এতে বলা হয়েছে, ‘থ্রি পারসন ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)’ নামের এ পদ্ধতিতে তিন জনের প্রয়োজন হলেও শেষ পর্যন্ত বাবা-মা হিসাবে সরকারের স্বীকৃতি পাবে দুজন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী মে মাসে সাধারণ নির্বাচনের আগেই খসড়াটি ভোটাভুটির জন্য পার্লামেন্টে তোলা হতে পারে। আর আইন প্রণেতাদের সায় পেলে যুক্তরাজ্যই হবে এ পদ্ধতিকে বৈধতা দেওয়া প্রথম দেশ।
সব ঠিক থাকলে এই ‘আইভিএফ’ পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে আগামী বছরই।
ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ প্যানেল এর আগে এ পদ্ধতিকে সবুজ সংকেত দিয়ে বলেছিল, এ প্রক্রিয়ায় শিশুর দুরারোগ্য ব্যধি নিয়ে জন্মগ্রহণ ঠেকানো সম্ভব হবে। জিনগত ত্রুটির কারণে যেসব দম্পতি সন্তান নিতে ভয় পাচ্ছেন, তাদের ভীতিও অনেকটা দূর হবে।
তবে চিকিৎসকদের একটি পক্ষ এর বিরোধিতায় বলে আসছেন, এ পদ্ধতি শেষ পর্যন্ত বাবা-মায়ের চাহিদা মাফিক শিশু ‘তৈরির' দিকে নিয়ে যাবে।
ভ্রুণের মাইটোকন্ড্রিয়ায় ত্রুটি থাকলে সন্তান হৃৎপিণ্ড, যকৃত, চোখ, পেশিতন্ত্র বা মস্তিষ্কে বড় ধরনের জটিলতা বা অসুস্থতা নিয়ে জন্ম নিতে পারে। সেই রুগ্ন মাইটোকন্ড্রিয়া সরিয়ে ফেলে অন্য একটি সুস্থ ভ্রুণের মাইটোকন্ড্রিয়া প্রতিস্থাপন করা হবে এ পদ্ধতিতে৷
এই মাইটোকন্ড্রিয়াকে বলা হয় কোষের ‘পাওয়ার স্টেশন’, যা সব জীবিত কোষেই থাকে। আর শিশুর দেহে রুগ্ন মাইটোকন্ড্রিয়া আসে মায়ের ডিম্বাণুর মাধ্যমে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বে প্রতি ৬ হাজার শিশুর মধ্যে একটি এ ধরনের জটিলতা বা ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে৷ এসব শিশুর কোষ দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি তৈরি করতে পারে না বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার মৃত্যু হয়।
এ কারণেই ‘থ্রি পারসন আইভিএফ’ পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম দিতে গেলে একজন দাতা নারীর প্রয়োজন হবে, যার কাছ থেকে নেওয়া হবে সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়াসহ ডিম্বাণু।
তবে এ মাইটোকন্ড্রিয়ার মাধ্যমে দাতার ডিএনএর একটি অংশ শিশুও পাবে। ফলে এ ধরনের শিশুদের দেহে তিনজনের জেনেটিক তথ্যই থাকতে পারে।
এছাড়া এ পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া শিশুর সঙ্গে ডিম্বাণুদাতা নারীর কোনো সম্পর্ক স্বীকৃত হবে না। ওই নারী সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়ার অধিকারও শিশুটির থাকবে না।
যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী জেন এলিসন বলেন, সরকার মনে করছে এ নীতিমালা ভোটাভুটিতে দেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
যে বিজ্ঞানীরা এ গবেষণা এগিয়ে নিচ্ছেন, তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডগ টার্নবুল।
সরকারের নীতিমালা পাসের উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “আমরা আগামী বছর লাইসেন্সের আবেদন করতে চাই। আশা করছি ২০১৫ সালেই আমরা কাজ শুরু করতে পারব।”
অবশ্য চিকিৎসকদের আরেকটি পক্ষ থেকে এ পদ্ধতি এবং সরকারের নীতিমালা করার উদ্যোগের বিরোধিতা এসেছে। তাদের মতে, তিনজনের ডিএনএ থেকে মানবশিশুর জন্ম দেওয়া হবে ‘অনৈতিক’ এবং তা শেষ পর্যন্ত ভুল পথেই যাবে।
‘হিউম্যান জেনেটিক্স অ্যালার্ট’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী ডেভিড কিং বলেন, “গবেষকরা নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করছেন, যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতের তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছেমতো বৈশিষ্টের শিশুর জন্ম দেওয়ার পথ খুলে যাবে।”
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক বছর ধরেই এ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে আইনি বিধিনিষেধের কারণে কখনোই জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে বৈধভাবে কোনো মানব শিশুর জন্ম দেওয়া হয়নি৷
যুক্তরাজ্য সরকার গত বছর এ পদ্ধতিকে আইনি বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ নিলে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করে নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু হয়৷ এরপর বিশেষজ্ঞ প্যানেল এ পদ্ধতি এগিয়ে নিতে সম্মতি দেয়।
প্রথম পদ্ধতিতে দুই নারীর দুটি ডিম্বাণু হবু বাবার শুক্রাণুর মাধ্যমে নিষিক্ত করা হবে৷ এরপর দুটি ভ্রুণ থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে নিউক্লিয়াস, যা কোষের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে পরিচিত।
এরপর দাতার ডিম্বাণু থেকে তৈরি ভ্রুণের নিউক্লিয়াসের জায়গায় বসানো হবে হবু মায়ের ডিম্বাণু থেকে তৈরি ভ্রুণের নিউক্লিয়াস৷ এর ফলে মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়ার ত্রুটি আর এ ভ্রুণে থাকবে না৷ এই ভ্রুণটিই মায়ের জরায়ুতে স্থাপন করা হবে৷
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপনের কাজটি করা হবে ডিম্বাণু নিষিক্ত করার আগেই৷ অর্থাৎ, দুই নারীর দুটি ডিম্বাণু থেকে নিউক্লিয়াস সরিয়ে নেওয়া হবে৷ এরপর দাতার ডিম্বাণু থেকে নেওয়া নিউক্লিয়াসটি নষ্ট করে ফেলে সেখানে বসানো হবে হবু মায়ের ডিম্বাণু থেকে নেওয়া নিউক্লিয়াস৷
এতে মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়ার ত্রুটি আর ওই ডিম্বাণুতে থাকবে না৷ এরপর হবু বাবার শুক্রাণুর মাধ্যমে নিষিক্ত করে হবু মায়ের জরায়ুতে সেটি স্থাপন করা হবে৷