তুর্কি লেখক ইয়াসার কেমালের মৃত্যু

তুরস্কের অন্যতম খ্যাতিমান লেখক ইয়াসার কেমাল মারা গেছেন। শ্বাসকষ্ট ও বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি মারা যান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2015, 08:13 AM
Updated : 1 March 2015, 08:13 AM

ইস্তাম্বুলের একটি হাসপাতালে ৯২ বছর বয়সী এই লেখকের মৃত্যু হয় বলে বিবিসি জানিয়েছে।
 
ইয়াসার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়া তুরস্কের প্রথম লেখক। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার লেখা অনূদিত হয়েছে।
 
গেল সপ্তায় তার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবণতি ঘটে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
 
কেমাল ছিলেন একজন আদিবাসী কুর্দি। তিনি তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘মেমেদ, মাই হক’ ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করেন। 
 
উপন্যাসটি বিশ্বব্যাপী ৪০ টি ভাষায় অনূদিত হয়। তার নয়টি উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তার হাত দিয়েই তার্কিশ ভাষা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।
 
ইয়াসার কেমালের মৃত্যুতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতগুলু এক বিবৃতিতে বলেন, তিনি এই মহান লেখক ও শিল্পীর প্রয়াণে শোকাহত।
 
ইয়াসার কেমাল শৈশবে এক দুর্ঘটনায় তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি নিজের পিতাকে এক দত্তক এতিম ছেলের হাতে খুন হতে দেখেন।
 
ছোট্ট গ্রামের অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষের চিঠি লিখে দেয়ার মাধ্যমে তিনি তার লেখকজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে একজন সফল ঔপন্যাসিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান।
 
তার লেখায় মানুষ এবং প্রকৃতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। নিজের রচনাকে তিনি সর্বহাদের মঙ্গলের জন্য বলে উল্লেখ করেন।
 
১৯৭১ সালে এক সাক্ষাৎকারে কেমাল বলেন, নিপীড়নকারী-শোষক শ্রেণী এবং যারা মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও আনন্দকে দমন করে আমি তাদের বিরুদ্ধে। 
 
নিজেকে তিনি কুর্দি বংশোদ্ভূত তুর্কি লেখক বলে পরিচয় দিতেন। তিনি তার কাজের উদ্দেশ্য হিসেবে দাবি করেছেন মানুষের রহস্যের খোঁজ করা।
 
১৯৯০ এর দশকে তার জীবনে কঠোর সময় পার করেছেন। সেসময় দেশটির সেনাবাহিনী ও কুর্দিদের মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের পর শাসকশ্রেণীর রোষানলে পড়েন তিনি। 
 
তুরস্কের কুর্দিরা স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে দীর্ঘসময় ধরে আন্দোলন করে আসছে। 
 
তুরস্কে জাতিগত বিদ্বেষ বিশেষ করে কুর্দিদের ওপর দমনপীড়নের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ লেখার পর তাকে ২০ মাসের স্থগিত কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছিল।

কেমাল তার ছেলে রাসিত গোকসেলি এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী আয়শে সেমিহা বাবানের সঙ্গেই জীবনের শেষদিনগুলো কাটিয়েছেন।