গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ইয়েমেন

কয়েক মাসের বিক্ষিপ্ত লড়াইয়ের পর ইয়েমেনের বিবদমান শীর্ষ দুটি পক্ষ দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

রয়টার্স
Published : 24 March 2015, 05:22 AM
Updated : 24 March 2015, 08:04 AM

পক্ষদুটি সাহায্যের প্রত্যাশায় প্রতিবেশী সৌদি আরব ও এর আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এক্ষেত্রে অনুকূল সাড়া পেলে ইয়েমেনজুড়ে সর্বাত্মক লড়াই ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

২০১৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী সানা দখল করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে শিয়া হাউথি আন্দোলনের বিদ্রোহীরা। 
 
অপরদিকে রাজধানী থেকে বিতারিত সুন্নি প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মনসুর হাদি সশস্ত্র অনুসারীদের সমর্থনে বন্দর শহর এডেন থেকে রাজধানীতে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। 

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রশাসনে বিভক্ত দেশটিতে লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়ছে। এরই মধ্যে লড়াইরত উপদলগুলি বিমান যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহ হাউথি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছেন। দেশটির সেনাবাহিনীর বৃহত্তর অংশটি সালেহ অনুগত। তারা হাউথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। অপরদিকে সেনাবাহিনীর এডেনে অবস্থানরত অংশটি প্রেসিডেন্ট হাদির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। 

শিয়াদের উত্থানে ভীত অনেক সুন্নি গোষ্ঠীও হাদির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। 
এই অবস্থায় তৃতীয়পক্ষ হিসেবে আছে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী আরব উপদ্বীপের আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) । জঙ্গি এই গোষ্ঠীদুটি পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার অপেক্ষায় আছে। এতে ১৯৯৪ সালে শেষ হওয়া গৃহযুদ্ধের পর ইয়েমেন আবারো আরেকটি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।  
ইয়েমেনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের কার্নেগি সেন্টারের গবেষক ফারিয়া আল মুসলিমি বলেছেন, “যারা বলেছে ইয়েমেন গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এবং যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে, তাদের ভুল প্রমাণ করে আশ্চর্যজনকভাবে বেশ কয়েক বছর স্থিতিশীল ছিল ইয়েমেন। কিন্তু দৈবের ওপর নির্ভর করার সময় সম্ভবত শেষ হয়ে গেছে।” 
হাউথি বিদ্রোহীরা যেন ইয়েমেনের আকাশের দখল নিতে না পারে সেজন্য সোমবার উপসাগরীয় সুন্নি দেশগুলোর কাছে সাহায্য চেয়েছেন ইয়েমেনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ ইয়াসিন।
আল-শারাক আল-আওসাত সংবাদপত্রকে তিনি বলেছেন, “উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল, জাতিসংঘ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আমরা একটি উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকার আবেদন জানিয়েছি, এবং হাউথিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিমানবন্দরগুলো থেকে সামরিক বিমানের ব্যবহার ঠেকানোর কথাও বলেছি।” 
রোববার জাতিসংঘের মধ্যস্থতাকারী জামাল বেনোমার বলেছেন, “ইয়েমেনকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এই যুদ্ধে হাউথি বা হাদি কেউ জয়ী হবে না।” 
নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি বলেছেন, এসব পক্ষের পরস্পরবিরোধী লড়াই ইয়েমেনে একটি প্রলম্বিত গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে, যাতে ইরাক-লিবিয়া-সিরিয়ায় মতো অবস্থা তৈরি হবে। 
হাউথি বেসামরিক বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হাদিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর থেকেই ইয়েমেনে বিশৃঙ্খলা ও লড়াই ছড়িয়ে পড়ে। 
হাদিকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদে ক্ষুব্ধ হয় প্রতিবেশী সুন্নি শাসিত সৌদি আরব। ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলের পার্বত্য এলাকার হাউথি বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে দেশটি।