৯/১১ হামলায় সৌদি আরবের যোগসূত্র আড়াল করেছে এফবিআই!

যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় সৌদি আরবের যোগসূত্র থাকার বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই আড়াল করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2015, 04:52 PM
Updated : 15 April 2015, 04:52 PM

যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ‘দ্য নিউ ইয়র্ক পোস্ট’ এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে বলেছে, টুইন টাওয়ারে  ৯/১১ হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে সৌদি আরবের নামকরা একটি পরিবারের হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের বিষয়টি তদন্ত করেছিল এফবিআই।

কিন্তু ওই তদন্তের বিস্তারিত তথ্য কংগ্রেস কমিটির (এ কমিটি হামলার বিষয়টি দেখভাল করছিল) কাছ থেকে আড়াল করে রাখা হয় বলে দাবি করেছে পত্রিকাটি। ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’ পত্রিকা এ খবর দিয়েছে।

খবরে বলা হয়, পরিত্যক্ত বাড়িটিতে এসাম ঘাজ্জাউই নামে একজন বাস করতেন। তৎকালীন সৌদি বাদশাহ কিং ফাহাদের ভাতিজার উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। বাড়িটি ছিল ঘাজ্জাউই’র মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের। ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলার মাত্র ১৫ দিন আগে তারা ফ্লোরিডার ওই বাড়িটি ছেড়ে সৌদি আরবে ফিরে যান।

পরে দেখা যায়, বাড়িতে নতুন গাড়ি, দামী আসবাব পড়ে রয়েছে। এমনকি বাড়ির ফ্রিজেও খাবার বোঝাই করা ছিল। যা প্রতিবেশীদের মনে সন্দেহের উদ্রেক ঘটায় এবং এর ভিত্তিতেই তদন্ত হয়।

এফবিআই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করলেও পরে তদন্তের ফল বাতিল করার বিষয়টি স্বীকার করেছে।

১২৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে এফবিআই পর্যালোচনা কমিশনকে জানায়, প্রতিবেদন ‘খুবই খারাপ ভাবে লেখা হয়েছে’ এবং পুরো বিষয়টি ‘অপ্রমাণিত’।

“পরে এফবিআই’র অন্য কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে জেরা করলে বিশেষ প্রতিনিধি যিনি ওই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন তিনি ঠিক কিসের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করেন বা কেন তিনি ওভাবে প্রতিবেদন লিখেছিলেন সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন।”

এফবিআই তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছিল, “ওই পরিবারের কোন সদস্যের ৯/১১ বিমান ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ এফবিআই পায়নি। এমনকি ৯/১১ হামলার ছক কষায় তাদের জড়িত থাকারও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”

কয়েক বছর ধরে চলা এ তদন্ত অনুযায়ী, এফবিআই হামলার ঘটনায় কয়েকজনের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা এবং সন্ত্রাসী ও এর দোসরদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশের বিষয়টি উদঘাটন করেছিল। আরো তদন্তের পর এফবিআই অন্তত একজন সন্দেহভাজনের যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় প্রবেশের বিষয়টিও শনাক্ত করতে পেরেছিল।

কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থাটি তাদের প্রাপ্ত তথ্য কংগ্রেসকে জানায়নি এমনকি ৯/১১ কমিশনের প্রতিবেদনেও বিষয়টি উল্লেখ করেনি বলে জানানো হয়েছে খবরে।

ঘাজ্জাউইর জামাতা তাদের যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের বিষয়টির এফবিআই তদন্তের খবর পাওয়ার পর বলেছিলেন, “আমার ৯/১১ হামলার অপরাধীদের সঙ্গে বা জঘন্য ওই হামলার সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিল না। এ হামলা যুক্তরাষ্ট্র এবং মানবতাবিরোধী। আমার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগ উঠেছে তা শুনে আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি এবং এর কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

হঠাৎ বাড়ি ছাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি হঠাৎ করে বাড়ি ছাড়িনি। বরং সেসময় আমি সৌদি আরবের তেল কোম্পানি ‘আরামকো’ তে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা করছিলাম।” তার সৌদি আরবে চলে যাওয়ার বেশ কয়েক সপ্তাহ পর তার স্ত্রী ও সন্তানরা সেখানে যান বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে সাবেক ডেমোক্র্যাট সিনেটর বব গ্রাহাম ‘নিউ ইয়র্ক পোস্ট’ পত্রিকাকে বলেন, তার বিশ্বাস এফবিআই ওই হামলায় সৌদি আরবের কারো যোগসাজশ থাকার বিষয়টি আড়াল করেছে। বব গ্রাহাম কংগ্রেসের তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন।

তিনি বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদনের শেষ ২৮ পাতায় প্রাথমিকভাবে ৯/১১ হামলায় অর্থায়নে কারা জড়িত সে ব্যাপারে তথ্য দেয়া হয়। সেখানে খুব জোরালভাবে এ হামলায় সৌদি আরবের নাগরিকের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হওয়ার ইঙ্গিতও ছিল।”

গ্রাহাম জানান, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ২৮ পাতার এ গোপন প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করুন।