বান্ধবী হত্যা: পিস্টোরিয়াসের ৫ বছর জেল

বান্ধবী রিভা স্টিনক্যাম্পকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও ‘নরহত্যার’ দায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার দৌড়বিদ অস্কার পিস্টোরিয়াসকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2014, 08:53 AM
Updated : 21 Oct 2014, 09:58 AM

নিহত রিভা স্টিনক্যাম্প ও অস্কার পিস্টোরিয়াস

এছাড়া অস্ত্র আইনে তাকে আরো তিন বছরের স্থগিত কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বিচারক।

প্রিটোরিয়ায় বিচারক থোকোজিলে মাসিপা মঙ্গলবার এই সাজা ঘোষণা করেন। এর আগে সেপ্টেম্বরেই পিস্টোরিয়াসকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে বিচারক তাকে ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ থেকে রেহাই দেন।

২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মডেল বান্ধবী স্টিনক্যাম্পকে গুলি করে হত্যা করেন পিস্টোরিয়াস।

‘ব্লেড রানার’ নামে পরিচিত ২৭ বছর বয়সী পিস্টোরিয়াসের দাবি, বাড়িতে কেউ ঢুকেছে ভেবে আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালিয়েছিলেন তিনি। তার গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাথরুমে থাকা স্টিনক্যাম্প।

পিস্টোরিয়াসের ছোড়া গুলি স্টিনক্যাম্পের মাথা, বাহু আর নিতম্বে লাগে। পরে বাথরুম থেকে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।

বিশ্বের ‘পা বিহীন দ্রুততম মানব’ হিসেবে পরিচিত পিস্টোরিয়াস এর আগে ২০০৪ সালে এথেন্স প্যারালিম্পিকে ২০০ মিটারে সোনা ও ১০০ মিটারে ব্রোঞ্জ পান।

চার বছর পর বেইজিং প্যারালিম্পিকে ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটারে এবং ২০১২ লন্ডন প্যারালিম্পিকেও ২০০ ও ৪x১০০ মিটার রিলেতে সোনা জেতেন তিনি।

প্রথম অঙ্গহীন অ্যাথলেট হিসেবে লন্ডনে মূল অলিম্পিকেও তিনি অংশ নেন।

বছরজুড়েই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আলোচিত ছিল। ঘটনার ১৮ মাস পর এই মামলার রায় এলো।

আদালত পিস্টোরিয়াসকে ইচ্ছাকৃত হত্যার দায় থেকে নিষ্কৃতি দেয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা তাকে চতুর অভিনেতা বলে চিত্রায়িত করেছিলেন। পিস্টোরিয়াসকে দামী গাড়ি, সুন্দরী নারী ও অস্ত্রের প্রতি আসক্ত এবং মিথ্যাবাদী বলেও অভিহিত করেছিলেন।

তাদের দাবি, পিস্টোরিয়াস অপরাধ করেছেন অথচ তার দায়িত্ব নিতে অক্ষম। তারা এও অভিযোগ করেন, ইচ্ছাকৃতভাবেই বান্ধবী স্টিনক্যাম্পকে গুলি করেছিলেন তিনি।

‘ব্লেড রানার’ অস্কার পিস্টোরিয়াস

পিস্টোরিয়াসের বান্ধবী রিভা স্টিনক্যাম্প একজন নামী ও দামী মডেল এবং আইনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আলোচিত এই মামলা চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে অস্কার পিস্টোরিয়াসের অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এমন কি তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলেও মনোচিকিৎসকদের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

পিস্টোরিয়াসের আইনজীবী আদালতকে এও জানিয়েছিলেন, বান্ধবী রিভা স্টিনক্যাম্প এর জন্য পিস্টোরিয়াস এখন ভীষণ শোকগ্রস্ত।

পাশাপাশি গুলি চালানোর সময় তিনি মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিলেন না বলেও আদালতকে জানিয়েছিলেন। তিনি আদালতের কাছে বান্ধবীকে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন এবং বাসায় দুষ্কৃতকারী ঢুকেছে ভেবেই তিনি গুলি চালিয়েছিলেন বলেও দাবি তার।

নিহত রিভা স্টিনক্যাম্পের মা জুন স্টিনক্যাম্প

অবশ্য চিকিৎসা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পিস্টোরিয়াসের মানসিক অবস্থা ন্যায়-অন্যায় যাচাই করার উপযোগী ছিল। সুতরাং, ওই হত্যাকাণ্ডটি তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের আওতায় আনা যায়।

পিস্টোরিয়াস নিজেও বলেছেন, বাসায় কেউ একজন ঢুকেছে ভেবে তিনি পর পর কয়েকটি গুলি ছুঁড়েছেন টয়লেটের দিকে। সেখানেই ছিলেন তার বান্ধবী স্টিনক্যাম্প।

আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য, পিস্টোরিয়াসের দুই পা না থাকার কারণে তিনি অতীতেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন। কোনো আকস্মিক ঘটনা দেখলে অন্য স্বাভাবিক মানুষের তুলনায় তিনি বেশি ক্রিয়াশীল হয়ে উঠতেন।

দুই পা না থাকা সত্ত্বেও ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসেন পিস্টোরিয়াস।

গণমাধ্যমের নজরদারির মধ্যে চলা বিচার প্রক্রিয়ায় চলতি বছরের ৩ মার্চ পিস্টোরিয়াসের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ইচ্ছাকৃত বা পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার যাবজ্জীন কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।