কোষ প্রতিস্থাপনে হাঁটছেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী

নাসারন্ধ্র থেকে কোষ নিয়ে মেরুদণ্ডে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দেয়া এক চিকিৎসার পর পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক রোগী আবার হাঁটতে পারছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2014, 09:47 AM
Updated : 21 Oct 2014, 09:47 AM

লন্ডনের বিজ্ঞানীদের সহযোগীতায় পোল্যান্ডের শল্যচিকিৎসকরা বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই চিকিৎসাটি করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

২০১০ সালে পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের ঘটনার পর বুকের নিচ থেকে শরীরের বাকী অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল ডারেক ফিদিকা’র। এতে চিরকালের মতো হাঁটার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু এই চিকিৎসার পর একটি ফ্রেম ব্যবহার করে তিনি আবার হাঁটতে পারছেন।

সম্প্রতি সেল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সাময়িকীতে এই চিকিৎসা গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।

আবার হাঁটতে পারার অনুভূতি জানিয়ে ৪০ বছর বয়সী ফিদিকা বলেন, “এটি একটি অবিশ্বাস্য অনুভূতি। আপনি যদি আপনার শরীরের অর্ধেক অংশের অস্তিত্ব অনুভব করতে না পারেন, আপনি অসহায় হয়ে পড়বেন।”

“কিন্তু অনুভূতি আবার ফিরে আসতে শুরু করলে আপনার মনে হবে আবার জন্মগ্রহণ করেছেন আপনি।”

যুক্তরাজ্যের গবেষক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের নিউরোলোজি ইনস্টিটিউটের নিউরাল রিজেনারেশন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিওফ রাইজম্যান।

তিনি বলেন, “যে সাফল্য এসেছে তা চাঁদে মানুষের হাঁটার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

এই চিকিৎসায় নাকের ঘ্রাণেন্দ্রিয় ওলফ্যাক্টরি এন্সহিটিং সেলস (ওইসি) ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথম অস্ত্রোপচারে শল্যচিকিৎসকরা রোগীর একটি ওলফ্যাক্টরি বাল্প কেটে এর ওইসি কোষগুলো কালচার করেছেন।

এর দুই সপ্তাহ পর আরেকটি অস্ত্রোপচারে কালচারের মাধ্যমে উৎপন্ন ওইসি কোষগুলো রোগীর মেরুদণ্ডে প্রতিস্থাপন করেছেন। এ ধরনের মোট পাঁচ লাখ কোষ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

রোগীর মেরুদণ্ডের আঘাতের স্থানের ওপরে ও নিচে ওইসি’র প্রায় ১০০টি মাইক্রো ইঞ্জেকশন দিতে হয়েছে।

এছাড়া রোগীর হাঁটু থেকে চারটি পাতলা স্নায়ুটিস্যু নিয়ে মেরুদণ্ডের আট মিলিমিটার ফাঁকা জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে।

এই চিকিৎসার আগে প্রায় দুই বছর পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন ফিদিকা। ব্যাপক থেরাপি দেয়ার পরও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।

প্রতিস্থাপনের পর সপ্তাহে পাঁচদিন পাঁচঘণ্টা করে ব্যায়ামের সূচি দেয়া হয়েছিল ফিদিকাকে। তিন মাস পর ফিদিকা অনুভব করলেন তার বাঁ পায়ের পেশী বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অনুভূতি ফিরে আসছে।

এতে চিকিৎসার সফলতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হয়ে উঠলেন ফিদিকা, যিনি এখন শরীরের পক্ষাঘাতগ্রস্ত অংশের অনুভূতি ফিরে পেয়ে আবার হাঁটতে পারছেন।