নাগাল্যান্ডে জেল ভেঙে ঢুকে ধর্ষণের আসামিকে পিটিয়ে হত্যা

নাগাল্যান্ডে জেল ভেঙে ঢুকে ধর্ষণ মামলায় বিচারাধীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে সেই লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে উন্মত্ত জনতা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2015, 06:52 AM
Updated : 6 March 2015, 10:15 AM

দিল্লির নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রের প্রদর্শণ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যের ডিমাপুরে নজিরবিহীন এ ঘটনা ঘটে।

পশ্চিবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার লিখেছে, পুলিশ-প্রশাসন বা কারাগারের নিরাপত্তা কর্মীরা জনতার এই রোষের মুখে ‘স্রেফ পুতুলের মতো’ দাঁড়িয়ে ছিলেন।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, পুলিশের চোখের সামনে জনতার হাতে নিহত সৈয়দ ফরিদ খান (৩৫) আসামের বাংলাভাষী এক মুসলিম ব্যবসায়ী।তিনি ছিলেন পুরনো গাড়ি বিক্রেতা। গত ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি ডিমাপুরের এস ডি জৈন কলেজের নাগা এক ছাত্রীকে চার দফায় ধর্ষণের অভিযোগে একদিন পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে রাখা হয় ডিমাপুর কারাগারে।

মেয়েটির অভিযোগ, তাকে মদ্যপানে বাধ্য করা হয়। ধর্ষনের ঘটনা জানালে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

পরে তিনি থানায় অভিযোগ করলে তদন্তে নেমে পুলিশ ফরিদ খানকে গ্রেপ্তার করে। এরপর পুরো রাজ্যে ছড়িয়ে পরে উত্তেজনা।

আনন্দবাজার লিখেছে, “এই নিয়ে গত দু’দিন ধরে ডিমাপুরে বনধ চলে। বের হয় বিরাট মিছিল। ধর্ষণের ঘটনা নাগা বনাম অ-নাগা দ্বন্দ্ব অন্য মাত্রা পেয়েছিল। এই ঘটনাকে সামনে রেখে, নাগা ছাত্র সংগঠন ও বিভিন্ন সংগঠন দাবি তুলেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। রাজ্য থেকে অবিলম্বে সব বাংলাদেশি নাগরিককে বের করার দাবিতেও তারা সরব হয়ে উঠেছে।”

পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। এর মধ্যেই বুধবার এস ডি জৈন কলেজের ছাত্ররা দুটি মার্কেটে হামলা চালিয়ে দোকানপাটে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

এরপর বৃহস্পতিবার প্রায় চার হাজার লোক মিছিল নিয়ে কারাগারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। কিন্তু বাধা উপেক্ষা করে জনতা এরপর কারাগারে ঢোকার চেষ্টা করে এবং দুটি ফটক ভেঙে ফেলে। ভেতরে ঢুকে কারা-অফিসেও ভাঙচুর চালায় তারা।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কারা কর্তৃপক্ষ এরপর কারাগারের মূল ফটক খুলে দিতে বাধ্য হয় এবং জনতা ওই আসামিকে বের করে আনে। তাকে নগ্ন করে পেটাতে পেটাতে শহরের কেন্দ্রস্থল ক্লক টাওয়ারের দিকে রওনা হয় তারা। মাঝপথে একটি মোটর সাইকেলের পেছনে ওই যুবককে বেঁধে রাস্তা দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয় ক্লক টাওয়ারে।

খবর পেয়ে জেলাপ্রশাসক, পুলিশ সুপার ও কয়েকশ পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও তারা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হন। পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং ফাঁকা গুলি ছুড়েও জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানায়, গণপিটুনীতেই সন্দেহভাজন সেই আসামির মৃত্যু হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা লাশটিই ক্লক টাওয়ারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়। এরপর দড়ি ছিঁড়ে পড়ে গেলে দেহটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

জেলার পুলিশ প্রধান মিরিন জামির বার্তা সংস্থা আইএএনএসকে বলেন, “পুলিশ পরে ফাঁকা গুলি ছুড়ে জনতাকে হটিয়ে দিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।”

তিনি বলেন, প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সব রকম চেষ্টা করলেও জনতাকে থামানো যায়নি। শহরে এখনো উত্তেজনা চলছে।   

এদিকে এই বিশৃঙ্খলার সুযোগে ডিমাপুর কারাগারের প্রায় ৫০০ কয়েদির মধ্যে অন্তত তিন জঙ্গি পালিয়ে গেছে বলে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণের পর হাসপাতালে মারা যান এক প্যারামেডিকেল ছাত্রী, গণমাধ্যমে যার খবর প্রচার করা হয় ‘নির্ভয়া’ ছদ্মনামে।

ওই ঘটনায় ভারতজুড়ে বিক্ষোভ হয়, দোষীদের দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড।

আলোচিত ওই ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়াস ডটার’ নামের একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা লিসলে উডউইন। এতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাসচালক মুকেশ সিংয়ের সাক্ষাৎকার রয়েছে, যাতে ধর্ষণের জন্য মেয়েদেরই দায়ী করেন ওই অপরাধী।

৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে টেলিভিশনে ‘ইন্ডিয়াস ডটার’ সম্প্রচারের কথা থাকলেও এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।  এ নিয়ে পার্লামেন্টেও তুমুল বিতর্ক হয়।

তবে বিবিসি ওই তথ্যচিত্র সম্প্রচারের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানিয়েছে।