নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বুহারি জয়ী

নাইজেরিয়ার ইতিহাসের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন সম্মিলিত বিরোধীদলীয় প্রার্থী সাবেক সামরিক শাসক মুহাম্মাদু বুহারি। 

রয়টার্স
Published : 1 April 2015, 04:44 AM
Updated : 1 April 2015, 05:51 AM

তিনদশক আগে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতা দখল করেছিলেন তিনি, এবার তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন। 
 
বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত হওয়ার পর মঙ্গলবার দেশটির ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথন পরাজয় স্বীকার করে বুহারিকে অভিনন্দন জানান। 
 
জোনাথনের নজিরবিহীন এই পদক্ষেপে নির্বাচনপরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। 
 
নির্বাচনের সর্বশেষ যে ফলাফল বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে এসেছে, তাতে দেখা যায়, বুহারি পেয়েছেন এক কোটি ৫৪ লাখ ভোট আর প্রেসিডেন্ট জোনাথন পেয়েছেন এক কোটি ৩৩ লাখ ভোট। 
 
ফলাফল ঘোষণার পর এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জোনাথন তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং নিজের সমর্থকদের শান্ত থাকার অনুরোধ করে বলেছেন, “কারো রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাই একজন নাইজেরীয়র রক্তের চেয়ে বেশি মূল্যবান নয়।”
 
“আমাদের প্রিয় দেশের একতা, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি যে কোনো কিছুর চেয়েই বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” বলেছেন তিনি। 
 
নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজা থেকে বুহারির অল প্রগ্রেসিভ কংগ্রেসের (এপিসি) মুখপাত্র লাই মোহাম্মদ বলেছেন, “৫টা বাজার পাঁচ মিনিট আগে প্রেসিডেন্ট জোনাথন জেনারেল বুহারিকে ফোন করে নির্বাচনে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।” 
 
“আশঙ্কা ছিল, তিনি হয়তো পরাজয় মেনে নেবেন না, কিন্তু তিনি যা করেছেন তাতে তিনি নায়ক হয়ে গেছেন। তার ফোনের পরপরই নাটকীয়ভাবে শঙ্কা দূর হয়ে গেছে।” 
 
এ সময় উজ্জ্বল বর্ণের পোশাক পরিহিত নারীরা লাই মোহাম্মদের চারপাশে নাচগান করছিল ও জয়োচ্ছ্বাসে উলুধ্বনি দিচ্ছিল।

২০১১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বুহারি পরাজিত হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলীয় শহর কাদুনায় দাঙ্গায় ৮০০ জন নিহত হয়েছিলেন। এবার ওই শহরটিতে বুহারির সমর্থকরা রাস্তায় বের হয়ে পতাকা উড়িয়ে, নেচেগেয়ে নিজেদের প্রিয় নেতার বিজয়ের আনন্দ উদযাপন করছিল। 
 
১৯৯৯ সালে সামরিক শাসনের অবসানের পর থেকে জোনাথনের পিপলস ডেমক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) নাইজেরিয়ার ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু ধারাবাহিক দুর্নীতি কেলেঙ্কারি ও দেশটির উত্তরাঞ্চলে বোকো হারাম জঙ্গিদের বিদ্রোহের কারণে জোনাথনের জনপ্রিয়তায় ধস নামে।
 
টেলিভিশনে ফলাফল ঘোষণার সময় রাজধানী আবুজার একটি বাড়িতে টেলিভিশনের সামনে শান্তভাবে বসে ফলাফল শুনছিলেন বুহারি। এসময় তার পরনে ছিল সাদা একটি কাফতান, মাথায় টুপি ও পায়ে স্যান্ডেল। 
 
১৯৮৩ সালে নাইজেরীয় জেনারেল বুহারি এক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। কিন্তু মাত্র ১৮ মাস পর অন্যে এক জেনারেল তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ওই সময় থেকে নিজেকে গণতন্ত্রপন্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সাধারণ রাজনীতিকের জীবন বেছে নেন তিনি। 
 
এরপর থেকে বেশ কয়েকবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন তিনি। কিন্তু প্রতিবারই তার প্রতি জনসমর্থন আগের তুলনায় বাড়তে দেখা গেছে।
 
নাইজেরীয় রাজনীতির ক্লেদাক্ত পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেয়া এই জননেতা আড়ম্বরহীন জীবনযাপন করেন।