এয়ারএশিয়ার বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার শঙ্কা

এক দিন আগে ১৬২ জন আরোহী নিয়ে মাঝ আকাশে ‘উধাও’ হয়ে যাওয়া এয়ারএশিয়ার উড়োজাহাজটি ইন্দোনেশিয়া উপকূলে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে আশঙ্কা করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2014, 04:23 AM
Updated : 29 Dec 2014, 05:27 AM

সোমবার সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের তল্লাশি অভিযান শুরুর পর ইন্দোনেশিয়ার সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সির প্রধান বাংবাং সোলিস্টিও বলেছেন, “আমাদের হাতে যে কো-অর্ডিনেটস আছে তাতে ধারণা হয়েছে জাভা সাগরের ওপর বিমানটি ছিল। (বিধ্বস্ত হয়ে থাকলে) এখন সেটি সাগরের তলদেশে পৌঁছে যাওয়ার কথা।  

এদিকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও উড়োজাহাজটির কোনো খোঁজ না মেলায় আরোহীদের স্বজনদের মধ্যে নেমে এসেছে হতাশা। 

ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়ার জুয়ানডা বিমানবন্দর থেকে যাত্রী নিয়ে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৭টা ২৪ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ২৪) এয়ারএশিয়ার ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১ এর সঙ্গে জাকার্তা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

জাভা সাগরের ওপরে থাকা উড়োজাহাজটির পাইলট তার মিনিট পাঁচেক আগেই মেঘের কথা বলে ৩২ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ৩৮ হাজার ফুট উচ্চতায় ওড়ার অনুমতি চান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে তার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যদিও কন্ট্রোল রুম তার কোনো বিপদ সংকেত পায়নি।   

এয়ারএশিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এয়ারবাস ৩২০-২০০ মডেলের ওই উড়োজাহাজে ১৫৫ জন যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে ১৬২ জন আরোহী ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে ১৪৯ জন ইন্দোনেশিয়ার ও তিনজন দক্ষিণ কোরিয়ার। বাকি তিনজন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্যের নাগরিক।

উড়োজাহাজটি উধাও হয়ে যাওয়ার পরপরই সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া অনুসন্ধান শুরু করে। অন্ধকার নেমে আসায় রোববার রাতে অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলেও সোমবার সকাল থেকে আবার শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি।

সেনা বিমান, হেলিকপ্টার আর উদ্ধারকারী নৌযান নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে অভিযানে যোগ দিয়েছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া। অনুসন্ধানে সহযোগিতার প্রস্তাব রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের পক্ষ থেকেও।

ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনীর মুখপাত্র হাদি থাজানতো জানিয়েছেন, সুরাবায়া ও সিঙ্গাপুরের মাঝামাঝি জাভা সাগরের বাংকা দ্বীপের আশপাশে দুটি সি-১৩০ হারকিউলিস বিমানের সহায়তায় অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

নিখোঁজ উড়োজাহাজের সন্ধানে নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ পাঠিয়েছে সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরের সি-১৩০ উড়োজাহাজ অভিযানে অংশ নিচ্ছে রোববার থেকেই। 

মালয়েশিয়াও একই ধরনের অনুসন্ধান উড়োজাহাজ এবং তিনটি নৌযান পাঠিয়েছে। অনুসন্ধান অভিযানে যোগ দিতে এরইমধ্যে ইন্দোনেশিয়া উড়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার একটি উড়োজাহাজ।

এদিকে নিখোঁজ উড়োজাহাজটির আরোহীদের তথ্য জানতে সুরাবায়ার হুয়ানদা বিমানবন্দর আর সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা।

চাঙ্গি বিমানবন্দরে হবু বরের ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন লুইস সিদ্ধার্থ। পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটিয়ে এয়ারএশিয়ার ওই ফ্লাইটে ফিরছিলেন তার বন্ধু।

তাকে জীবিত পাওয়ার আশা অনেকটাই ছেড়ে দেওয়া সিদ্ধার্থ বলেন, “আমাদের বিয়ের আগে এটাই সম্ভবত পরিবারের সঙ্গে তার শেষ ছুটি কাটানো ছিল।”

 

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো নিখোঁজ উড়োজাহাজের আরোহীদের জন্য দেশবাসীকে প্রার্থণা করার আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে পোপ ফ্রান্সিসের নেতৃত্বেও প্রার্থনা হয়েছে।

সুরাবায়ার জুয়ানডা বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটে রওনা হয় ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে সেটি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।

মালয়েশিয়াভিত্তিক বিমান কোম্পানি এয়ারএশিয়ার ৪৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক ইন্দোনেশিয়া। ১৩ বছর আগে যাত্রা শুরু করা এয়ারএশিয়ার কোনো উড়োজাহাজের এর আগে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়ার নজির নেই।

এর আগে চলতি বছর মালয়েশিয়াভিত্তিক দুটি উড়োজাহাজের বড় ধরনের দুর্ঘটনা সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়ে যায়।  

গত ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটটি ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে নিখোঁজ হয়, যার খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।

এছাড়া ১৭ জুলাই এই প্রতিষ্ঠানের এমএইচ১৭ ফ্লাইটটি ইউক্রেনে ক্ষেপনাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হলে ২৯৮ জন আরোহীর সবাই নিহত হন।