  অনুষ্ঠানে বিদেশি নেতাদের মধ্যে রাশিয়া ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

১৯১৫ সালের ওই হত্যাকাণ্ডকে আর্মেনিয়া ‘গণহত্যা’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্য অনেকদিন থেকেই দাবি জানিয়ে আসছে। আর্মেনিয়াসহ অনেক দেশের ইতিহাসবিদরাও মনে করেন আর্মেনীয়দেরকে অটোমান বাহিনী ১৯১৫ সালে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। আরো বেশ কিছু পশ্চিমা দেশও এ বিষয়ে একমত৷

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়েপ এর্দোয়ান এর ঘোর বিরোধিতা করে আসছেন। কিন্তু এ উদ্যোগ এখন আর কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টও আর্মেনীয়  হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা'র স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব পেশ করেছে৷