চীনের জাতীয় দিবসে হংকংয়ে বিশাল বিক্ষোভ

চীনের জাতীয় দিবসেও হংকংয়ের রাস্তায় গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2014, 02:54 PM
Updated : 1 Oct 2014, 02:55 PM

২০১৭ সালের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সরকারের পছন্দের প্রার্থীদের পরিবর্তে উন্মুক্ত প্রার্থীতার মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের সুযোগ চায় তারা। হংকংয়ের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ সমাবেশ বলে মনে করা হচ্ছে।

গণতন্ত্রকামীদের বিক্ষোভের কারণে ওই অঞ্চলের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান উদযাপনে কাটছাঁট করেছে চীনপন্থি কর্তৃপক্ষ।

বুধবার ১ অক্টোবর চীনের ৬৫তম জাতীয় দিবস। ১৯৪৯ সালে এই দিনটিতেই কমিউনিস্ট চীনের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ দিন হংকংসহ পুরো চীনে সরকারি ছুটি থাকে।

সকালে জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী সি লেয়ুঙ। সেখানে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীরা তাকে নাজেহালের চেষ্টা করেন বলে বিবিসি’র প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

জাতীয় পতাকা উত্তলন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সি লেয়ুঙ বিক্ষোভকারীদেরকে বেইজিংয়ের নির্বাচনী সংস্কার পক্রিয়ায় সমর্থন দেয়ার আহ্বান জানান।

ওদিকে, বিক্ষোভ চললেও হংকংয়ের ‘স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের’ পক্ষে অনড় থাকার ঘোষণা দিয়েছে চীন। এর ফলে আগামী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নতুন কোনো সংস্কার পরিকল্পনা মূলত নাকচ করারই ইঙ্গিত দিয়েছে চীন।

বুধবার জাতীয় দিবসে প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল কজওয়ে বে এবং মঙ ককে সমবেত হয় বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া দক্ষিণ মঙ ককের বিপণী অঞ্চল সিম সা সু এলাকায়ও বড় ধরনের জনসমাগম হয়।

বিক্ষোভকারীরা হংকংয়ের প্রধান নির্বাহীর পদত্যাগ দাবি করলেও তিনি তা নাকচ করেন। প্রতিবাদী এক ছাত্র নেতা বলেছেন, সি লেয়ুঙ বৃহস্পতিবারের মধ্যে পদত্যাগ না করলে বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনগুলো দখল করবে।

পারিবারিক আমেজ:

ঘটনাস্থল থেকে বিবিস’র প্রতিবেদক জুলিনা লিউ জানান, বুধবার অনেক বিক্ষোভকারীকে পরিবারের ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দিতে দেখা গেছে।

রোববারের চেয়ে পরিস্থিতিও আরো স্বাভাবিক হয়েছে। ওইদিন বিক্ষোভকারীদের দমাতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও পেপার স্প্রে ছোড়ে।

বুধবার জাতীয় দিবস উপলক্ষে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠিত হয়, তবে বিকালে আতশবাজী অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও তা পরে বাতিল করা হয়।

ছাড় দেবে না চীন:

হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী আন্দোলন অনেক ধাপ পেরিয়ে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলেও ওই অঞ্চলের ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ নতুন কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে বেইজিংয়ের শাসকরা ইঙ্গিত দিযেছেন।

মঙ্গলবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং হংকং বেইজিংয়ের প্রভাবে থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন।

বেইজিংয়ে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের এক বৈঠকে তিনি বলেছেন, “হংকং ও ম্যাকাওয়ের স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিক সমৃদ্ধি রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর।”

১৯৯৮ সালে সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকং চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারপর থেকে চীনের অধীনে ‘এক দেশে দুই পদ্ধতি’ নীতিতে হংকংয়ের প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছে।

কিন্তু ২০১৭ সালের পরবর্তী নির্বাচনে যে কোনো নাগরিককে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেয়ার দাবি করছে হংকং এর গণতন্ত্রপন্থীরা।কিন্তু বেইজিং সরকার চায় তাদের অনুমোদিত প্রার্থীদের মধ্য থেকেই নেতা নির্বাচন করুক হংকংবাসীরা।

এর প্রতিবাদে হংকংয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ শুক্রবার থেকে গণবিক্ষোভের রূপ নেয়। গত পাঁচদিন ধরে হংকং শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা।

বর্তমান নেতা লেয়ুঙ বিক্ষোভকারীদের রাস্তা ছেড়ে বাড়িতে ফেরার অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি, রাজপথ দখলে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা।