ইতালির ফেরির সব যাত্রী উদ্ধার, নিহত ৭

গ্রিসের কোর্ফু দ্বীপের উত্তর পশ্চিমে অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে আগুন ধরে যাওয়া ইতালির ফেরিটির সব যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সাত জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারীরা।

নিউজ ডেস্ক>>বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2014, 08:11 AM
Updated : 29 Dec 2014, 04:53 PM

ইতালির কোস্টগার্ড মূখপাত্র নিকস লাজাদিয়ানস বলেন, আগুন ধরে যাওয়া ফেরির উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন হয়েছে। সোমাবার ছয় জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

“এছাড়া দুর্ঘটনার দিন লাইফবোটে ওঠার চেষ্টা করার সময় ৬২ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধ পানিতে পড়ে মারা যান। তার স্ত্রী টেডরা ডুলিও এসময় আহত হন। এই দম্পতি গ্রিসের নাগরিক,” বলেন নিকস।

ডুলি ইতালির একটি সংবাদ সংস্থার কাছে অভিযোগ করেন, “খুব সম্ভবত আমার স্বামীর মাথায় কেউ আঘাত করলে সে পড়ে যায়। আমি তাকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারিনি।”

রোববার নরম্যান আটলান্টিক নামের ফেরিটি গ্রিসের পাত্রাস থেকে ইতালির আনকোনা যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে। ফেরিতে মোট ৪৭৮ জন আরোহী ছিলেন।

ফেরির নিচ তলায় গাড়ি রাখার ডেকে আগুন লাগলে তা পুরো ফেরিতে ছড়িয়ে পড়ে। আগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি।

ইতালির কৌঁসুলিরা জানান, আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে। কোন অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা তা দেখা হচ্ছে।

আগুনের তাপ বাড়তে থাকলে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, তীব্র শীতে জমে যাওয়ার ভয় সত্ত্বেও জাহাজের ছাদে দাঁড়িয়ে তারা উদ্ধারের অপেক্ষা করতে থাকেন।

ফেরির এক বাবুর্চির স্ত্রী জানিয়েছেন, তার স্বামী তাকে ফোন করে বলেছেন, “আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, আমরা সবাই ইঁদুরের মতো পুড়ে মরতে যাচ্ছি- ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করুন।”
গ্রিসের টেলিভিশন স্টেশন মেগা’কে অপর এক যাত্রী বলেন, “আমরা বাইরে, আমরা ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছি, পুরো জাহাজ ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে, নৌকাটি এখনও পুড়ছে, মেঝেগুলো তাপে টগবগ করছে, ভোর ৫টা থেকে নিচের কেবিনগুলো পুড়ছে, যে সব নৌকা আমাদের উদ্ধার করতে এসেছিল সেগুলো চলে গেছে, আমরা রয়ে গেছি। তারা আমাদের নিয়ে যেতে পারেনি।”
তীব্র বাতাস, প্রবল ঢেউ ও ঘন ধোঁয়ার কারণে উদ্ধারকর্মীদের কাজ করতে প্রচণ্ড অসুবিধা হয়েছে।
দুর্গতদের একজন একজন করে হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেয়া হয়। তাদের প্রথমে আশপাশের জাহাজগুলোতে নেয়া হয়। তবে হাইপোথার্মিয়ায় (ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া) আক্রান্তদের সরাসরি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে তিনটি শিশু একজন গর্ভবতী নারী রয়েছেন।
ঢেউ থেকে ফেরিটিকে রক্ষার জন্য ও উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য আশপাশে থাকা বাণিজ্যিক জাহাজগুলো দুর্ঘটনা কবলিত ফেরিকে ঘিরে রেখেছে।
প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকায় উদ্ধারকর্মীদের প্রশংসা করেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজি।
সোমবার রোমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “উদ্ধারকর্মীদের কারণেই বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।
ফেরি থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই গ্রিসের নাগরিক। অন্যরা ইতালি, তুরস্ক, আলবেনিয়া, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের নাগরিক।