বুধবার এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
শিয়া হুতিদের হাতে ক্ষমতাচ্যুত দেশটির সুন্নি প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মনসুর হাদির অনুগত সেনা ও বেসামরিক বাহিনী এই শহরটি থেকেই হুতিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত অনুযায়ী শহরটির পতন হলে দেশে নিজের শেষ অবস্থানটুকুও হারাবেন প্রেসিডেন্ট হাদি।
বৃহস্পতিবার হাদি এডেন ছেড়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন। তাকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার প্রত্যয়ে হুতি ও মিত্র সেনাবাহিনীর অংশটির অবস্থান লক্ষ করে এক সপ্তাহ ধরে টানা বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন সুন্নি আরব দেশগুলোর জোট বাহিনী।
জোট বাহিনী ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে হুতি বিদ্রোহীদের অবস্থান লক্ষ করে সাগরে অবস্থানরত যুদ্ধজাহাজ থেকেও গোলাবর্ষণ করছে। এরপরও এডেন অভিমুখে হুতিদের অগ্রযাত্রা থামানো যায়নি।
আর মাসেরা টেলিভিশনকে দেয়া এক বক্তব্যে হুতিদের মুখপাত্র মোহাম্মদ আব্দুল সালাম বলেছেন, “আমরা বলতে পারি, ইয়েমেনে এক সপ্তাহ বোমাবর্ষণ করেও আগ্রাসীরা কোনো ফল পায়নি। আজ এডেনে এই বিজয় তাদের অভিযানকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আগ্রাসী রাষ্ট্রগুলোকে চুপ থাকতে বাধ্য করেছে।”
প্রতিক্রিয়ায় সৌদি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আহমদ অ্যাসেরি বলেছেন, ২৬ মার্চ জোট বাহিনী বিমান হামলা শুরু করার আগে থেকেই হুতি বাহিনী এডেনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল এবং শহরটির বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন লড়াই করছিল। তাই সেখানে হুতিদের ট্যাঙ্ক বাহিনীর উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা সবসময়ই ছিল, কথা আর না বাড়িয়ে দাবি করেন তিনি।
ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহ’র অনুগত সেনা ইউনিটগুলো হুতিদের সমর্থন দিচ্ছে।
এদের সমর্থনে ছয়মাস আগে দেশটির রাজধানীয় সানা দখল করে হাদিকে বন্দি করে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল হুতি বাহিনী।
পরে সানা থেকে পালিয়ে এডেনে আশ্রয় নিয়ে পদত্যাগ অস্বীকার করে নিজেকে বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাবি করেন হাদি। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সৌদি আরবের কাছে সাহায্য চান তিনি।
তবে ইতোমধ্যেই এডেন ছাড়া ইয়েমেনের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নিজেদের সবচেয়ে প্রভাবশালী বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে হুতিরা।
শিয়া হুতিদের উত্থানে শঙ্কিত সৌদি আরব হাদির অনুরোধে সাড়া দিয়ে আরো নয়টি আরব দেশের সহযোগিতায় হুতি ও সালেহ অনুগত সেনা অবস্থানগুলোতে তীব্র বিমান হামলা শুরু করে।
এডেনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা রকেট চালিত গ্রেনেড বহনকারী একদল যোদ্ধাকে চারটি ট্যাঙ্ক, তিনটি সাঁজোয়া যানসহ শহরের খোর মাকসার এলাকায় দেখেছেন। এই এলাকাটি এডেনের কেন্দ্রীয় এলাকাকে শহরের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে যুক্ত করেছে।
এই ইউনিটটিকে এডেনের হাদিপন্থি বেসামরিক বাহিনীর যোদ্ধারা তীব্রভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে বলে জানিয়েছেন তারা। রাস্তায় আট হুতি যোদ্ধার লাশ পড়ে থাকতেও দেখেছেন তারা।
শহরের বিভিন্ন অংশে নিক্ষিপ্ত রকেটের বিস্ফোরণের মধ্যেই অনেক মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করে। অনেকে বন্দর ছেড়ে যেতে থাকা একটি জাহাজ ধরারও চেষ্টা করছিল।
এর আগে বুধবার, হুতি বাহিনী ও মিত্র সেনা ইউনিটগুলোর সঙ্গে হাদি বাহিনী ও প্রতিরোধকারী সুন্নি নৃগোষ্ঠীর যোদ্ধাদের লড়াইয়ে বহু মানুষ হতাহত হয়।